মতামত

জনসেবায় লিঙ্গ পরিচয়টি অপরিহার্য কি?

লাবণ্য শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ নারী নন। সম্পূর্ণ পুরুষও নন। মানুষ হওয়ার জন্য যে মানবিক গুণগুলো একজন মানুষের প্রয়োজন তা সম্পূর্ণভাবেই তাঁর ছিল। তাই তিনি একজন খুন হওয়া মানুষকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন। আমি তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার বঞ্চিত মানুষদের কথা বলছি, প্রচলিত শব্দ ভাণ্ডারে যাদের আমরা ‘হিজড়া’ বলি । একুশ বছর বয়সী লাবণ্য ছিলেন উভলিঙ্গের তেমনই একজন মানুষ। তিনি কট্টরপন্থী মুসলিম, হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন কিনা তা আমরা না জানলেও, সমাজ যাদের অপাংক্তেয় পরিত্যজ্য মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে ‘হিজড়া’ বলে গালি দেয়, তিনি তাঁদেরই একজন। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ তেজগাঁও এলাকায় ব্লগার ও মুক্তমনা লেখক ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুনিরা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলো তখন একজন লাবণ্য অসীম সাহসিকতার সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন খুনিকে জাপটে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিলেন। লাবণ্য জানতেন না কে আস্তিক, কে নাস্তিক আর কে ব্লগার। তবে তিনি জানতেন খুন হওয়া লোকটি একজন মানুষ, যা জানতেন না মানুষটিকে খুন করা মানুষটি। তিনি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন তিনি প্রকৃত পক্ষেই একজন মানুষ। অমানব, অমানুষ অথবা প্রতিবন্ধী বলে তাঁদেরকে আর ছোট করে দেখার দিন বোধহয় এখন শেষ হওয়া উচিৎ। সমাজ তাঁকে লৈঙ্গিক ভাগে তৃতীয় স্থানে আসীন করলেও মানবিক বিচারে আমাদের কাছে তিনিই একজন সম্পূর্ণ, যথার্থ প্রথম কাতারের সচেতন মানুষ। শারীরিকভাবে একটি অঙ্গের অভাব তাঁর মানবিকভাবে মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। প্রকৃতি তাকে শারীরিকভাবে বঞ্চিত করলেও বঞ্চিত করতে পারেনি মানবিক বোধ থেকে। একজন পুরুষত্বহীন পুরুষ অথবা একজন বন্ধ্যা নারী যদি এই সমাজে সন্মানের সাথে সমস্ত মৌলিক অধিকার উপভোগ করে জীবন যাপন করে যেতে পারেন, তাহলে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কেন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? শিক্ষা ও ভোটাধিকার এবং সকল নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? বাংলা ভাষায় কিছু প্রচলিত শব্দ আছে যে শব্দগুলোকে আমরা নেতিবাচকভাবে অহরহ ব্যবহার করি। এই শব্দগুলো যুগ যুগ ধরে নেতিবাচক ভাবে ব্যবহৃত হতে হতে একসময় ‘গালিতে’ রূপান্তরিত হয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গেঁথে গেছে। এ রকম একটি শব্দ ‘নিগ্রো’ যা উচ্চারিত হলে একই সাথে দাস এবং কালোবর্ণ দুটোই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বর্ণ বৈষম্য এবং দাসপ্রথায় নিপীড়িত নির্যাতিত এবং বঞ্চিত হতে হতে ‘নিগ্রো’ শব্দটি একসময় আফ্রিকানদের কাছে আপত্তিজনক শব্দ হিসেবে পরিগণিত হতে থাকলো। পরবর্তীতে ‘নিগ্রো’ শব্দটিকে তারা ‘গালি’ হিসেবেই ধরে নিয়েছিলো। তাই নিগ্রো শব্দটি বর্তমান সময় পর্যন্ত তারা মেনে নিতে পারেনি। এই শব্দটি তাদের সামনে উচ্চারিত হলে এখনো তারা ক্রোধান্বিত এবং নির্মম হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় হিজড়া শব্দটিও অনুরুপ একটি শব্দ যা একইসাথে নেতিবাচক, তুচ্ছার্থক ও অসম্মানজনক। যদিও শব্দের নিজের এখানে কোন দায় নেই। নেতিবাচক শব্দ অপর পক্ষের মানুষদের চরিত্রে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে ছুঁড়ে দেয়া হয়। এর সাথে থাকে অপরাধ, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, হীন, নীচ ঘৃণা আর অবহেলা। সংখ্যালঘু তৃতীয় লিঙ্গের নিরপরাধ নিষ্পাপ মানুষ গুলোকে ‘হিজড়া’ নামটি ঘৃণার জালে ছুঁড়ে দিয়ে মানুষ যেন হয়ে ওঠে এক একজন বীরপুরুষ। একজন অন্ধ মানুষ চোখে দেখতে পায় না, বা যার পা নেই সে পঙ্গু। হিজড়া শব্দটি অন্ধ বা পঙ্গুর মতো প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। ব্যবহৃত হয়েছে নিকৃষ্ট অর্থে। অন্ধ বা পঙ্গু শব্দগুলো মানুষের মনে কখনো কোনো হীন অবস্থা অথবা ঘৃণা ইঙ্গিত করে না যেমনটি করে হিজড়া, মালু , নমশূদ্র শব্দগুলোতে। এইশব্দগুলো একাধারে হীনতা, নীচতা, নিচুজাত, নিচুশ্রেণি, দরিদ্রতা এবং সেইসাথে অনৈতিকতা এবং অপরাধ প্রবণতা ইঙ্গিত করে। কখনই নিষ্পাপ বা  নিরপরাধ অবস্থা ইঙ্গিত করে না। যদিও হিজড়ার জন্মের কারণ কোনো অপরাধের বা কৃতকর্মের ফল নয়। এরা আমাদেরই পরিবারের সদস্য। যে কোনো প্রাণী জন্মের জন্য সে নিজে দায়ী নয়। আমরাই তাঁদের ঠেলে দিয়েছি অনিশ্চিত জীবনের অন্ধকার গলিতে। এই অপরাধ আমাদের সমাজের। আমাদের সংস্কার, প্রথা আর হীন অনগ্রসর মন-মানসিকতার। পারসিক ভাষা বিশেষজ্ঞ মুজাফফর আলম এর মতে ‘হিজ’ শব্দটি মূলত সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভুত যা প্রাচীন পল্লবী ভাষা থেকে এসেছে অষ্টম শতাব্দীরও আগে। আসলে শব্দটি ‘হিজ’ ছিলো না, ছিল ‘হিচ’ যার অর্থ কোনো আশ্রয়হীন, ঠাঁইহীন বা নিজস্ব পরিচয়হীন ব্যক্তি। আর ‘হিচগাহ’ মানে আবাসহীন। এখানে হিজড়া শব্দটির অর্থ প্রথম দিকে যাই থাকুক না কেন, মানুষের অবহেলা নিপীড়ন বঞ্চনা আর ঘৃণায় তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে একটি ‘গালি’ রুপে। এই গালির বলয় এখন ভেঙে ফেলা উচিত। এ বলয়  ভাঙতে সরকারের নীতিগত পরিবর্তনের সাথে প্রয়োজন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন। প্রয়োজন ব্রিটিশ শাসনের শেকড় উপরে ফেলা। ব্রিটিশ আমলে হিজড়াদের হেনস্তা করার জন্য বিভিন্ন বিধি নিষেধ জারি করা হতো। তাঁদেরকে একঘরে করে রাখার জন্য এবং ভৃত্য হিসেবে ব্যবহার করার জন্য কেড়ে নেয়া হতো তাঁদের ধন সম্পদ, জমি জিরেত। হিজড়েদের উপর নজরদারির জন্যে দক্ষিণ ভারতে তৈরি হয়েছিলো বিশেষ হিজড়ে বিভাগ, যার কাজ ছিলো হিজড়াদের গোপনীয় ভাবে নজরদারি করা এবং নানা অজুহাতে তাঁদের শাস্তির বিধান করা। তৈরি হয়েছিলো একটি পুলিশি পদ ‘ইনস্পেক্টর অফ ইউনাক’ । ব্রিটিশ আমালের গোয়েন্দা দপ্তরের অনুচরেরা যত্রতত্র হিজড়া মহলে ঘুরে ঘুরে অত্যাচার করতো নিরীহ এই মানুষগুলোকে। প্রখ্যাত ফরাসী ভূপর্যটক ফ্রাংকোয়েস বর্ণীয়ের তাঁর গবেষণা মূলক গ্রন্থ ‘ট্রাভেলস ইন মোঘল এম্পায়ার’ এ জানিয়েছেন যে, মুঘল আমলের শাসকদের কাছে হিজড়ারা ছিলো অতি বিশ্বস্ত ভৃত্য। তাঁদের উভমুখি সত্বার কারণে খুব অবাধে এবং নির্বিঘ্নে ঢুঁকে যেতে পারতো সম্রাটদের একেবারে অন্দর মহলে। সম্রাটরাও  তাঁদের এই বিশ্বস্ততায় মুগ্ধ হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন গোপনীয় কাজে তাঁদেরকে ব্যবহার করতো। অনেক হিজড়াদের নারী ও শিশুদের দেখভাল করার জন্যেও ব্যবহার করা হতো। সে আমলে তাঁরা এতোটাই বিশ্বস্ততা অর্জন করেছিলো যে সন্তান জন্মদানের সময়েও তাঁদেরকে প্রসূতির কাছে রাখা হতো। রুপান্তরধর্মী মানব, পুংরমণী, যৌন প্রতিবন্ধী, যৌনকবন্ধ, সন্ধিমানব, অমানব, ট্রান্সজেন্ডার, ইউনাখ- এই সবই উভলিঙ্গের মানুষদের অপর নাম। আসলে ব্যক্তিগতভাবে আমি এই শব্দগুলোর একটিকেও তাদের জন্য যথার্থ সন্মানিত শব্দ বলে মনে করছি না। কারণ একজন মানুষের যৌন প্রতিবন্ধকতাকে কেন নাগরিক হিসেবে পরিচয়ের প্রধান পরিচায়ক হবে? কর্ম বা গুণহীন জন্মই বা কেন মানুষের প্রধান পরিচয় হবে? লাবণ্য নামের যে তৃতীয় মানব বীরত্ব দেখিয়ে একজন খুনিকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করলো, তাঁর একটি বিশেষ প্রত্যঙ্গ থাকা বা না থাকার ব্যাপারটি মানুষের নাগরিক হিসেবে পরিচয়ের কি এমন প্রয়োজন? আমরা কি বলতে পারি না যে লাবণ্য নির্দ্বিধায় এবং সন্দেহাতীতভাবে একজন নারী বা একজন পুরুষের প্রত্যঙ্গ প্রাপ্ত মানুষের চাইতে অনেক বেশি উন্নত, নিঃস্বার্থ মানবিক মানুষ? অন্তত একজন ধর্ষক এবং খুনির চেয়ে এরা অনেক বেশি মানবিক গুণের অধিকারী । তাই যৌনাঙ্গবঞ্চিত একজন লাবণ্য যৌনাঙ্গ প্রাপ্ত একজন ধর্ষকের চাইতে অনেক উন্নত, অনেক উদার একজন মানুষ। আধুনিক বিজ্ঞানের এই যুগে যৌনাঙ্গ দিয়ে মানুষের নাগরিকত্তের পরিচয় কি একেবারেই অযৌক্তিক এবং অমানবিক নয়? তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা শারীরিকভাবে পুরুষের মতো হলেও মনে প্রাণে তারা একেবারেই খাঁটি নারী। তাই অন্যান্য সাধারণ নারীর মতোই তাঁরাও প্রেমে পড়ে পুরুষের। পুরুষকেই আকাঙ্খা করে সঙ্গী হিসেবে। তবে কারো কারো এই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ালেও বেশিদিন আর সংসার টিকে থাকে না। কারণ প্রকৃতি তাঁদের বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেছে। সমাজ, সংসার প্রকৃতির এই বঞ্চনা, শরীর মনের দ্বন্দ্ব, আর সর্বোপরি তাঁদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চনা সহ্য করতে না পেরে অনেক হিজড়াই একসময় আত্মহননের পথ বেছে নেয়। সমাজ কাঠামোতে শিক্ষা ও আয়ের পথের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় এরা যৌন ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশাও বেছে নিতে বাধ্য হয়। অনেক মানুষ হিজড়াদের ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এবং জোর জবরদস্তি করে টাকা আদায় করাকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ মনে করেন এবং ঘৃণার চোখে দেখেন। কিন্তু তারা একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখছেন না যে এদেরকে একটি পরিবার থেকে ভিন্ন স্রোতে প্রবাহিত করেছেন কে বা কারা? তাঁদের বিশেষ অঙ্গের প্রতিবন্ধকতাটি কি একেবারেই তার ব্যক্তিগত নয়? ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের অনগ্রসর হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্যে একটি যুগান্তকারী ঐতিহাসিক দিন । এই দিন সরকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পূর্ণ সুযোগ সুবিধাসহ নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, অনগ্রসর, সুবিধা বঞ্চিত এই বিশেষ অঙ্গহীন মানুষদের অধিকার আদায়ে এটি এই সরকারের সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহাসিক সাফল্য। তদুপরি যে কোনো নতুন বিষয়সংস্করণে সীমাবদ্ধতা তো থাকতেই পারে। জীবনের প্রয়োজনেই তা সংশোধিত হয়। