আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে আলোচিত শিশু রবিউল হত্যার বিচার কাজ। তবে আলোচিত এ মামলা বিচারের শুরুতেই মামলার বাদী ও রবিউলের বাবা মো. দুলার মৃধাকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে তালতলী থানায় ডেকে নিয়ে তাকে আটক করা হয়। বরগুনার আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার একমাত্র আসামি মিরাজের (২৮) বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করে বরগুনার শিশু রবিউল (১০) হত্যা মামলার ১২ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আগামীকাল ১২ জানুয়ারি আদালতে প্রথমে মামলার বাদী ও শিশু রবিউলের বাবা দুলাল মৃধার স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা কথা রয়েছে।এদিকে সোমবার বেলা ২টার দিকে তালতলী থানায় ডেকে এনে রবিউলের বাবা মো. দুলাল মৃধাকে আটক করেছে পুলিশ। মামলার বাদী ও রবিউলের বাবা দুলাল মৃধাকে আটক করায় এ মামলার বিচার কাজে পুলিশ অসহযোগিতা করছে বলে জানান নিহত রবিউলে স্বজনরা। আলোচিত এ মামলার বিচারের শুরুতেই মামলার বাদীকে আটক করায় ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বলেও জানান তারা। এ বিষয়ে তালতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল আকতার জানান, আদালত সাক্ষিকে যথা সময়ে আদালতে উপস্থিত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য রবিউলের বাবা মো. দুলাল মৃধাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। আগামীকাল যথাসময়ে দুলাল মৃধাকে আদালতে হাজির করা হবেও বলে জানান তিনি।এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করার পর রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, তিনি লেখাপড়া জানেন না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তালতলী থানা পুলিশের ওসি বাবুল আখতার মামালার বিবরণীতে অপ্রাসঙ্গিক অনেক কথাবার্তা লিখে তার স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। যা মামলাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে তিনি মনে করেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পর গত বছরের ১৮ আগস্ট এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে বরগুনা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা। তবে ওই সময় রবিউলের বাবার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তালতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আখতার জানিয়েছিলেন, স্পর্শকাতর এ মামলাটি তিনি সঠিকভাবেই তদন্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে কোনো অসহযোগিতা তিনি করেননি বলেও জানান।উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ আগস্ট রাতে পেতে রাখা জালের মাছ চুরির অভিযোগে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা উইনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের ১০ বছরের শিশু রবিউলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ পাশের খালে ফেলে রাখে মিরাজ। পরের দিন ৪ আগস্ট বিকেলে স্থানীয় লকরার খালে রবিউলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।ওই দিনই রবিউলের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় পাঁচ আগস্ট শিশু রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা বাদী হয়ে তালতলী থানায় অভিযুক্ত মিরাজকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই মিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলী উপজেলার জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় রবিউলকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় মিরাজ। পরে ২৩ আগস্ট প্রধান আসামি মিরাজকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। প্রসঙ্গত, বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের ১০ বছরের ছোট্ট শিশু রবিউল আউয়াল। স্থানীয় ফরাজী বাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো সে। রবিউলের বড় বোন খাদিজা দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট বোন জান্নাতি সবে হাঁটতে শিখেছে। তালতলীর ফকিরহাট বাজারে রবিউলের বাবা দুলাল মৃধার খুচরা যন্ত্রাংশের একটি ছোট্ট দোকানের আয় দিয়েই চলে রবিউলদের সংসার।সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমএএস/আরআইপি
Advertisement