একদিন আগেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণা ছিল, ব্যাপক পরিসরে গণটিকাদান কার্যক্রম চালাতে শুক্রবারও দেশের সব টিকাদান কেন্দ্র/বুথ খোলা রাখা হবে। সেই ঘোষণা মোতাবেক শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। সকাল ৯টা থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই এসেছেন ফজরের নামাজের পরপরই।
Advertisement
রাজধানীর পূর্ব রামপুরা হাই স্কুল কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯টায়। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎই ঘোষণা আসে, আজ টিকা কার্যক্রম আর পরিচালিত হবে না। সবাইকে আগামীকাল আসার জন্য বলা হয়। ওইসময় কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম পরিচালনাকারী কাউকে চোখে পড়েনি। মাইকে এ ঘোষণা দেন পূর্ব রামপুরা হাই স্কুলের দপ্তরি সিরাজ উদ্দিন সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওয়ার্ড (২২ নং) কমিশনারের সচিব তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামীকাল টিকা দেওয়া হবে বলে মাইকে ঘোষণা করতে বলেছেন। এমন অপ্রত্যাশিত ঘোষণার পর ওই কেন্দ্রে সকাল থেকে লাইনে অপেক্ষমাণ প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ আক্ষেপ ঝেড়েই ফিরে যান।
এরপর ওয়ার্ড কমিশনার হাজী মো. লিয়াকত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আজ কোনো টিকা কার্যক্রম হবে না। এ কার্যক্রম হবে আগামীকাল শনিবার।
Advertisement
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি অ্যান্ড এএইচ) এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক সই করা এক চিঠিতে শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে করোনার টিকাকেন্দ্র খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) অনুষ্ঠিতব্য গণটিকা কার্যক্রমকে ঘিরে দেশব্যাপী বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে এবং ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনমনে সৃষ্ট এ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও টিকার টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে আগামীকাল শুক্রবার সারাদেশের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন সেন্টার খোলা রেখে ও প্রয়োজনে অতিরিক্ত কেন্দ্র/বুথ স্থাপনের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
শুক্রবার টিকা কার্যক্রম চালু রাখার ঘোষণা প্রসঙ্গে কমিশনার হাজী মো. লিয়াকত আলী বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছুই জানানো হয়নি। আমাদের আজকের জন্য কোনো টিকা দেওয়া হয়নি। তাই আমরা দিতে পারছি না।
শুক্রবার কেন টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে করোনা ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেছিলেন, টিকা কেন্দ্রগুলোতে প্রচুর মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারিও প্রচুর পরিমাণে টিকা দেওয়া হবে। মানুষের টিকা নেওয়ার চাপ রয়েছে। তাই শুক্রবারও টিকা কেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে।
Advertisement
এদিন পূর্ব রামপুরা হাই স্কুল কেন্দ্রে টিকার জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা না পেয়ে নাজমা আক্তার নামের এক নারী জাগো নিউজকে বলেন, খবরে দেখেছি, তাই টিকা নিতে এসেছিলাম। এখন ওরা বলছে টিকা দেবে না, কাল আসতে হবে। তাহলে আজ কেন কষ্ট দেওয়া হলো। শত শত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ফিরে গেলো। গরিব অসহায় মানুষের কষ্ট কেউ দেখে না। এ ভোগান্তির জন্য সরকার দায়ী।
এদিকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া দাবানল ক্লাবে গতকাল বৃহস্পতিবার গণটিকাদান কার্যক্রম চলেছে। সেখানেও শুক্রবার সকাল থেকে টিকাপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। পরে টিকা না দেওয়ার ঘোষণায় তারাও আক্ষেপ নিয়ে ফিরে যান।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের এক কোটি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনএইচ/এমকেআর/জিকেএস