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এই প্রথম দু’জন উভলিঙ্গের মানুষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এরা হচ্ছেন সাতক্ষীরার দিথি বেগম এবং যশোরের সুমি খাতুন। নির্বাচনের অনেক আগে থেকে তাদের নাম দু’টি আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা হেরে গেছেন। যদিও তাঁরা হেরে গিয়ে হতাশ নন। সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন দিথি বেগম। তাঁর প্রচার প্রচারণা এবং সমাজ সেবার কথা প্রচারিত হলেও খুব কম ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরে গেছেন । মাত্র ১৪১ ভোটের ব্যবধানে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী  লুতফুন্নেসা বেগমের কাছে হেরে গেছেন। যদিও এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে সমাজের মধ্যে উভলিঙ্গের মানুষ নিয়ে পোক্ত হয়ে থাকা রক্ষণশীলতাকেই মনে করা হচ্ছে। তিনি তাঁর অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে থেমে যাবেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশের মানুষ তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষদের কাছে নেতৃত্বের জায়গাটি ছেড়ে দেয়নি। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এদের মানুষ হিসেবেই গণ্য করতে প্রস্তুত হয়নি, সেখানে একজন গণমানুষের নেতা হওয়া আর যাই হোক খুব সহজ কথা নয়। ভারতের ইতিহাসে মধ্যপ্রদেশে মেয়র নির্বাচনে কমলা জান ছিলেন প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। নির্বাচনে যার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও সাফল্য ছিল তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যদিও সর্ষের ভূত তার এই সাফল্যকে ব্যর্থতায় পরিণত করেছিল। কমলা জান ১৯৯৯ সালে মধ্যপ্রদেশের কাটনি সিটি কর্পোরেশন থেকে বিপুল সংখ্যক ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৩ সালে হাইকোর্ট তাঁর জেন্ডার বিষয়ক ইস্যুটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে একটি রুল জারি করলে মেয়র পদ থেকে তাঁকে সরে যেতে হয়েছে। কারণ তিনি নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি,পরবর্তীতে মধ্য প্রদেশের মেয়র নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ভাগ্যে ইতিহাসে ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০০৯ সালে। মধ্যপ্রদেশের সাগর টাউন এলাকায় ৫৭ বছর বয়সী  তৃতীয় লিঙ্গের মেয়র প্রার্থী কমলা কিন্নারও ভারতের  আরেকটি জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধির নাম। তিনি বিজেপি নেতা সুমন আহিরওয়ারকে ৪৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরেও আবারো সেই সর্ষের ভূত তাঁর বিজয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১১ সালে আদালত রুল জারি করে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেন। ফলশ্রুতিতে ঠিক একইভাবে সরে যেতে হয়েছিলো তৃতীয় লিঙ্গের মেয়র প্রার্থী বিজয়ী কমলা কিন্নারকে ঠিক কমলা জানের মতোই। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ভারতের ইতিহাসে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করেছেন। ২০০৯ সালে তিনি সরকারি কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের সম্মান অর্জন করছেন। এর আগে তৃতীয় লিঙ্গের কোনো মানুষ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আসীন হননি। হিজড়াদের অসম্মান দূর করতে হলে প্রয়োজন তাঁদের স্বার্থ নতুন করে ঢেলে সাজানো। পুরানো ঘানি আর পুরানো গালি ‘হিজড়া’ বাতিল করে একটি প্রতীকী প্রতিবাদী নাম ‘লাবণ্য’ হলে কেমন হয় ?  যেন তাঁদের লিঙ্গ আছে কি নেই সেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে না হয়।লেখক : আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স এর প্রশিক্ষকএইচআর/আরআইপি

Advertisement