বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি ও তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানসহ দুজনের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এবার সেই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
Advertisement
মামলাটির অপর আসামি হলেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ডা. মুরাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ ওরফে নাহিদ হেলাল।
আবেদনটি হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মাদ আব্দুল হাফিজ ও বিচারপতি মুহাম্মাদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান আবেদনটি ফাইল করেন।
Advertisement
মামলার বাদী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ওমর ফারুক ফারুকীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবী রফিকুল ইসলাম তালুকদার রাজা এ আবেদন করেন।
খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ এনে মুরাদ হাসান ও মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা নেওয়ার আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ওমর ফারুক ফারুকী। আদালত বাদী ওমর ফারুক ফারুকীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ওইদিনই ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বাদীর আবেদনটি খারিজের আদেশ দেন।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী দুজনের বিরুদ্ধে নালিশি অভিযোগ করেছেন। যে বিতর্কিত পোস্ট ঘিরে মামলার আবেদন, তা বাদীর বিরুদ্ধে নয়। আবার বিতর্কিত পোস্ট দ্বারা বাদী নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত নন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ফেসবুক লাইভে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়া পরিবার এবং ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নারীবিদ্বেষী এবং যে কোনো নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর ভাষা’ ব্যবহার করেছেন।
Advertisement
এতে বলা হয়েছে, ডা. মুরাদ হাসানের প্রদেয় এবং মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ কর্তৃক ধারণকৃত সাক্ষাৎকারটি পরবর্তীতে মুরাদ হাসান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচার ও প্রকাশ করে জিয়া পরিবার তথা জিয়া পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং সর্বোপরি নারী সমাজের প্রতি অবমাননাকর, অপমানজনক এবং আইনত শাস্তিযোগ্য হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অত্র মামলাটি দায়ের করা হলো।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ এবং প্রচারের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও মানহানিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারার অপরাধ করেছেন বলে এই মামলা দায়ের করা হয়।
ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ চাওয়া হয়েছিল মামলার আবেদনে।
রাজনৈতিক ব্যক্তি, নারীজাতি ও সংবিধান নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং সর্বশেষ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে আপত্তিকর অডিও ভাইরাল হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে গত ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন ডা. মুরাদ হাসান। ওইদিনই জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ তাকে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। ওই রাতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুরাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।
পরদিন ৮ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় ডা. মুরাদ হাসানকে।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ।
এরপরই মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়। সেখানে মাহির সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে শোনা যায় তাকে। এমনকি মাহিকে ধর্ষণ এবং উঠিয়ে আনার হুমকিও দেন। সেই অডিও ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মুরাদ হাসান।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম