আন্তর্জাতিক

‘ঘুম ভেঙেছে বোমার বিকট শব্দে, অবস্থা খুব খারাপ’

‘ভোরে ঘুম ভেঙেছে চার-পাঁচটি বোমার বিকট শব্দে। অবস্থা খুব খারাপ। হাজার হাজার মানুষ প্রাণভয়ে আতংকিত হয়ে পোলান্ডের দিকে ছুটছে। রাস্তায় প্রচুর গাড়ি, ব্যাপক যানজট। গাড়ি এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করে সামনে এগুচ্ছে। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে খুব টেনশনে আছি। ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছি। সকালে গাড়ি পেলে পোলান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবো। দোয়া করবেন।’

Advertisement

চাঁদপুর জেলার নাসিরপুর গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে ইউক্রেনের কিয়েভ শহরের বাসিন্দা মামুন হোসেন বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টায় (স্থানীয় সময় রাত ৭টা) ঠিক এভাবেই উৎকণ্ঠা নিয়ে শহরের অবস্থা বর্ণনা করছিলেন।

জাগো নিউজকে মামুন বলেন, ‌‘বাংলাদেশ থেকে সবাই টেলিফোন করে এখনও কেন পোলান্ড যাচ্ছি না তা জিজ্ঞাসা করছেন। আমরাও যেতে চাইছি। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ পোলান্ডের দিকে ছুটছে। গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সরকার টেলিভিশনে নাগরিকদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। খাবারের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে অবস্থা খুবই খারাপ।’

তিনি জানান, পোলান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সেখানে গেলে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে বলা হচ্ছে। কিয়েভ থেকে পোলান্ডের দূরত্ব ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার। ইউক্রেনীয়ান স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে এতটা লম্বা পথ কীভাবে যাবো সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

Advertisement

তিনি জানান, রাশিয়া এভাবে অ্যাটাক (আক্রমণ) করবে তারা কল্পনা করেননি। মেয়েদের স্কুল খোলা থাকায় আগে থেকে কোথাও যাননি। এখন দেখছেন অবস্থা খারাপ হচ্ছে।

মামুন হোসেনের ছেলেবেলা গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে কাটলেও পরে ঢাকার হাতিরপুলে থাকতেন। তিনি ১৯৯১ সালে ইউক্রেন যান। ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৫ সালে আবার ইউক্রেন যান। সেখানকার বাসিন্দাকে বিয়ে করেছেন তিনি।

সেন্ট্রাল ইউক্রেনের চেরকাছি নামক শহরের বাসিন্দা খুলনার জাহাঙ্গীর আলম। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ ইউক্রেনে বসবাস করছেন। আর্মেনিয়ান স্ত্রী ও দুেই ছেলেকে নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটছিল তার।

সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানান, রাশিয়া চারপাশ থেকে হামলা চালাচ্ছে। গতরাত থেকে এয়ারপোর্ট ও আর্মি ঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চলছে। যেখানে তিনি রয়েছেন সেখান থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে বসতবাড়িতে রকেট লঞ্চারের হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। সবার মধ্যে তীব্র আতংক বিরাজ করছে।

Advertisement

তিনি বলেন, গোটা শহরে বাংলাদেশি তিনটি পরিবার রয়েছে। সবাই খুব আতংকে সময় কাটাচ্ছেন। ইউক্রেন সরকার রাত ১০ থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। শুক্রবার সকালে সুযোগ পেলে পোলান্ডের দিকে রওয়ানা হবেন বলে জানান তিনি।

এমইউ/ইএ