আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন সংকটে ‘নিরপেক্ষ’ থেকে দু’কূল হারানোর শঙ্কায় ভারত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা না বলে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে ভারত। মস্কোর ভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ‘ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান’। এতে পুতিন প্রশাসন সন্তুষ্ট হলেও পশ্চিমাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লি। আর তাই, রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার অজুহাতে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার চিন্তা করছে বাইডেন প্রশাসন।

Advertisement

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রতিবাদে একটি নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ভারত। গত ২ মার্চ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহার সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবেও ভোট না দিয়ে তথাকথিত ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নেয় তারা।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের আটদিন পার হলেও একবারের জন্যেও প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়নি ভারতকে। বরং আগ্রাসন শুরুর দিনই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ফোন করেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রেখে আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রাশিয়ার বিপক্ষে না যাওয়ার জন্য একাধিক কারণ তুলে ধরেছে নয়াদিল্লি। রাশিয়ার প্রতি ভারতের প্রবল প্রতিরক্ষানির্ভরতার বিষয়টিকে প্রচ্ছন্ন রেখে সামনে আনা হচ্ছে কূটনৈতিক কারণকে। কিন্তু এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে ভারতকে।

Advertisement

দিল্লির দিক থেকে যেসব যুক্ত সামনে আসছে, তার প্রথমটি হলো, ভারতের অস্ত্র সরঞ্জামের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী রাশিয়া। কূটনৈতিকভাবেও তাদের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দেশ তারা। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া মানে, তাদের আরও বেশি চীনের দিকে ঠেলে দেওয়া, যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।

এসব বিবেচনায় জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে যাওয়ার সাহস করেনি নয়াদিল্লি। কিন্তু এখন সেই সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কড়া মূল্য চুকাতে হতে পারে ভারতকে। রাশিয়াকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেওয়ায় পুরোনো এস-৪০০ চুক্তির কথা টেনে এনে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার চিন্তা করছে ওয়াশিংটন।

শুক্রবার বার্তা সংস্থা পিটিআই’র বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবরে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

২০১৮ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ ইউনিট এস-৪০০ কিনতে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি করে ভারত। এর জন্য তখন ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কড়া হুঁশিয়ারি পেয়েছিল তারা। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এবার ভারতের ওপরও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Advertisement

এদিকে, কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী হলেও সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পর থেকে অস্ত্র সরঞ্জাম সরবরাহে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা গেছে, দর কষাকষি করে অনেক সময় দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে নেওয়ারও প্রবণতা দেখিয়েছে মস্কো। সেই তুলনায় ফ্রান্সের রপ্তানি অনেক দ্রুত, যদিও তাদের অস্ত্রের দাম অনেক বেশি।

কলকাতার সংবাদমাধ্যমটির অভিযোগ, ভারতকে সরাসরি সহায়তা করা দূরে থাক, চীন-ভারত বিরোধে পুতিন প্রশাসনকে বরাবরই চোখ বুজে থাকতে দেখা গেছে। এই রাশিয়াই আফগানিস্তানে শান্তি আলোচনা থেকে ভারতকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। নয়াদিল্লি বিপুল পরিমাণ রুশ অস্ত্র কিনলেও পুতিন প্রশাসন ভারতকে পশ্চিমা-ঘনিষ্ঠ তকমা দিতে ছাড়েনি। ২০১৯ ও ২০২০ সালে পরপর দু’বার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলেছিল চীন। সেসময় কোনো সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি মস্কোকে। বরং, তখন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশই ভারতের পাশে দাঁড়ায়।

এসব কথা উল্লেখ করে আনন্দবাজার বলছে, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের অবস্থা অনেকটা আম-ছালা দুইই যাওয়ার মতো দাঁড়িয়েছে।

কেএএ/জেআইএম