লাইফস্টাইল

১৫ হাজার নারীকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছেন মিম

নারীর কল্যাণে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কাজ করছেন টিংকার জান্নাত মিম। তিনি দেশের অন্যতম শীর্ষ ফিমেল কমিউনিটি ‘পপ অব কালার’ এর প্রতিষ্ঠাতা। এই ৮ বছরে ১৫ হাজারের অধিক নারীকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জাগো নিউজ এর মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালিদ সাইফুল্লাহ্।

Advertisement

* জাগোনিউজ: আপনার প্রতিষ্ঠান পপ অব কালার সম্পর্কে বলুন।টিংকার জান্নাত মিম: পপ অব কালার বাংলাদেশের অন্যতম একটি রেজিস্টার্ড ফিমেল কমিউনিটি। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই অর্গানাইজেশনের মূল উদ্দেশ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে মেয়েদেরকে স্বাবলম্বী করতে বিনামূল্যে সাহায্য করা।

এই লক্ষ্যে বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ইভেন্টসহ ও বিভিন্ন ধরনের চ্যারিটি নিয়মিত করছে পপ অব কালার। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য মোটিভেশন ও গাইডলাইন দেওয়ার পাশাপাশি প্রোডাক্টের সোর্স ও প্রোডাক্টকে কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রমোশন, মার্কেটিংসহ সবগুলো কাজ বিনামূল্যে করে থাকে পপ অব কালার। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম মিলিয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার নারীর একটি পরিবার পপ অব কালার।

* জাগোনিউজ: আপনার প্রতিষ্ঠান পপ অব কালার নারীদের নিয়ে কি কি ধরনের কাজ করে?টিংকার জান্নাত মিম: পপ অব কালার মূলত নারীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, সাইবার ক্রাইম ও ভায়োলেন্সের শিকার হলে তার প্রতিকার, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে।

Advertisement

মেয়েদের স্বাবলম্বী হতে বা নিজের পায়ে দাঁড়াতে মোটিভেট করি। স্বাবলম্বী হতে মেয়েদের যেসব মানসিক ও ব্যবসায়িক সাপোর্ট লাগে সেগুলো বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। পাশাপাশি মেয়েরা কোনো হ্যারাসমেন্টের বা নির্যাতনের শিকার হলে আমরা চেষ্টা করি তাদেরকে সঠিকভাবে দ্রুততম সময়ে আইনি সাহায্য পেতে।

গত ৮ বছরে আমরা বিভিন্নভাবে ৩০ হাজারের বেশি মেয়েকে সেবা দিয়েছি। ১৫ হাজারের বেশি মেয়েকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করেছে পপ অব কালার। প্রায় ২০ হাজার মেয়েকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছি। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ এবং দেশের বাইরে মেয়েদের সুন্দর ও সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করবে পপ অব কালার।

* জাগোনিউজ: নারীদের নিয়ে কাজ করার পেছনে আপনার কোন বিষয়টি কাজ করেছে?টিংকার জান্নাত মিম: আমার সব সময় মনে হয়েছে যে, মেয়েরা অনেক পিছিয়ে আছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা কম। তাদের কথা বলার জায়গা নাই। এমনকি নিজের পরিবারেও অনেক সময় তারা কথা বলতে পারে না। এ কারণে আমি অনেক আগে থেকে ভেবেছি, নারীদের নিয়ে আমার কিছু করা দরকার।

নারীদের নিয়ে কাজ করার পেছনে আমার আরেকটি গল্প আছে। আমি একবার ব্যক্তিগত কারণে অনেক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। সে সময় আমার পরিবার আমাকে খুব ভালোভাবে সাপোর্ট করলেও আমি দেখেছি বেশিরভাগ মেয়েদের পরিবার তাদেরকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয় না। তখনই আমি চিন্তা করলাম যে আমি সবসময়ই মেয়েদের সাপোর্ট দিতে চাই।

Advertisement

* জাগোনিউজ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী দিবসের গুরুত্ব কতটুকু?টিংকার জান্নাত মিম: বাংলাদেশের নারী দিবসের গুরুত্ব খুবই বেশি। কারণ নারীদের অধিকার নিয়ে সারাবছর তেমন কথাবার্তা বলা হয় না। তবে যখনই নারী দিবস আসে তার এক মাস আগে থেকে বা পুরো মাস জুড়ে আমরা বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি দেখি।

নারীদের এগিয়ে নেওয়ার বা নারীদের সচেতনতায় বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখি। নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ব্র্যান্ডগুলো তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ও অফলাইনে বিভিন্ন আয়োজন করে। অন্তত এই একটা দিবসের সুবাদে হলেও যে একটা সচেতনতা তৈরি হচ্ছে এটার জন্য তো নারী দিবস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

* জাগোনিউজ: পেশাগত সেক্টরে বাংলাদেশের নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন। এর কারণ কি? এর প্রতিকারের উপায় কি?টিংকার জান্নাত মিম: পেশাগত সেক্টরে ধারীদের পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে পারিবারিক বাধা বিপত্তি। এই পারিবারিক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেও যখন কোনো নারী এগিয়ে যেতে থাকে তখন সে তার আশপাশ থেকে মানসিক সাপোর্ট বা মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা পায় না।

এ কারণে সব সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা পিছিয়ে থাকে। আরেকটি বিষয় হলো কর্মস্থলে তাদেরকে সমান চোখে দেখা হয় না। এর থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমে পারিবারিকভাবে মেয়েদেরকে সাপোর্ট দিতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে। পাশাপাশি কর্মস্থলেও তাদেরকে সমানভাবে দেখতে হবে ও সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

* জাগোনিউজ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনি ভবিষ্যতে নারীদের কি অবস্থানে দেখতে চান? (নারীদের নিয়ে আপনার স্বপ্ন ও প্রত্যাশা)টিংকার জান্নাত মিম: আমার দুটি স্বপ্ন। এক, আমি চাই প্রত্যেকটি মেয়ে নিজে উপার্জন করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক। একজন নারী যখন নিজেই উপার্জন করতে পারবে তখন তার অবস্থান ও কথা বলার জায়গা তৈরি হবে। যে উপার্জন করতে পারে তার কথার মূল্য অন্যদের থেকে ভিন্ন।

আমি আরেকটি স্বপ্ন দেখি, সেটি হলো নারীদেরকে সবাই উৎসাহ দেবে। সবাই মোটিভেশন দিবে, তাদেরকে সবসময়ই উৎসাহ দেবে। কেউ পেছন থেকে টেনে আনবে না। আমি বাংলাদেশের সব নারীদের ক্ষেত্রেই এটি দেখতে চাই।

* জাগোনিউজ: সর্বোপরি, সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার জন্য এবং নারীদের এগিয়ে নেবার জন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কি কি করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?টিংকার জান্নাত মিম: এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাকে, আপনাকে, সব নারীদেরকে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে, পরিবারিকভাবে, সব ব্র্যান্ডকে, সকল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জাগোনিউজ: নিজেদের উন্নয়নের জন্য নারীদের কি করা উচিত?টিংকার জান্নাত মিম: নারীদেরকে একটা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, নিজে উপার্জন করা ও স্বাবলম্বী হওয়ার। আর সেটা করতে হবে পরিবারকে পাশে নিয়েই।

জেএমএস/এএসএম