আন্তর্জাতিক

‘জীবনে এতো কষ্ট কখনো করিনি’

‘ক্লান্ত, ক্লান্ত, ভীষণ ক্লান্ত। ক্লান্তিতে দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জীবনে এত কষ্ট করিনি। দুই মেয়েকে সঙ্গে করে কখনো ট্রেনে কখনো হেঁটে প্রায় ৪০ ঘণ্টার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডে এসে পৌঁছেছি। বিশ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে দেশে ফিরে আসবো।’

Advertisement

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় (স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) চাঁদপুরের নাসিরকোর্টের বাসিন্দা ইউক্রেন প্রবাসী জিয়াউদ্দিন আহমেদ কাওসার মামুন এভাবেই ভীতিকর অবস্থার বর্ণনা করছিলেন। ইউক্রেনে রুশ অভিযানের পর দুই মেয়েকে নিয়ে রাজধানী কিয়েভ থেকে নিরাপদ আশ্রয় পেতে পোল্যান্ডে রওনা হন তিনি।

বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পোল্যান্ডে পৌঁছানোর পর এতটা দীর্ঘপথ কীভাবে পাড়ি দিলাম তা যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। প্রায় ৪০ ঘণ্টা আগে যখন কিয়েভের বাসা থেকে লাগেজসহ মেয়েদের নিয়ে বের হই তখন ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। রাশিয়া যেদিন ইউক্রেন আক্রমণ করে সেদিন ঘুম ভাঙে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে। রাশিয়া কিয়েভে হামলা চালাতে আসছে- এমন সংবাদে প্রাণভয়ে আতংকিত হয়ে মানুষ পোল্যান্ড সীমান্তে ছুটতে শুরু করি। একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ফেলে রওনা হওয়ায় রাস্তায় তখন অসংখ্য যানবাহন, ফলে প্রচণ্ড যানজট। যানবাহনগুলো যেন সামনে এগুচ্ছিলই না, একটু একটু করে সামনে যাচ্ছিল।’

মামুন জানান, তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় যানজট দেখে হেঁটে রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। গাড়িতে ১৫ মিনিটের পথ তারা তিন ঘণ্টায় হেঁটে যান। স্টেশনে গিয়ে দেখেন মানুষ আর মানুষ। ইউক্রেনে বসবাসরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ রেলস্টেশনে ছুটে এসেছেন। ইউক্রেন সরকার যুদ্ধাবস্থার কারণে ট্রেনে যাতায়াত সবার জন্য ফ্রি করে দিয়েছে। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে প্রথম ট্রেন মিস করে দ্বিতীয় ট্রেনে ওঠেন তারা। ট্রেনে উঠে দেখেন অনেক ভিড়। তবুও নিরুপায় হয়ে পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

Advertisement

মামুন জানান, কিয়েভ থেকে পোলান্ড সীমান্তে ট্রেনে যেতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু ট্রেনে ওঠার পর জানতে পারেন যে পথে ট্রেনটি যাচ্ছে সেদিকে বোমা বিস্ফোরিত হচ্ছে। তাই বহুপথ ঘুরে দ্বিগুণের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি ট্রেন স্টেশনে নামেন। সেখানে নেমে দেখেন রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ। যানবাহনের সংখ্যা কম ও অতিরিক্ত যানজটে যানবাহন ধীরে এগুচ্ছে। এ সময় তারা হেঁটে রওনা হন। পোল্যান্ড সীমান্তে এসে সিরিয়াল ধরে খুব সহজেই ইমিগ্রেশন (দুই মেয়ে ইউক্রেনের নাগরিক এবং তিনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) পার হয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

মামুন বলেন, বাসা থেকে যখন রওনা দেই তখন দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও এ দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে ওরা দুজনই ভীষণ সাহায্যে করেছে। হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে উঠলে মেয়েরা উল্টো করেছে। প্রায় ৪০ ঘণ্টার এ দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার সময় বিভিন্ন স্থানে ইউক্রেনের নাগরিকরা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে মানুষকে খাবার ও পানীয় সরবরাহ করেছেন। এ বিপদের সময় তাদের এ আতিথেয়তার কথা আজীবন মনে থাকবে।

তিনি আরও জানান, এখন দেশে ফেরার পালা। ভীষণ ক্লান্ত থাকায় পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগযোগ করতে পারেননি। দ্রুত যোগাযোগ করে দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা রয়েছে বলে তিনি জানান।

এমইউ/ইএ/এমএস

Advertisement