জাতীয়

রাষ্ট্রীয় দপ্তর থেকে তথ্য পেতে অনেক বেগ পেতে হয়: সিপিডি

রাষ্ট্রীয় যে কোনো দপ্তর থেকে তথ্য পেতে অনেক বেগ পেতে হয় বলে দাবি করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণের জন্য আর্থিক তথ্য উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

এশিয়া ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশের সহযোগিতায় সিপিডি আয়োজিত এ সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, কোনো দেশের আর্থিক তথ্য শুধুমাত্র দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া এবং নীতিনির্ধারণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এ তথ্যের অবাধ প্রবাহ জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশর প্রেক্ষাপটে চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত আর্থিক তথ্য সময়মতো পাওয়া যায় না। রাষ্ট্রীয় দপ্তর থেকে তথ্য পেতে অনেক বেগ পেতে হয়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া আছে, কিন্তু সে প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করছে না। জনসাধারণের তথ্যের ব্যাপারে অনেক অসচেতনতা রয়েছে। সুতরাং, সেদিকে আসাদের নজর দিতে হবে। সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক সংশয়কে দূর করতে হবে।

Advertisement

সংলাপে তথ্য-উপাত্তের প্রবাহ সঠিক নিয়মে সময়মত করার জন্য সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ক্যালেন্ডার প্রণয়নের তাগিত দেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রতিনিধি ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, সরকারি তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য বিশেষ সংস্কার প্রয়োজন। নির্দিষ্ট সময় পর পর দেশের আর্থিক তথ্য প্রবাহের জন্য একটি তথ্য ক্যালেন্ডারও করা যেতে পারে।

তথ্যের সহজলভ্যতার জন্য পিডিএফ ফরমেটে তথ্য না রেখে এক্সেল ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি।

দেশের অর্থনৈতিক খাতের তথ্যের মানোন্নয়নের জন্য অর্থমন্ত্রীর আগ্রহ থাকাটা জরুরি বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিডিপি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

Advertisement

সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে অর্থমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে চান তাহলে তাকে অর্থের মানের দিকে আগে নজর দিতে হবে। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হয়। তাকেই আগে তথ্যের মানোন্নয়নের জন্য আগ্রহী হতে হবে।

রেহমান সোবহান আরও বলেন, আমি মনে করি সরকারের যে কোনো তথ্যের চাহিদা আগে থাকা উচিত জনপ্রতিনিধিদের। কারণ, তারা এসব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নিজ এলাকায় তুলে ধরবেন উন্নয়নের চিত্র। কিন্তু তারা সেটি না করে সংসদে এসে শুধু বাজেট চান। এই বাজেটের কতটুকু বাস্তবায়ন হলো তা নিয়ে তাদের কোনো খোঁজ থাকে না।

তিনি বলেন, ডাটা শুধু যে জনপ্রতিনিধিদের দরকার তা নয়- সিভিল সোসাইটি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদদেরও তথ্যের প্রয়োজন। সঠিক সময় সঠিক তথ্য থাকলে তারাও নীতিনির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও সঠিক তথ্যের জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাও প্রয়োজন।

সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, সুশাসন নিশ্চিত এবং মানসম্মত আর্থিক তথ্যের সময় প্রকাশ রাষ্ট্রের বাজেট সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এসময় তিনি আর্থিক খাতের তথ্যের প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা নির্ভুলতা ও সময়মত পাওয়া এই বিষয়গুলোর উপর জোর দেন। এসময় তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সামাজিক সুরক্ষাসহ নানাখাতে মাসভিক্তিক অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরার পরামর্শ দেন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য ‘ডাটা বিপ্লব’ একটি মূল পূর্বশর্ত উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, শুধু আর্থিকখাত নয় সার্বিকভাবে ডাটা নিয়ে আমাদের সমস্যা আছে। চ্যালেঞ্জও আছে। গত বছর আমরা যেসব পরিকল্পনা নিয়েছি তা কতটুকু বাস্তবায়ন হলো তা জানার জন্য হলে তথ্য দরকার। তাই আমি মনে করি, আমাদের সফলতা-ব্যর্থতা দেখার জন্য তথ্যের অবাধ প্রবাহ দরকার।

সংলাপে অংশ নিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাজেট নিয়ে সংসদে তেমন আলোচনা হয় না। আমাদের সংসদীয় আসনের জন্য কতটা বরাদ্দ দরকার তা নিয়েও আলোচনা অনেক কম। বাজেট হয়ে গেছে অনেকটা আমলাতন্ত্রভিত্তিক। তারা যা দেন তা-ই পাস হয়, কোনোভাবেই এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না।

এমওএস/এমকেআর/জিকেএস