বিশেষ প্রতিবেদন

জামায়াতকে নিয়ে ২০ দলে অস্বস্তি, কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। এমনকি গত নির্বাচনের আগেও জামায়াত বিরোধী শক্ত অবস্থান তৈরি হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। এ অবস্থায় দলটির সঙ্গে দূরত্ব দেখাতে গিয়ে জোটগত বাদে নিজস্ব কর্মসূচি পালনের কৌশলে রয়েছে বিএনপি। ফলে ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম যেন অনেকটাই স্থবির। সবশেষ গত বছরের ২৭ মার্চ জোটের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে আর কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি ২০ দলীয় জোটের। তবে জোটগত কর্মসূচি না থাকলেও জামায়াতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হচ্ছে বলে জোটের অনেক নেতা জানিয়েছেন। তাদের মতে, ‘টুকটাক’ কর্মসূচিতে না থাকলেও সরকার বিরোধী বৃহৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে।

Advertisement

২০ দলীয় জোট সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিএনপি সরকার বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে বৃহত্তর জোট গঠনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে সমস্যা জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে। জামায়াত থাকায় বিএনপির সঙ্গে কোনো কোনো দল এক মঞ্চে উঠতে চাচ্ছে না। ফলে জামায়াত ইস্যুতে কৌশলী অবস্থানে থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে জোটের কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।

গত নির্বাচনের আগেও জামায়াত ইস্যুতে অস্বস্তি তৈরি হলে ২০ দল অক্ষুণ্ন রেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। তবে এখন জামায়াতের সঙ্গে কার্যত দূরত্ব দেখাতে হচ্ছে বিএনপিকে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০ দলীয় জোটকে অকার্যকর করে রেখেছে বিএনপি।

চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

Advertisement

বৈঠকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল করিম পিন্টু, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, নেজামে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রাকিব, সেক্রেটারি আব্দুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে ওইসময় সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চা খেতে খেতে অনানুষ্ঠানিকভাবে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।

এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বৈঠকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুজ্জামান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) শাহাদাত হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের শওকত আমিন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) আবু তাহের, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের এহসানুল হুদা, সাম্যবাদী দলের নুরুল ইসলাম, মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত আমীন বলেন, অনেকদিন জোটের নেতাদের কোনো বৈঠক হয় না। অনেক দিন পরে হলেও বৈঠক ভালো হয়েছে। চা-নাশতা খেয়েছি। আমাদের মতবিনিময় হয়েছে।

Advertisement

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়

ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা জানান, আমি যা বুঝেছি তা হচ্ছে, বিএনপি একটি বৃহত্তর ঐক্যের জন্য কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতকে প্রতিবন্ধক মনে করছেন কেউ কেউ। বিএনপি এ প্রতিবন্ধকতা টপকানোর কৌশল খুঁজছে। ঐক্যের স্বার্থে তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে ২০ দলের শরিকরা যেন একমত থাকে।

অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে দেখা গেলেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না কেন- জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব কর্মসূচি পালন করে। তারা নিজেদের কর্মসূচিতে অন্য কাউকে আমন্ত্রণ জানায় না।

জোটের স্থবিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জোটের শরিক অনেক দলের নিজস্ব কর্মসূচি পালনের সক্ষমতা নেই। যে কারণে জোটে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

সরকারের মামলা-হামলার কারণে ২০ দলীয় জোটে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে দাবি করে ন্যাপ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম বলেন, স্থবিরতা কাটিয়ে ২০ দলীয় জোট শিগগির সক্রিয় হচ্ছে।

জামায়াতের সঙ্গে শরিকদের প্রকাশ্য কর্মসূচিতে দেখা যায় না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। কর্মসূচি ঘোষণা করলে সবাইকে দেখা যাবে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, জোটে স্থবিরতা আছে আবার নেই। সবার সক্ষমতা নেই কর্মসূচি দেওয়ার। যাদের সক্ষমতা রয়েছে তারা-আমরা একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের কর্মসূচিতে বিএনপিসহ অন্যরা আসছে, আমরাও যাচ্ছি।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কর্মসূচিতে না দেখার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রকাশ্য কর্মসূচির বাইরেও রাজনীতিতে পর্দার অন্তরালে অনানুষ্ঠানিক অনেক বৈঠক হয়। তো সেখানে যে তারা থাকে না- এটা বলা যাবে না।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একাংশের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, সময় মতো সব দেখা যাবে। এখন বৃহত্তর ঐক্যের সময়।

এসব বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিএনপি এই মুহূর্তে সেভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। জামায়াতে ইসলামীও কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। যে কারণে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে টুকটাক কর্মসূচি হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে যাদের আসার তারা আসছেন। বড় ধরনের জনসভা বা সেরকম কর্মসূচি এখন হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর মন্তব্য জানতে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কেএইচ/কেএসআর/এসএইচএস/এমএস