প্রবাস

নারীরাও হতে পারেন সফল ফ্রিল্যান্সার

এ পেশায় কোনো জবাবদিহিতা নেই। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে অফিস যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। নেই বসের চোখ রাঙানি। ৯টা-৫টা অফিস করার বাধ্যবাধকতাও নেই। ঘরে বসে কিংবা যে কোনো স্থান থেকেই কাজ করা সম্ভব। বড় অফিসেরও প্রয়োজন নেই। নারী-পুরুষের বৈষম্যও নেই। নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই আপনি হতে পারেন একজন সফল ব্যক্তি। মূল কথা এই পেশায় আপনিই সর্বেসর্বা।

Advertisement

বলছি ফ্রিল্যান্সিং পেশার কথা। ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্মানজনক ও চমকপ্রদ পেশা। এ পেশায় যেকোনো বয়সী নারী-পুরুষ ঘরে বসেই লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। স্বাধীন এ পেশায় জবাবদিহিতার জায়গাটা একেবারেই কম। যারা এমন কাজে যুক্ত তাদের বলা হয় ‘মুক্ত পেশাজীবী’ বা ফ্রিল্যান্সার। এই স্বাধীন পেশা মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। ফলে মুক্ত পেশাজীবীরা অন্যান্য কাজের ফাঁকে কিংবা প্রধান পেশা হিসেবে এই কাজ করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং কোনো একক পেশা নয়। এটি অসংখ্য পেশার সমন্বিত একটি রূপ। ফ্রিল্যান্সিং অনেক প্রকারের হতে পারে, যেমন- ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা, ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঠিক কত ধরনের কাজ করতে পারবেন তার কোনো অন্ত নেই। নারীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং বেশ সম্মান ও সুবিধাজনক। বেশ আশাব্যাঞ্জক প্লাটফর্ম বটে।

একটা সময় নারীরা সংসারের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করতে পারতো না। হাজারও প্রতিবন্ধকতা অসঙ্গতিতো ছিলই আবার কিছু করার কথা ভাবলেও যথেষ্ট পয়সা ছিল না। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো প্লাটফর্মের জন্য নিজের ঘরে বসে আপন কাজগুলো করতে পারছে।

Advertisement

ফলে পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারছে। পরিবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। নারীরা আজ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের কাজ অবলীলায় অর্থের বিনিময়ে করে দিতে পারছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে। শুধু আমাদের দেশেই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও নারীদের চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয় কিন্তু ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে কোনো বৈষম্য নেই। এতসব সুবিধার কারণে বলাবাহুল্য ফ্রিল্যান্সিং নারীদের জন্য একটা মুক্ত পেশা বললে বেশি বলা হবে না।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ‘ডিজিটাল ইকোনমি রিপোর্ট-২০১৯ অনুযায়ী, বৈশ্বিক এ খাতে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন। যাদের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশে ১০ কোটিরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। তাদের মধ্যে আমাদের নারীর সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্সিং খাতে আমাদের অংশগ্রহণ বহুগুণে বেড়েছে।

সরকারি হিসেব মতে, ২০১৩ সালে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ নারী কাজ করতেন। এখন এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি।কিন্তু বাংলাদেশে বসে এ কাজ করা নারীদের জন্য মোটেও সহজ নয়। নারীরা এসব কাজ করতে গেলে প্রয়োজন হয় সামাজিক ও পারিবারিক সহযোগিতা। আমাদের দেশে চলতি শতকে দুঃখজনক হলেও সত্য যে নারীরা সামাজিক সহযোগিতা পায় না।

খুব কম পরিবারই আছে যারা তাদের পরিবারের এ কর্মে দক্ষ নারীদের সহযোগিতা দিয়ে থাকে। শতকরা ৬০ ভাগ পিতা-মাতা নতুন ফ্রিল্যান্সদের এই মুক্ত পেশায় নিরুৎসাহিত করে থাকেন। ছেলেরা পিতা-মাতার অগোচরে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে সামনে আসে অনেক প্রতিবন্ধকতার চাপ।

Advertisement

যেহেতু নারীরা ক্ষমতায়নে দুর্বল হওয়ায় ইচ্ছা করলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো সুবিধাজনক ও জটিলতা মুক্ত পেশাকে নিজেদের ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নিতে পারছে না। যদিও কিছু নারী আছেন সমাজের রক্তচক্ষু ও বেড়াজালের শিকল ভেঙে নিজেদের মতো করে অনলাইন বিজনেস এবং ফ্রিল্যান্সিং করছেন যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, কিছু ধনী স্বামী আছেন যারা নিজেদের অহংবোধের জন্য দক্ষ স্ত্রীদেরও এসব কাজ করতে দেন না। অথচ আমরা জানি যে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের হেড অফিস। অর্থাৎ একজন কর্মদক্ষ মানুষের কাজ না থাকলে সামাজিক রীতিনীতি পরিপন্থী অনেক কাজই করে ফেলতে পারে। কর্মযোগ্য নারীরা অলস বসে থাকতে থাকতে একটা সময় পরকীয়ার মতো ভয়ানক অসামাজিক কাজে জড়িয়ে যায়।

আমাদের দেশে অর্ধেক জনসংখ্যা হলো নারী। তাদের হাতকে বাইরে রেখে কাঙ্খিত উন্নয়ন, সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। যদি সামাজিক বৈষম্য তুলে দেওয়া হয় ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামীনামক অভিভাবকরা যদি উদার হয় তাহলে আমরা নারীরাই দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো বহুদূর। আমরা নারীরা হয়ে উঠবো অর্থনৈতিক মুক্তিতে আত্মনির্ভরশীল ও আত্মবিশ্বাসী নারী।

লেখক: আম্বিয়া অন্তরা, নিউইয়র্ক

এমআরএম/কেএসআর