সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সব দলের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে কাজ করবো। তবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায় শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।’
Advertisement
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর রাতে নিজ বাসভবনে তৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘আমার সবার প্রতি সমান দৃষ্টি থাকবে। সবার সঙ্গে সমান আচরণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। তবে জোর দিয়ে বলতে চাই- সব দোষ নির্বাচন কমিশনকে দিলে আমি তা গ্রহণ করবো না। রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা আছে। পুলিশ, আনসার, র্যাবকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি তাদের কমান্ড করবো না। আমি এসপিকে বদলি করতে পারবো না। আমি কমান্ড করলে কেউ রাইফেল নিয়ে দৌড়াবেও না।’
অতীতের দুটি নির্বাচন কমিশন ইমেজ সংকট পড়েছে, সেটা কাটাতে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইমেজ সংকট আমাকে নিয়েও হতে পারে। আমি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা না পেলে এবং নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূল না হলে আপনারা আমাকেও দায়ী করবেন।’
Advertisement
সিইসি বলেন, ‘আমাদের চেয়ে অনেক বড় দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের। তারা যদি মনে করেন, নির্বাচন কমিশন সুন্দর নির্বাচন করিয়ে দেবে, তাহলে ভুল ধারণা হবে। তাদেরকে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তারা আমার কাছে সহযোগিতা চান, আমিও তাদের সহযোগিতা চাই। এটা যদি নিউজিল্যান্ড হতো, তাহলে চা খেতে নির্বাচনে হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতে সেটা হবে না। এখানে পরিবেশ স্টেবল হয়ে ওঠেনি এখনো।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে কারচুপি চিরকালই হয়েছে কম-বেশি। এ জিনিসটা যাতে কম হয়, মানুষের যাতে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে, সেটা যদি আপেক্ষিকভাবে, ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সফলতা। কিন্তু অ্যাবসোলিউট সেন্সে আমি এখনো বিশ্বাস করি না সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে আসবেন বা আসতে পারবেন। অতীতে ১০০-২০০ বছরের নির্বাচনেও সেটা দেখা যায়নি। কিন্তু নির্বাচনে যখন সবাই আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে, কিছু এদিক-সেদিক হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন, সরকারি দল চাপ প্রয়োগ করেন, এটা ঠিক নয়। যারা সরকারি দলে থাকেন, তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে। যদি জাতীয় পার্টি থাকতো, বিএনপি থাকতো, তারাও পেতো। এটাকে নেগেটিভলি নিলে হবে না।’
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে বক্তব্য দিচ্ছে, এ প্রসঙ্গে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিএনপির বক্তব্য শুনে একটু হতাশ হচ্ছি, উনারা নির্বাচন করবেন না। আমি বলবো, নির্বাচনে আসেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আপনি যদি মাঠ ছেড়ে দেন, তাহলে নির্বাচন অবাধই হবে। কোনো বাধা থাকবে না। মাঠে যদি থাকেন, তাহলে নির্বাচন বাধা-বিপত্তির মধ্যে সবার অংশগ্রহণটা হবে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আমাদের তৈরি করতে হবে। এটাও আমি বলবো, অ্যাবসলিউট সেন্সে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে?এজন্য পক্ষ-প্রতিপক্ষ শক্তিকে কাছাকাছি শক্তির হতে হয়। যারা বিরোধীপক্ষে থাকবেন, তাদের আরও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ আপেক্ষিকভাবে ভালো হবে।’
নতুন সিইসি আরও বলেন, ‘আমি সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে বসবো। তারপর দায়িত্ব নিয়ে আরও বেশি ঋদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবেন। সবার বক্তব্য শুনে আন্তরিক মনে হয়েছে। সবাই সুন্দর নির্বাচন চাইছেন। নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন করে না। অনেক স্টেক হোল্ডার থাকে। নির্বাচন কমিশন টপ লেভেলে থেকে পলিসিগুলো বলে দেয়। সব সেন্টারে নির্বাচন কমিশন থাকে না। প্রশানকে কতটা নিরপেক্ষ করা যায়, দায়িত্বশীল করা যায়, সেটাও কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ। তাদেরকে ইউ হ্যাভ টু বি টেকেন অন বোর্ড। তাদের সেই ইয়েটা আসতে হবে যে, ভোটাধিকার একটা পবিত্র আমানত। সেই আমানত যাতে খেয়ানত না হয়।’
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নতুন ইসির কাজ কী হবে, জানতে চা্ইলে তিনি বলেন, ‘সেটা এখনই বলতে পারবো না। তবে এটা সজহ কাজ নয়। সমন্বিতভাবে সবাই মিলে কাজ করবো। আমার কাছে লাঠি নেই, বন্দুক নেই। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মত যুদ্ধ করতে পারবো না। খালি হাতে যুদ্ধ করতে হবে। আমাদের অস্ত্র আপিল। সবাই যদি দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে সুশাসনের দিকে অগ্রসর হবে। নির্বাচন নিয়েই মাথা ঘামাবো। রাজনৈতিক দিকে নয়। কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলে রাজনৈতিকভাবে যেতে যাবে। নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়।’
আস্থার পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনেক মুখ্য ভূমিকা আছে, সেখানে ভূীমকা কী থাকবে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না সব আমার দায়িত্ব। এখানে অন্যদের ভূমিকা আছে। গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। আমি যদি ভুল করি, সমালোচনা করবেন। ধরিয়ে দেবেন। চ্যালেঞ্জ বলে পিছিয়ে যাবো না। মোকাবিলা করতে হবে, সেটা করবো। আমি সবাইকে বলবো, নির্বাচনে আসুন। মাঠ ছেড়ে যাবেন না। রাজনৈতিক দল মানেই নির্বাচন করবে। তাদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। যারা বলছেন নির্বাচন করবেন না। তাদের প্রতি অবশ্যই আহ্বান থাকবে, আসেন, নির্বাচন করেন। না হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না।’
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রথমবারের মতো আইন অনুযায়ী গঠিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত অন্য চার নির্বাচন কমিশনার হলেন– অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।
রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দিয়েছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগ দিয়েছেন বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
এদিকে, নতুন গঠিত নির্বাচন কমিশনারদের শপথ রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে কমিটিকে ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেয়।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকে নাম নেওয়া ছাড়াও বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করে। গত মঙ্গলবারের (২২ ফেব্রুয়ারি) সভায় ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে কমিটি।
এইচএস/এএএইচ