ক্যাম্পাস

অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হচ্ছেন হত্যা মামলার আসামি!

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে আন্তর্জাতিক একটি জার্নালে প্রবন্ধ লিখে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলারও আসামি তিনি। এমন গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও চবির ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স (অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান) বিভাগের সভাপতি পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

এরই মধ্যে ওই বিভাগে পদসহ যেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে আবেদন করেছেন অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন। বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি তার আবেদন গ্রহণ করে অনুমোদনও দিয়েছে। এখন শুধু অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির অনুমোদন পেলেই তিনি ওই বিভাগের শিক্ষক হওয়ার চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে যাবেন। কারণ প্ল্যানিং কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই অনুমোদনের কাগজ হাতে পেলেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হত্যা মামলার আসামিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি পদে নিয়োগ দেবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটে নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় একই বছরের ২৪ নভেম্বর চবির সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।

এরপর ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠান আদালত। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর আদালতের অনুমতি পেয়ে শিক্ষক আনোয়ারকে দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ৫৮ দিন কারাভোগ শেষে ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন আনোয়ার। বর্তমানে দিয়াজ হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

Advertisement

এদিকে, ২০১৮ সালের ১৭ মে চবি শিক্ষক আনোয়ারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করেন ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান তানভীর। শুনানি শেষে আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই আর্জি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৩ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলাটি রেকর্ড করে নগরের পাঁচলাইশ থানা।

মামলায় আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, একটি গবেষণা প্রবন্ধে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকে তিনি ‘হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চবিতে পদোন্নতির আবেদনের সঙ্গে ‘রিলিজিয়াস পলিটিক্স অ্যান্ড কমিউনাল হারমনি ইন বাংলাদেশ: এ রিসেন্ট ইমপালস’ শিরোনামে একটি গবেষণাপ্রবন্ধ যুক্ত করেন আনোয়ার হোসেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ‘জার্নাল অব হিউম্যান সোস্যাল সায়েন্সেস: সোসিওলজি অ্যান্ড কালচার’-এ ওই গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিয়াজের অনুসারী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর তোহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আনোয়ার একাধারে রাষ্ট্রদোহ এবং খুনের আসামি। তিনি আসামি হয়ে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াবেন, এটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। তাকে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান করা হচ্ছে শুনে বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

চবি সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি পারভীন সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন ক্রিমিনোলজি বিভাগে যাওয়ার জন্য একটা আবেদন করেছেন। আমরা অনুমোদন দিয়েছি। ক্রিমিনোলজি বিভাগ অনুমোদন করেছে কি-না আমি জানি না।’

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন ভূমিকা নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেন।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত চবি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার কল করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ইএ/এসএইচএস/এমএস