ধর্ম

বাবা-মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কী?

সন্তানের কাছে বাবা-মার হক একটি মহান দায়িত্ব। এ হকের গুরুত্ব এত বেশি যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের হকের সঙ্গে মা-বাবার হককে মিলিত করেছেন। কারণ তিনি মা-বাবার মাধ্যমে জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ জন্ম নেওয়ার পর মহান আল্লাহর বাদতে নিয়োজিত হয়। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বাবা-মার হকের বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেন-

Advertisement

وَ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشۡرِکُوۡا بِهٖ شَیۡئًا وَّ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না এবং বাবা-মার মঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা আন-নিসা : আয়াত ৩৬)

এ আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করতেও নিষেধ করেছেন। পাশাপাশি বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে উত্তম আচরণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

সুতরাং বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণ ও সদ্ব্যবহার করা ইসলামের অনুসারীদের ঈমানি দায়িত্ব ও কোরআনের নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার এবং কথা ও কাজে তাদের প্রতি সদয় আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সন্তানদের প্রতি সেই অসিয়াত করেছেন এবং তাদের থেকে এ বিষয়ে অঙ্গিকারও নিয়েছেন।

আবার সন্তানের প্রতি বাবা-মার দায়িত্ববোধ হলো- তারা সন্তানের লালন-পালন করবেন, তাদেরকে শিক্ষা-দীক্ষা দেবেন। এমনকি তাদের সুখ-শান্তির জন্য নিজ আগ্রহ থেকেই রাতদিন পরিশ্রম করে থাকেন বাবা-মা।

সুতরাং ইসলামের এ বিধান সুস্পষ্ট যে, ইহসানের বিনিময় শুধুই ইহসান। এ কথাটিও মহান আল্লাহর। তিনি বলেছেন-

هَلۡ جَزَآءُ الۡاِحۡسَانِ اِلَّا الۡاِحۡسَانُ

Advertisement

‘উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কি হতে পারে?

এ কারণেই প্রত্যেক সন্তানের উচিত, বাবা-মার এ দায়িত্ববোধ পালনের কারণে তাদের প্রতি সদয় হওয়া। তাদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। কোরআনের নির্দেশ মেনে চলা। বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালন করা সন্তানের একান্ত হক বা অধিকার।

আর যারা একান্তই মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং বাবা-মার প্রতি কোনো বিষয় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না তাদের জন্য হাদিসে পাকে রয়েছে অভিশাপ ও কঠিন সতর্কবার্তা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবাধ্য সন্তানের ব্যাপারে তিনবার বদ-দোয়ার কথা বলেছেন। এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনা এমন-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তির নাক ধূলায় মলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলায় মলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলায় মলিন হোক; যে ব্যক্তি তার বাবা-মাকে উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় জীবিত পেলো; অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না।’ (মুসলিম)

মনে রাখতে হবে

বাবা-মার সঙ্গে ইহসান তথা ন্যায়-সঙ্গত আচরণ ও আনুগত্য করা জরুরি। আর এর মাধ্যমেই জান্নাতের নিশ্চয়তা পাবে মুমিন। কেননা সন্তানের প্রধান দায়িত্বই হলো- বাবা-মার আনুগত্য করা; তাদের প্রতি ইহসান করার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রচেষ্টা করা। কারণ বাবা-মার প্রতি অবাধ্যতাই হবে জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

তাই বাবা-মা জীবিত থাকলে তাদের খেদমত করবে। তাদের প্রতি দয়া দেখাবে। তাদের খোঁজ-খবর নেবে। জীবিত কিংবা মৃত সব বাবা-মার জন্য সন্তান সব সময় এভাবে দোয়া করবে-

১. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’

অর্থ : (হে আমাদের) পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)

২. رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’

অর্থ : ‘হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)

৩. رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارًۢا

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়া লা তাযিদিজ জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা।’

অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার বাবা-মাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন আর আপনি জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ : আয়াত ২৮)

বিশেষ করে-

শুধু বাবা-মার জন্য দোয়া ও খেদমতই নয় বরং বাবা-মার আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখা জরুরি। বাবা-মার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সন্তানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ،فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ

‘যে ব্যক্তি তার বাবার সঙ্গে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসে, সে যেন বাবার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে।’ (ইবন হিববান)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সন্তানকে নিজ নিজ বাবা-মার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। বাবা-মার অবাধ্য হওয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তির তাওফিক দান করুন। বাবা-মার খেদমত ও ইহসানের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস