যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরায়নের এটিও এক বাস্তব দিক। কিন্তু এমনিতেই যানজট যেখানে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলকে দুর্বিষহ করে তুলছে সেখানে ভিআইপি, ভিভিআইপি চলাচলের সময় রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো মানুষকে যন্ত্রণা দিচ্ছে তা। গতকাল সোমবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাকে কেন্দ্র করে রাজধানী স্থবির হয়ে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। এমনকি ট্রাফিক পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যানজটের কবলে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায়ও বিষয়টি উঠে আসে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ সমাবেশে আসতে আমিও যানজটের কবলে পড়েছিলাম। কিন্তু তাতে আমার দুঃখ হয়নি। কারণ মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে বলেই গাড়ি কিনে রাস্তায় বের হচ্ছেন। একটি রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ির চলাচলই প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে যানজট নিরসনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা পুরো নগরীকে ফ্লাইওভারের আওতায় আনছি। ঢাকাকে আধুনিক করতে আমরা মেট্রোরেল নির্মাণ করতে যাচ্ছি। সরকার উন্নয়নের স্বার্থে রাজধানীকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।` এটা ঠিক উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বাড়বে। কিন্তু বাস্তার বেহাল দশা যদি পূর্বাবস্থায় থাকে তাহলে গাড়ি-ঘোড়া বাড়লেই কী লাভ। প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে অসংখ্য গাড়ি। কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তাঘাট কি বাড়ছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা কি আধুনিকায়ন হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো কম হলো না। অটো সিগন্যাল বাতি লাগানো হল। কদিন পরই সব নষ্ট। আবার ম্যানুয়াল। হাতের ইশারায় গাড়ি থামে আর চলে। একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। রিক্সা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জ্যামে পড়লে সবারই একই দশা। যদিও গুরুত্বভেদে জরুরি ভিত্তিতে কিছু গাড়ি চলাচলের কথা। কিন্তু রাস্তা তো একই। কিভাবে চলবে? ব্যতিক্রম দেখা যায় শুধু ভিআইপি, ও ভিভিআইপিদের বেলায়। তখন রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায় মুহূর্তেই। আর এর জের টানতে নগরবাসীকে দুর্বিষহ যানজটে আটকা থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যানজট নিয়ে কথা কম হয়নি। এবার সময় এসেছে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার। সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমাবেশের কারণে যেন যানজট সৃষ্টি না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে কোনোভাবেই সভা-সমাবেশ করা সমীচীন নয়। আর লক্ষ লক্ষ লোক সমাগম করে জনসভা করার প্রথাগত ধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে শোডাউনের মানসিকতা পরিহার করতে হবে। এখন ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশ। অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল আছে। সেখানে সরাসরি জনসভার কার্যক্রম প্রচার করা যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রীদের বক্তব্য তো চ্যানেলগুলো নিজ থেকেই অনেক সময় সরাসরি প্রচার করছে। তাহলে লোক সমাগম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কেন অযথা অর্থের শ্রাদ্ধ। একটি বড় সমাবেশ করতেও তো অনেক টাকা লাগে। এখন অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও উদ্বোধন হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। তাহলে জনসভার ক্ষেত্রে কেন নয়? বিশেষ করে রাজধানীবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সক্রিয়ভাবে ভাবতে হবে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেও যানজট কমানো যায়। সবকিছু ঢাকাতেই হতে হবে-এই পুরনো ধ্যানধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। শরীরের সকল মাংসপিণ্ড মুখে চলে আসার নাম যেমন স্বাস্থ্য নয় তেমনি রাজধানীতেই সবকিছু করার নামও উন্নয়ন নয়। এটি আমাদের নীতি নির্ধারকরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন দেশ ও জাতির জন্য তা ততোই মঙ্গলজনক হবে। এইচআর/পিআর
Advertisement