বিশেষ প্রতিবেদন

প্রকল্পে ধীরগতি, ঢাকায় বিদ্যুতের তারের জঞ্জাল নিরসন কতদূর?

ইট-পাথর, ধুলি-দূষণ আর যানবাহনের এ ঢাকা শহরে বড় জঞ্জালের নাম বিদ্যুতের তার। জানালার পাশে কিংবা রাস্তার উপরে ডিশ, টেলিফোন, ইন্টারনেট ও বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে ভয়ঙ্কর এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘর থেকে বেরোলেই অলিগলিসহ সব পথে এসব সঞ্চালন লাইনের রাজত্ব। কোথাওবা চলার পথে গা ঘেঁষে ঝুলছে জটলা পাকানো এসব তার। জটা তারের ভারে বিভিন্ন স্থানে নুয়ে পড়েছে বৈদ্যুতিক ও সড়কবাতির খুঁটি। এটি একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে সৌন্দর্যহানি হচ্ছে পুরো শহরের। নানা সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হচ্ছে না রাজধানী। কবে এ সংকট নিরসন হবে, সেটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না নগর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলো।

Advertisement

এ অবস্থা থেকে ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দিতে মাটির নিচ দিয়ে চলছে বৈদ্যুতিক লাইন টানার কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় তারবিহীন ঢাকা গড়তে দুটি প্রজেক্টে কাজ শুরু করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসি। যদিও শুরু থেকে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সময় মতো কাজ শেষ করতে না পারলে বাড়াতে হতে পারে বাজেটও।

ঢাকার প্রায় সব রাস্তার পাশেই মাথার ওপর এখন কেবল টিভি, ইন্টারনেট সার্ভিস, টেলিফোন লাইন আর বিদ্যুতের লাইনের তারের জঞ্জাল। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা এসব তার ছিঁড়ে বিভিন্ন সময়ে সমস্যা তৈরি হয়। এসব তার মাঝেমধ্যে অগ্নিকাণ্ডেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গত ১ জানুয়ারিতে বঙ্গভবন থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুপাশে ১৯ কিলোমিটার এবং গাবতলী থেকে আজিমপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার প্রধান সড়কের দুপাশে মাটির নিচ দিয়ে লাইন টানার কাজ শুরু হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব রাস্তার দুপাশে যত ওভারহেড লাইন আছে, সেগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড করা হবে।

Advertisement

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দুটি প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলছে। জাহাঙ্গীর গেট থেকে আমরা দুই কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ এরইমধ্যে এগিয়ে নিয়েছি। আমরা এ কাজ আগেই শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। অপরদিকে ধানমন্ডি এলাকায় কাজের জন্য এখনো অনুমতি দেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সব মিলিয়ে কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি, আমাদের হাতে সময় আছে। আমরা চেষ্টা করবো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যেন কাজ শেষ করা সম্ভব হয়। আমাদের এখন প্রায় ১২০০ কিলোমিটারের মতো ভূগর্ভস্থ লাইন আছে। আমাদের সব ওভারহেড লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাবো।

ডিপিডিসি বলছে, প্রাথমিকভাবে জাহাঙ্গীর গেট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ২২টি আরএমইউ, ১৯টি এলটিবি এবং চারটি কিয়োস্ক ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হবে। এ কাজ বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ডিপিডিসির অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএনটিআইসি ও এসপিআইটিসি যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের কাজে ধীরগতিতে বাজেট বাড়াতে হবে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমাদের বাজেটে আপাতত কেনো সমস্যা নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হলে বাজেট তো বাড়বেই। তবে আমরা চেষ্টা করবো কাজের গতি বাড়িয়ে সঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করার।

Advertisement

ধানমন্ডির কোন কোন এলাকায় লাইন টানার কাজে এখনো অনুমোদন মেলেনি, জানতে চাইল ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ধানমন্ডি ২৭, পশ্চিম ধানমন্ডি, সাতমসজিদ রোড, দুই নম্বর রোড, মিরপুর রোড ব্লকে কাজ হবে। মাঝখানে লেক রেখে এর আশপাশে যে সড়ক আছে আমরা সবখানে একসঙ্গে কাজ করবো। এসব এলাকাতে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এছাড়া গাবতলী থেকে মিরপুর রোড হয়ে আজিমপুর প্রজেক্টে ধানমন্ডির আগে উত্তর সিটির যে এলাকা পড়েছে, সেখানে আমরা কাজের অনুমতি পেয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের যে কর্মপরিকল্পনা আমরা সিটি করপোরেশনে জমা দিয়েছি, সেটাকে আরেকটু মোডিফাই করবো। আমরা বিদেশে গিয়ে কাজের ধরন দেখে এসেছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজের ধরন কিছুটা ‘মেডিফাই’ করবো। আমাদের সঙ্গে চীনা প্রতিষ্ঠানের যারা আছেন, তাদের সঙ্গে বসে শিগগির সেটা চূড়ান্ত করবো আশা করছি। প্রকল্পের কাজ সব জায়গায় চলছে। আমরা দফায় দফায় সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মিটিং করে এগোচ্ছি। একইসঙ্গে সব ধরনের উন্নয়ন কাজও হচ্ছে, এজন্য কিছুটা সময় লাগছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর থেকে আমাদের দক্ষিণ সিটির নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। কোনো রাস্তা কার্পেটিং করার পর তিন বছরের মধ্যে তাতে খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। আমরা ২৬টি সংস্থাকে গত বছর চিঠি দিয়েছি, ছয়টি সংস্থা ‘রেসপন্স’ করেছে। এছাড়াও ডিপিডিসি যে পরিকল্পনা আমাদের দিয়েছে, সেটি পুরনো কি না, পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে কি না অথবা আপডেট করতে হবে কি না, সেসব বিষয়ও খতিয়ে দেখবে সিটি করপোরেশন।

গর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ধামন্ডিতে কাজ চলছে। কাজ শুরু হয়েছে।

তবে বিভিন্ন এলাকায় লাইন স্থাপনে এখনো সিটি করপোরেশনের অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি তিনি। তার ভাষ্য, সিটি করপোরেশন অনুমতি দিচ্ছে না, দেরি করছে। এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। দেখা যাক, হয়ে যাবে।

ঢাকা মহানগরীকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে ২০০৯ সালে ওভারহেড সব তার অপসারণ করে আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঝুলন্ত তার সরাতে ২০১০ সালে উদ্যোগও নিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। ওইসময় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।

এমআইএস/এমকেআর/এমএস