করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় প্রায় দেড় বছর পর খুলে দেওয়া হয়। এরপর আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এবার আঘাত হানে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন। এ কারণে আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধের এই সময়ে বেচাকেনাও কম ছিল রাজধানীর নীলক্ষেত বই মার্কেটে। দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা লোকসান গুণে আসছিলেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় তারা এতদিনের লোকসান পুষিয়ে লাভের আশা করছিলেন। হঠাৎ আগুনে ঝলসে গেলো সহায়-সম্বল আর লাভের স্বপ্ন।
Advertisement
গতকাল (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে নীলক্ষেতের বই মার্কেটের হযরত শাহজালাল অংশে আগুন লাগে। প্রায় দুই ঘণ্টার আগুনে ভস্মীভূত হয় বইয়ের দোকানগুলো। আগুন লাগা বইয়ের দোকানের পাশের দোকানগুলো ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই বইয়ের মার্কেটে সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল রাতের আগুনে হযরত শাহজালাল মার্কেট অংশের প্রায় ২৫টি দোকান আগুনে পুড়ে যায়। ইসলামিয়া মার্কেট ও বাবুপুরা মার্কেটেরও কিছু দোকানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসব দোকানের আগুন নেভাতে গিয়ে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের আরও ১৫-২০টি দোকান। ফ্রেন্ডস বুক কর্নার ও পাশের প্রগ্রেসিভ বুক কর্নার থেকে তখনো চাপা আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে বইগুলো বের করে দোকান পরিষ্কার করছেন কেউ কেউ। কেউ আবার দোকানের মধ্যে কোনো ভালো বই পাওয়া যায় কি না তা খুঁজতে থাকেন। আগুন লাগার পর কিছু দোকানি তাদের বই সরিয়ে নেন। তবে দোকান পুড়ে যাওয়ায় নতুন করে বই সাজাতে পারছেন না তারা।
দোকানিরা জানান, আগুন লাগার কারণে ৫০টির মতো দোকানে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক দোকানের ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত।
Advertisement
খাজা বুক কর্নারের বিক্রয় সহযোগী মো. সবেদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, আগুন লাগার সময় আমরা দোকানে ছিলাম। আগুন থেকে বাঁচতে আমরা দোকান থেকে বেরিয়ে যাই। পাঁচ টাকার বইও আমরা সরিয়ে নিতে পারিনি। করোনায় সাড়ে সাত লাখ টাকা লস হয়েছে আমাদের মালিকের। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। ভেবেছিলাম এখন আর লস হবে না, অন্তত কিছু লাভের মুখ দেখতে পাবো। এই সর্বনাশা আগুন আমাদের সব নিয়ে গেলো।
তিনি বলেন, কাল রাতে মালিকের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে বাসায় গেছি। বাবুবাজারের একটি বাসায় মেস করে থাকি। রাতে খাইনি। আজ সকালে গাড়িভাড়া দিয়ে আসছি। দুপুর পর্যন্ত কিছু খাওয়া হয়নি। মালিকও কিছু বলেননি। আমিও বলতে পারছি না। বেতনও বাকি আছে।
গীতাঞ্জলি বুক হাউসের মালিক রাহুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ১৮ বছর ধরে দোকান করছি এখানে। আমার সব বিনিয়োগ এখানে। ২০ থেকে ২৪ লাখ টাকার মালামাল ছিল দোকানে। সব পুড়ে গেছে। এখন দোকান যে ঠিক করবো সেই টাকাও নেই। তবে এখনো যে মনোবলটা আছে, সরকার যদি সহযোগিতা করে সেটা থাকবে। না করলে সেটাও শেষ হয়ে যাবে।
হযরত শাহজালাল মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন রাজু বলেন, আগুনে এ মার্কেটের প্রায় ৩০টি দোকান পুড়ে গেছে। পানিতেও অনেক দোকানের বই নষ্ট হয়ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের হিসাবে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনা এখন পর্যন্ত আমরা দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছি। কারো দোষ দেখিনি।
Advertisement
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে ওই মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। এক ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আল সাদী ভূঁইয়া/ইএ/জিকেএস