স্বাস্থ্য

প্রথম ডোজের টিকা নিতে উপচেপড়া ভিড়

করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিতে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে স্রোতের মতো নানা বয়সী নারী ও পুরুষরা ছুটে আসছেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকা নিতে কোনো ধরনের নিবন্ধন, জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট কিংবা পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে না।

Advertisement

ওই দিনের পর প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ থাকবে এমন খবরে প্রতিটি কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে। বর্তমানে যারা ভ্যাকসিন নিতে আসছেন তাদের নাম, বয়স, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর রেখে টিকা দেওয়া হচ্ছে। গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় সামলাতে সংশ্লিষ্ট টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বপালনরত কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ টিকা না পেয়ে ফিরেও আসছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও টিকাদান কেন্দ্রের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েকদিন যাবত কেন্দ্রগুলোতে প্রথম ডোজের টিকা নিতে মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ মিলিয়ে মোট টিকা নেওয়ার সংখ্যা ২৭ লাখ ৯১ হাজার ৬১৪ জন। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৩ জন। অর্থাৎ মোট টিকার অর্ধেকের বেশি সংখ্যক মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে এক কোটি জনসংখ্যাকে প্রথম ডোজের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি এক কোটি জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

Advertisement

তিনি জানান, এ কর্মসূচিকে সফল করতে গ্রামাঞ্চলে ১৬ সহস্রাধিক ও শহরাঞ্চলে (সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা) সাড়ে ৮ হাজারের বেশি অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে প্রায় ৭০ হাজার ভ্যাক্সিনেটর ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। এরই মধ্যে সরকার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব ৬১ শতাংশকে প্রথম ডোজ, ৪৬ শতাংশকে দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান সম্পন্ন করেছে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) শ্যামলী টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে প্রথম ডোজের টিকা নিতে নারী ও পুরুষের ভিড় জমেছে। তিনি অন্যান্য হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে কথা বলে জেনেছেন প্রতিটি হাসপাতালের একই অবস্থা। তার কেন্দ্রে প্রতিদিন দুই হাজার টিকা দেওয়া হয়। দুপুরের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। ভ্যাকসিন শেষ হওয়ার পরও অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন।

তিনি বলেন, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজের টিকা নেওয়া যাবে না অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন কিংবা জন্মনিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না, এমন খবরে ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ টিকা নিতে ছুটে আসছেন।

এতদিন কেন টিকা নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে ভ্যাকসিন নিতে আসা নারী ও পুরুষরা কেউ করোনায় আক্রান্ত, কারও জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে ইত্যাদি নানা অজুহাত দেখিয়েছেন বলে তিনি জানান।

Advertisement

ডা. আয়েশা বলেন, গত কয়েকদিন যে হারে প্রথম ডোজের টিকা নিতে লোকজন আসছেন তাতে ২৬ ফেব্রুয়ারি এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার মানুষই থাকবে না।

দেশে গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সরকারি উদ্যোগে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্ম, মডার্না, সিনোভ্যাক ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে টিকা নেওয়ার সংখ্যা বেড়ে ১৯ কোটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৭০ জন, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার সংখ্যা ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার দুইজন ও বুস্টার ডোজ নেওয়ার সংখ্যা ৩৪ লাখ ৪২ হাজার ৮২৫ জন।

এমআইএইচ/এমআরএম/জেআইএম