কৃষি ও প্রকৃতি

চলনবিলে ক্ষিরার বাম্পার ফলন দামও চড়া

সিরাজগঞ্জের চলনবিলে ধান, গম, ভুট্টা ও সরিষার পাশাপাশি ব্যাপক আকারে ক্ষিরার চাষ হয়েছে। এর বাম্পার ফলনে আনন্দিত কৃষকরা। এদিকে ক্ষিরার দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। সারাদেশেই চলনবিলের ক্ষিরার চাহিদা রয়েছে। তবে এবার ঢাকায় এই ক্ষিরার চাহিদা বেশি। প্রতিদিন প্রায় ৫০ টন ক্ষিরা যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন আড়তে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার মৌসুমী ক্ষিরার হাট বসেছে প্রায় ১৫টি।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কোহিত, সড়াবাড়ি, তালম সাতপাড়া, সাচানদিঘি, সান্দুরিয়া, খোসালপুর, বারুহাস, নামো সিলট, দিঘুরিয়া, বড় পওতা, দিয়ারপাড়া, খাসপাড়া, তেঁতুলিয়া, ক্ষীরপোতা ও বরগ্রাম গ্রামের বিশাল মাঠের পর মাঠ ক্ষিরার চাষ হয়েছে। ক্ষিরা বিক্রি করার জন্য দিঘরীয়া এলাকায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন আড়ত।

প্রতিদিন সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা ক্ষিরা আড়তে আনতে শুরু করেন। আর আড়ত থেকে সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ক্ষিরা কিনতে আসেন। প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন ক্ষিরা বেচা-কেনা হচ্ছে। দুপুরের পর ট্রাকে ক্ষিরা বোঝাইয়ের কাজ শুরু হয়। এরপর ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক যোগে ক্ষিরা চলে যায়। এবার এই আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ টন ক্ষিরা যাচ্ছে শুধু রাজধানী ঢাকায়।

দিয়ারপাড়া গ্রামের ক্ষিরা চাষি আজমল ফকির বলেন, গত মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষ করেছিলাম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে খুব একটা লাভের মুখ দেখিনি। এবার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। দামটাও খুব ভালো পাচ্ছি।

Advertisement

বারুহাস গ্রামের কৃষক আছের উদ্দিন বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে ক্ষিরার চাষ করেছি। ৪ বিঘা জমিতে চাষ করতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার দাম ভালো পাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে।

দিঘরীয়া গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, প্রতি বছর আমি ধান চাষ করি। এবার ধান চাষের পাশাপাশি আড়াই বিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি বস্তা ক্ষিরা ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর এরকম থাকলে আড়াই বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে।

এবিষয়ে কথা হয় আড়তদার ফজলুল করিমের সঙ্গে, তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ক্ষিরার দ্বিগুণ আমদানী হচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষিরায় আড়ত ভরে যায়। চাহিদাও বেড়েছে, দামও ভালো। গত বছর এক বস্তা ক্ষিরার দাম ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা ছিল। কিন্তু এবার ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে ক্ষিরা কেনেন এবং দুপুরের পর ট্রাক লোড শুরু করেন। তবে এবার ক্ষিরার চাহিদা ঢাকাতেই বেশি।

Advertisement

ঢাকা থেকে আসা পাইকার সোহরাব আলী বলেন, গত তিন বছরে ক্ষিরার এতো দাম হয়নি। প্রচুর আমদানি হয়েছে, কিন্তু দাম কমেনি। তবুও এক ট্রাক কিনেছি। ঢাকায় নিয়ে যাব, লাভ-লোকসান কেমন হবে জানি না।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহান লুনা বলেন, উপজেলার ফসলী জমিতে ক্ষিরা চাষের জন্য উপযোগী। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক কৃষকদেরকে ক্ষিরা চাষে উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪২৭ হেক্টর জমিতে ক্ষিরা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর বেশি।

এমএমএফ/এএসএম