খেলাধুলা

আফগানদের সেই ব্যাটিংয়ের জবাব দিলেন আফিফ-মিরাজ!

অবিশ্বাস্য, অবিস্মরনীয়, দুর্দান্ত, অতি মানবীয়, বিস্ময়কর- যত বিশেষণেই বিশেষায়িত করা হোক না কেন, সবই কম হয়ে যাবে। আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আফিফ হোসেন ধ্রুব আর মেহেদি হাসান মিরাজ যে ব্যাটিংটা করলেন, যত প্রশংসাই করা হোক না কেন, কম হয়ে যাবে।

Advertisement

২১৬ রান করতে গিয়ে ৪৫ রানে ৬ উইকেট নেই। দলের সেরা ৫ ব্যাটার তামিম, লিটন, সাকিব, মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বি সাজঘরে। সেখান থেকে জয় প্রায় অসম্ভব। অথচ এই অবস্থানে দাঁড়িযে আফিফ হোসেন ধ্রুব আর মেহেদী হাসান মিরাজ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।

সপ্তম উইকেটে রেকর্ড ১৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি! ভাবা যায়! বিস্ময়কর একটি বিষয়। দুজনই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা ব্যাটিং করেছেন। নিজেদের স্নায়ুকে ঠিক রেখে চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়েননি। ‘চার পান্ডব এবং মূল ব্যাটিং স্তম্ভ- তামিম, সাকিব, মুশফিক আর রিয়াদ ভাই সবাই আউট হয়ে গেছেন। আমরা মনে হয় আজ আর পারবো না। আজ বুঝি হারের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে’, - এমন কোন নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসেনি আাফিফ আর মিরাজের।

কোনোরকম দুশ্চিন্তা গ্রাস করতে পারেনি তাদের। কোন ঝুকিপূর্ণ শটস খেলেননি দুজনার কেউই। ‘ইম্প্রোভাইজ’ করার প্রবণতাও ছিল না বললেই চলে। ঝুকিপূর্ণ শট খেলা থেকে বিরত থেকে ঠান্ডা মাথায় খেলে গেছেন। বোঝাই গেছে লক্ষ্য ছিল যত লম্বা সময় উইকেটে থেকে যত দীর্ঘ পার্টনারশিপ গড়া যায়। আর সে কাজে তারা শতভাগ সফল।

Advertisement

চাপের মুখে ভেঙ্গে না পড়ে, খেই না হারিয়ে আফগান বোলারদের বিপক্ষে ম্যাচ বের করা সম্ভব, এই সাহসটা ছিল বুকে। তারই ফলশ্রুতিতে আফিফ ১১৫ বলে ৯৩ এবং মিরাজ ১২০ বলে ৮১ রানে নট আউট থেকে দিনের ৭ বল আগে ম্যাচ জিতিয়ে রাজ্যজয়ী বীরের বেশে হাসিমুখে ফিরেছেন ড্রেসিং রুমে।

অনেকেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজকের এ জয়ের সঙ্গে ৫ বছর আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জুটির অবিস্মরণীয় ম্যাচ জেতানো ব্যাটিংয়ের মিল খুঁজে পাচ্ছেন।

ইতিহাস জানাচ্ছে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফে হওয়া সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৬ রান করতে গিয়ে আজকের মতই ধুঁকছিল টাইগাররা। মাত্র ৩৩ রানে পতন ঘটেছিল ৪ উইকেটের।

ঠিক তেমন ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়ে সাহসী নাবিকের মত সব দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে হিমালয় সাঁন দৃঢ়তায় দলকে জিতিয়েছিলেন সাকিব আর রিয়াদ। দু’জনের জোড়া শতকে গড়ে উঠেছিল ২২৪ রানের বিশাল জুটি। সাকিব ১১৫ বলে ১১৪ রানে আউট হলেও রিয়াদ ১০৭ বলে ১০২ রানে নট আউট থেকে দল জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

Advertisement

এছাড়া কেউ কেউ আাফিফ ও মিরাজের জুটির অবিস্মরণীয় ম্যাচ জেতানো জুটির সঙ্গে চারবছর আগে আবুধাবিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর ইমরুল কায়েস জুটির মিল খোঁজারও চেষ্টা করছেন। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হওয়া সে ম্যাচেও বাংলাদেশ প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৭ রানে ইনিংসের অর্ধেক খুইয়ে বসেছিল।

সেখান থেকে ইমরুল কায়েস (৮৯ বলে ৭২*) আর রিয়াদ (৮১ বলে ৭৪) ১২৬ রানের জুটি গড়ে দলকে অনেকদুর এগিয়ে দেন। তাদের হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত ২৫৯ রানের লড়িয়ে পুঁজি পায় বাংলাদেশ। পরে ৩ রানের জয়ও ধরা দেয় হাতে।

এ দুটি রেকর্ড পার্টনারশিপের সঙ্গে আজকের মিরাজ ও আফিফের ১৭৪ রানও সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি। তাই এটা নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি।

কিন্তু এ লিখার উপজীব্য মোটেও সেটা নয়। আসল উপজীব্য হলো, আট বছর আগে দুই আফগান- আসগর আর শামিউল্লাহ শিনওয়ারির অতি মানবীয় ব্যাটিংয়ের মধুর প্রতিশোধ। আফিফ হোসেন ধ্রুব আর মেহেদি মিরাজরা হয়তো সে ম্যাচের কথা জানেনই না।

বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের ক’জনারই বা সে ম্যাচের কথা স্মৃতিতে আছে? কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো আজকের ম্যাচের মতই ছিল সে ম্যাচেরও প্রেক্ষাপট। পার্থক্য একটাই- আজ বাংলাদেশ আফিফ আর মিরাজের হাত ধরে জিতেছে রান তাড়া করে। আর ২০১৪ সালের ১ মার্চ নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে আফগানরা বাংলাদেশকে হারিয়েছিল আগে ব্যাট করে।

ওই ম্যাচে এক পর্যায়ে ৯০ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল আফগানিস্তান। কেউ কল্পনায়ও আনেনি যে ওই চাপের মুখে আফগানরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে হাল ধরেন আসগর আফগান (১০৩ বলে ৯০ অপরাজিত) আর শামিউল্লাহ শিনওয়ারি (৬৯ বলে ৮১)।

বাংলাদেশের বোলিং ও ফিল্ডিংকে হতাশায় ডুবিয়ে তারা ষষ্ঠ উইকেটে ১৬৪ রানের বিরাট জুটি গড়লে আফগানরা পায় ২৫৪ রানের লড়াকু পুঁজি। যে রান আর টপকাতে পারেনি টাইগাররা। হেরে যায় ৩২ রানে।

আজ দীর্ঘ আট বছর পর মিরাজ আর আফিফ যেন সেই প্রতিশোধটাই তুলে নিলেন। বোর্ডে ৫০ রান যোগ হওয়ার আগে ৬ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার আউট হওয়া পরও এ দুই তরুণ অসাধ্য সাধন করে দেশের ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় জয় উপহার দিলেন।

এআরবি/আইএইচএস