মেরাজের সময় নবিজীকে জান্নাত দেখানো হয়েছিল। তিনি সেখানে জান্নাতের মাটি, ঘর ও তাঁবু দেখেছিলেন। তিনি তাঁর উম্মতকে জান্নাতের এসব নেয়ামতের বিবরণ জানিয়েছেন। নেয়ামতে সমৃদ্ধ এ জান্নাত পেতে ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর বিধান মেনে চলার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা ও উৎসাহ যুগিয়েছেন। জান্নাতের চমৎকার সব বিবরণ নবিজীর বর্ণনায় ওঠে এসেছে। জান্নাতের মাটি, ঘর ও তাঁবু সম্পর্কে নবিজী কী বলেছেন?
Advertisement
হাদিসের বিখ্যাতগ্রন্থ বুখারি-মুসলিমসহ অনেক হাদিসে নবিজীর মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। একাধিক হাদিসে জান্নাতের মাটি, ঘর এবং তাঁবুর বর্ণনা করেছেন। একটি বড় হাদিসের শেষাংশে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের মাটির বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তাহলো এমন-
জান্নাতের মাটি
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন (মেরাজে) আসমানে নেওয়া হয়; তিনি বলেন, ……. আবার (জিবরিল আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চলতে লাগলেন এবং সিদরাতুলমুনতাহায় (কূলবৃক্ষ পর্যন্ত) আমাকে নিয়ে পৌঁছলেন। আমার অজানা অনেক রং তাকে (সিদরাতুল মুনতাহা/ কূলবৃক্ষকে) আবৃত করে রেখেছে।( যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই)। এরপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। সেখানে দেখলাম মনি-মুক্তার তৈরি গম্বুজ। এর মাটি মিসক বা কস্তুরীর মতো সুগন্ধিময়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
Advertisement
হজরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ইবনে ছাইয়াদ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জান্নাতের মাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘(তা) সাদা আটা ও খাঁটি মিশকে আম্বরের হবে।’ (মুসলিম)
জান্নাতের ঘর
জান্নাতের ঘর সোনা-রূপার ইট ও মৃগনাভি সমৃদ্ধ চুন-সুরকি-সিমেন্টে দেওয়া হবে ইটের গাঁথুনি। কংকরসমূহ হবে মনি-মুক্তার আর মাটি হবে জাফরানের। হাদিসের বর্ণনা তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেছেন, আমি প্রশ্ন করলাম- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কি দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি বললেন, পানি দিয়ে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কি দিয়ে জান্নাত তৈরি করা হয়েছে? তিনি বললেন-
Advertisement
‘সোনা-রুপার ইট দিয়ে। একটি রূপার ইট, তারপর একটি সোনার ইট, এভাবে গাথা হয়েছে। এর গাথুনির উপকরণ (চুন-সুরকি-সিমেন্ট) সুগন্ধি মৃগনাভি এবং কংকরসমূহ মণি-মুক্তার ও মাটি হলো জাফরান। জান্নাতে প্রবেশকারী লোক অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দে থাকবে, কোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন তাকে স্পর্শ করবে না। সে অনন্তকাল এতে অবস্থান করবে আর মৃত্যুবরণ করবে না। না তার পরনের পোশাক পুরাতন হবে আর না তার যৌবনকাল শেষ হবে (অনন্তযৌবনা হবে)।’ (তিরমিজি, দারেমি)
জান্নাতের তাঁবু
জান্নাতের তাঁবুতে অবস্থান করবেন জান্নাতি হুরগণ। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তা এভাবে জানিয়ে দিয়েছেন-
حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ
‘(জান্নাতের) তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ।’ (সুরা আর-রাহমান : আয়াত ৭২)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের তাঁবুসমূহ ফাঁপা মনি-মুক্তার (মোতির) তৈরি হবে। ঊর্ধাকাশের দিকে এর উচ্চতা হবে ষাট মাইল। এর প্রতিটি কোণে মুমিনদের সহধর্মিনী হুর-বালা থাকবে। এদের এক কোণের জন অপর কোণের জনকে দেখতে পাবে না। ঈমানদার লোকেরা তাদের কাছে যাবে। এর মধ্যেও থাকবে দুটি বাগান, যার সব পাত্র এবং ভেতরের সব বস্তু হবে রূপার তৈরি।’ (বুখারি, মুসলিম)
এসবই হলো জান্নাতের নেয়ামত ও সৌন্দর্য। যা শুধু মুমিন বান্দার জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহ দেখিয়েছেন, সংবাদ জানিয়েছেন। উম্মতে মুসলিমার জন্য এসবই পরকালের শান্তি ও চিরস্থায়ী জীবনের সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে জান্নাতি হিসেবে কবুল করুন। তাদের জান্নাতের নেয়ামত বাড়িয়ে দিন। জান্নাতের এসব নেয়ামত পেতে যথাযথ প্রস্তুতি ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম