আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে হামলার চতুর্থ দিন

টানা চতুর্থ দিনের মতো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ সেনাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা।

Advertisement

কিয়েভসহ ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের জরুরি সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছে, রকেট হামলা চালানো হয়েছে সেখানে। এতে একজন নারী নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে কমপক্ষে ২৪০ বেসামরিক লোক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

Russian forces pushing into Kharkiv pic.twitter.com/XxV2ah7SQZ

— OSINTtechnical (@Osinttechnical) February 27, 2022

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলেছেন, ইউক্রেন সরকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেশটির প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ইউরোপের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার লড়াই হিসাবে তৈরি করছে। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ সৈন্য, পুলিশ, চিকিৎসাকর্মী এবং অস্ত্র হাতে নেওয়া বেসামরিক লোকদের প্রশংসা করেছেন।

Advertisement

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, যারা দুই ঘণ্টার মধ্যে কিয়েভ দখলে নিতে চেয়েছিল, তারা কই? তাদের দেখতে পাচ্ছি না। রেজনিকভ বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং দেশটির জনগণ ছাড়া, ইউরোপ কখনই নিরাপদ হবে না।

এদিকে, হামলার চতুর্থ দিনেও ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন বহু মানুষ। আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখের বেশি শরণার্থী ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন।

ইউক্রেনে হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর রোষানলে পড়েছে রাশিয়া। ফেসবুকের পর এবার ইউটিউবের প্রধান কোম্পানি অ্যালফাবেট জানিয়েছে, রাশিয়ার মিডিয়া আউটলেটের বিজ্ঞাপন প্রচার এবং লেনদেন স্থগিত করবে।

এই বিধিনিষেধের অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে, রাশিয়া টুডেসহ অন্যান্য চ্যানেলগুলো ইউটিউব বা অ্যালফাবেট চালিত ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলোতে বিজ্ঞাপনের জন্য আর অর্থ গ্রহণ করতে পারবে না।

Advertisement

জানা গেছে, ইউক্রেনের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মন্ত্রী মাইখাইলো ফেদোরভ ইউটিউবকে রাশিয়ান প্রোপাগান্ডা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফেসবুক ও টুইটার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার পুতিন সরকারের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টসহ দেশটির সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অব্যাহত রেখেছে। আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্কে রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা। এছাড়া হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনেন সমর্থনে অস্ত্র পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশের পরপরই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে স্থল, আকাশ ও জলপথে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেন রাশিয়ার সেনারা। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে, এমনকি বেলারুশ থেকেও হামলা চালানো শুরু হয়। ধীরে ধীরে রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয় রুশ সেনারা। ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে শুরু হয় তীব্র লড়াই।

হামলার প্রথম দিন থেকেই এই সামরিক অভিযানকে সফল দাবি করছে রাশিয়া। তারা ইউক্রেনের বিমানঘাঁটিগুলোর সামরিক কাঠামো ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে। প্রথম দিনই রুশ সেনারা কিয়েভের উপকণ্ঠের আন্তোনোভ বিমানবন্দর দখলে নেন। নিয়ন্ত্রণে নেন বেলারুশ সীমান্তবর্তী চেরনোবিল পরমাণুকেন্দ্রেরও। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশের আগে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পূর্ব ইউক্রেন এক সময় রাশিয়ার ভূমি ছিল। পুতিনের এ ঘোষণার পরপরই শুরু হয় ইউক্রেন আগ্রাসন।

সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা

এসএনআর/জেআইএম