একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাকার কমান্ডার আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় সোমবার ঘোষণা করা হবে।বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রোববার মামলার রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেছেন। এটি হবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা ১২তম মামলার রায়। এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটির রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। মোবারকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার টানামান্দাইল ও জাঙ্গাইল গ্রামে ৩৩ জনকে হত্যা, আনন্দময়ী কালীবাড়ির রাজাকার ক্যাম্পে আশুরঞ্জন দেবকে নির্যাতন করে হত্যা, সদর থানার ছাতিয়ানা গ্রামের আবদুল খালেককে অপহরণ করে হত্যা, শ্যামপুর গ্রামের দু`জনকে অপহরণ করে একজনকে হত্যা ও খরমপুর গ্রামের খাদেম হোসেন খানকে আটক রেখে নির্যাতনের পর হত্যা এবং একই গ্রামের আবদুল মালেক ও সিরাজকে আটক ও অপহরণ করে নির্যাতনের পর হত্যা। এসব অপরাধ একাত্তরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। যারা খালেককে ডেকে নেন তাদের মধ্যে আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মোবারক এবং জমশেদ মিয়া ছিলেন। শহীদ আবদুল খালেকের কন্যা খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোবারকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর মোবারক বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। মোবারক হোসেন আখাউড়া থানার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে। জানা গেছে, মোবারক স্বাধীনতার পর জামায়াতের ইউনিয়নের রোকন ছিলেন। পরে ১৬ বছর মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০১১ সালে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এলাকায় তিনি `দুম্বা হাজি` নামে পরিচিত। ২০১২ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবারকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরী ২৪ জানুয়ারি ২৯৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন প্রসিকিউশনে। পরে মোবারকের বিরুদ্ধে ৩৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই জামিনে থাকা মোবারকের জামিন বাতিল করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এরপর ২০ মে থেকে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ১২ জন রাষ্ট্রপক্ষে এবং আসামি নিজে ও তার ছেলে সাফাই সাক্ষ্য দেন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ২ জুন রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
Advertisement