ধর্ম

জুমার দিনের বিশেষ জিকিরসমূহ কী?

আল্লাহ তাআলা জুমার দিন তাঁর জিকিরের দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়ার কথা বলেছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও জুমার দিন কিছু জিকিরের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সব জিকির কী?

Advertisement

১. জুমার দিনের সেরা জিকির : জুমার নামাজআল্লাহ তাআলা বলেন- ‘فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ। তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত জিকিরে ধাবিত হও।’ জুমার দিন জিকিরের (নামাজের) দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়ার কথা বলেছেন। এ সময় বেচা-কেনা বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। তাহলো জুমার নামাজ। জুমার নামাজকে তিনি জিকির বলে উল্লেখ করেছেন এবং দ্রুত জিকিরের দিকে ধাবিত হওয়ার কথা বলেছেন। কোরআনে এসেছে-یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯)

২. নামাজের পরের জিকিরনামাজের পরও জিকিরের নির্দেশ এসেছে কোরআনে- ‘وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرً। আর বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো।’ অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ো এবং রিজিকের অনুসন্ধান করো। আর বেশি বেশি জিকির করো। আর হাদিসের দিকনির্দেশনাও রয়েছে একাধিক। আল্লাহ তাআলা নামাজ পরবর্তী জিকির সম্পর্কে বলেন-فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَএরপর যখন নামাজ শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)

৩. জুমার দিনের তৃতীয় জিকির : খুতবাহরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে জুমার দিনে জানাবত তথা অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার মতো গোসল করবে, তারপর (প্রথম সময়ে) মসজিদে হাজির হবে সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় হলেন, সে যেন গরু কোরবানি করলো। যে তৃতীয় হলেন সে যেন শিংওয়ালা ছাগল কোরবানি করলো। যে চতুর্থ হলেন সে যেন মুরগী উৎসর্গ করলো। যে পঞ্চম হলেন সে যেন ডিম উৎসর্গ করলো। এরপর যখন ইমাম বের হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা (লেখা বন্ধ করে) ইমামের কাছে হাজির হয়ে জিকর (খুতবা) শুনতে থাকে।’ (বুখারি)

Advertisement

৪. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করাবৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জুমআর দিন সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সুরা তেলাওয়াত করা ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এটি কুরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮নং সুরা। সম্পূর্ণ সুরাটি তেলাওয়াত করতে না পারলেও প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত হলেও তেলাওয়াত করা উত্তম। আর তাতে মিলবে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা।> যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমআ থেকে অপর (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত নূর হবে।> যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, সে আটদিন পর্যন্ত সর্ব ধরনের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।> এক জুমআ থেকে অপর জুমআ পর্যন্ত তার সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।

৫. বেশি বেশি দরূদ পড়াজুমআর দিন বেশি দরূদ পাঠ করা উত্তম। যদি কোনো ব্যক্তি একবার দরূদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল হয়। আর যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ৮০ বার এ দরুদ পড়ে; তার ৮০ বছরের গোনাহ্ মাফ হয়ে যায় এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।> ‘তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমআর দিন। এই দিনে তোমরা আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। যেহেতু তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ)> তিনি আরও বলেন, ‘জুমআর রাত ও দিনে তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়। আর যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে; সে ব্যক্তির উপর আল্লাহ ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।’ (বাইহাকি)

৬. আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করাজুমআর দিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় নামাজে অতিবাহিত করা উত্তম। কিন্তু এ নামাজের অতিবাহিত করার অর্থ হলো- আসর নামাজ আদায় করে মাগরিব পড়ার নিয়তে বাকি সময় মসজিদে অবস্থান করে তাসবিহ-তাহলিলে অতিবাহিত করা। দরূদ পড়া। বেশি বেশি ইসতেগফার করা। আর তাতেই নামাজে অতিবাহিত করার সাওয়াব মিলবে। লাভ করবে অসংখ্য রহমত ও বরকত। হাদিসে এসেছে-> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমআর দিনের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এতে (এ দিনে) কিছু সময় আছে এমন, যখন কোনো মুসলিম বান্দা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তিনি তাকে তা অবশ্যই দেবেন। তিনি হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেন যে, ওই সময়টি (খুবই) অল্প।’ (বুখারি)

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জুমআর দিন একটি সময় আছে যখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণ চাইলে, তিনি তাকে তা অবশ্যই দেবেন। আর সেটি হলো আসরের পর।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)

Advertisement

> হজরত জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জুমআর দিন ১২ ঘণ্টা সময়; এর মধ্যে একটি সময় আছে এমন, যখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, তিনি তাকে তা অবশ্যই দেবেন। সুতরাং তোমরা আসরের পর শেষ সময়টুকুতে তা অনুসন্ধান কর।’ (আবু দাউদ)

> হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলে হজরত আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বলেন, তুমি কি তোমার পিতাকে জুমআর দিনের (বিশেষ) সময়ের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছ?আমি বলি, ‘হ্যাঁ’, আমি তাকে বলতে শুনেছি, আমি (আবু ‍মুসা আশআরি) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- সেটি হলো ইমামের (বৈঠকে) বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত মাঝখানের সময়টুকু।’ (মুসলিম)

> আল্লামা ইবনুল কায়্যিম ও অন্যান্য ইসলামিক স্কলারগণ যে মতটি দিয়েছেন, তাহলো- জুমআর দিন দোয়া কবুলের সেই সময়টি হলো আসরের পর। (যাদুল মাআদ)আল্লামা ইবনুল কায়্যিম বলেন, আমার মতে নামাজের সময়টি মূলত এমন এক সময়, যখন দোয়া কবুলের আশা করা যায়। (সাধারণত নামাজের সময় ও আসরের পর-) উভয়টি হলো দোয়া কবুলের সময়; যদিও বিশেষ এ সময়টি হলো আসরের পর। এটি নির্দিষ্ট। আগে পরে হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তবে ‘নামাজের সময়’ কথাটি নামাজের আগের ও পরের উভয় সময়কেই বোঝায়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত জুমার দিনের প্রতিটি জিকির যথাযথভাবে আদায় করা। জুমার দিনব্যাপী জিকিরের ফজিলত ও মর্যাদা যথাযথভাবে পাওয়ার চেষ্টা করা। জুমার নামাজ, খুতবাহ, রিজিক অনুসন্ধান, সুরা কাহফ তেলাওয়াত, দরূদ পাঠ এবং আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় তাওবাহ-ইসতেগফার ও তাসবিহ-তাহলিলে কাটানো।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনটি কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে জিকির তথা আমল-ইবাদতে কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস