কৃষি পাঠাগার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মেহেরপুরের গাংনীর বামন্দী ইউনিয়নের নারীরা বাড়ি বাড়ি গড়ে তুলেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত সবজি নিজের প্রয়োজনের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন তারা। এছাড়াও মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করা হচ্ছে।
Advertisement
গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। গৃহবধূরা সংসারের কাজকর্ম শেষে স্থানীয় কৃষি পাঠাগার থেকে পরামর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছেন পুষ্টি বাগান।
১৪৩ জন গৃহবধূ প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পুষ্টি বাগান গড়েছেন। আর এর পরামর্শ দিচ্ছেন বামন্দী ইউনয়নের তেরাইল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বকুল হোসেন।
শুধু ওলিনগর গ্রামেই ৮০ জন নারী কৃষি পাঠাগার থেকে ফল ও সবজির পোকা মাকড় দমনের জন্য বিষটোপ তৈরি, অন্যান্য ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য জৈব বালাইনাশক তৈরির কৌশল শিখে এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধ করে জৈব সারে সবজি উৎপাদন করার পরামর্শ নিচ্ছেন।
Advertisement
ওলিনগর গ্রামের ফেরদৌসী খাতুন বলেন, আমাদের বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি কেনার জন্য অনেক লোক আগ্রহী। আমরা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারি না। আগামীতে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিষমুক্ত জৈবসারের মাধ্যমে সবজি চাষ করবো। তাহলে নিজের পরিবার যেমন কীটনাশক ও রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি পাবে তেমনি বাজারে বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হবে।
একই গ্রামের গৃহবধূ সুফিয়া খাতুন বলেন, রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে জৈবসার তৈরি ও তার ব্যবহারবিধি শিখেছি। রোগ-বালাই হলে কোন সময় কোন ওষুধ দিতে হবে সেই পরামর্শ নিয়েছি। আগে কৃষি সম্পর্কে পরামর্শ নিতে হলে শহরে যেতে হতো। এখন কৃষকদের বাড়িতেই ছুটে আসছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এমন হলে আমাদের জেলায় কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে।
এদিকে বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলা পুষ্টি বাগানে রোগ-বালাই দমনে ও নানা পরামর্শ দিতে কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতাল। ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতালের উপসহকারী কৃষি অফিসার বকুল হোসেনের কাছে বালাই দমনের পরামর্শ ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পরামর্শ পাওয়া যায়। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়েও পুষ্টি বাগান দেখে পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা। এতে উপকৃত হচ্ছেন কৃষাণীরা।
ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতালের উপসহকারী কৃষি অফিসার বকুল হোসেন জানান, জৈব কৃষির বিস্তার অতিদ্রুত গ্রামীণ জনগষ্ঠীর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর লক্ষ্যে পরামর্শ প্রদান করছি। এখানে পাঠাগার থেকে পুষ্টি বাগান করা ও বালাই দূর করাসহ জৈবসার তৈরি ও ব্যবহারবিধি শেখানো হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ কম খরচে বিষমুক্ত নতুন নতুন জাতের ফসল উৎপাদন করছেন।
Advertisement
তিনি আরো জানান, ব্লকের বসতভিটায় ৫৫ হেক্টর অব্যবহৃত জায়গায় পুষ্টিকর সবজি বাগান করা হয়েছে। হরেক রকমের ফল ও শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বাড়ির আঙিনার ৮০০ টন লাউ, ১০০ টন করল্লা, ২০০ টন শষা, ৫০০ টন টমেটো, ২৪৫ টন মুলা, ১৮০ টন পালং শাক, ৬০ টন বরবটি, ৬০ টন লালশাক, ৩৫০ টন পেঁপে ও ৪০ টন গাজর উৎপাদন হয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, এখানকার মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। কৃষি নিয়ে কৃষকদের সবসময়ই পরামর্শ দেওয়া হয়। কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে সব ব্লকেই ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতালের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হবে।
আসিফ ইকবাল/এফএ/জেআইএম