পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা একজন ক্রিকেটারের কাছে ৫০ বছরেরও বেশি যন্ত্রণার সমান। সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ এবং মোহাম্মদ আমিরের জীবন থেকে সেই যন্ত্রণাময় ৫টি বছর কেটে গেছে গত বছর সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ। পিসিবির অনুমতি পেয়ে এক বছর আগেই ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ আমির। এক বছর পর জাতীয় দলের জার্সি পরার অপেক্ষায় রয়েছেন বাঁ-হাতি এ পেসারও। তবে, বাকি দু’জন সালমান বাট এবং মোহাম্মদ আসিফ এখনও ঘরোয়া প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটই খেলার অনুমতি পাননি।সেপ্টেম্বরে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পূনর্বাসন প্রকিয়ার মধ্যে রয়েছেন সাবেক ওপেনার সালমান বাট এবং পেসার আসিফ। আগামী মাসেই পূনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন তারা দু’জন। তার আগেই অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে গেছেন এই দুই ক্রিকেটার। পাকিস্তানের ন্যাশনাল ওয়ানডে কাপে ওয়াপদার হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলে ফেললেন সালমান বাট এবং আসিফ।শুধু খেলাই নয়, মাঠে নেমেই বিস্ময় সৃষ্টি করলেন নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পাওয়া এই দু’ক্রিকেটার। ব্যাট করতে নেমে ৫ বছরের ক্ষোভ যেন একসাথে ঝাড়লেন সালমান বাট। পাকিস্তান ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (ওয়াপদা) হয়ে খেলতে নেমেছিলেন ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্ট্রাল ট্রাইভ্যাল এরিয়ার বিপক্ষে। ওয়াপদার হয়ে ইনিংস ওপেন করতে নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসলেন সালমান বাট। সেকি অসাধারণ সেঞ্চুরি এটি। ১৩৫ রানে গিয়ে তবে থামলেন ৩১ বছর বয়সী বাট। ১৪৩ বলে খেলা ইনিংসটি ছিল ১৪টি বাউন্ডারিতে সাজানো।সালমান বাটের সেঞ্চুরির কল্যানে ওয়াপদার স্কোর ৭ উইকেটে গিয়ে দাঁড়াল ২৭৭ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টারের ব্যাটসম্যানরা পড়লো মোহাম্মদ আসিফের তোপের মুখে। ৩৩ বছর বয়সী ডান হাতি এ পেসার যেন পাঁচ বছর আগের স্মৃতিই ফিরিয়ে আনলেন বল হাতে। ৬ ওভার বল করে ২২ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। এমন কামব্যাক হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি সালমান বাট এবং মোহাম্মদ আসিফ। যদিও ওয়াপদার বোলার খালিদ ওসমানই সবচেয়ে বেশি ভূগিয়েছেন অ্যাডিমিনিস্ট্রাল ট্রাইভ্যাল ব্যাটসম্যানদের। খালিদ নিয়েছেন ৪ উইকেট। আর অ্যাডমিনিস্ট্রাল ট্রাইভাল ৩৪.৪ ওভারে অলআউট মাত্র ১৩৬ রান করে। পূনর্বাসন প্রক্রিয়া থাকলেও কোন দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সালমান বাট এবং মোহাম্মদ আসিফ। যে কারণে ওয়াপদা একসঙ্গেই দু’জনকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। নন-এক্সিকিউটিভ হিসেবে ১৭তম গ্রেডে ওয়াপদার সঙ্গে যুক্ত হলেন তারা দু’জন এবং খেললেন ন্যাশনাল ওয়ানডে কাপে।ম্যাচের পর গর্বিত সালমান বাট বলেন, ‘এটা হলো আমার নতুন শুরু। আশা করি আমার নিজের জন্য নতুন যুগেরও সূচনা করবে এই ইনিংসটা। আমি চেষ্টা করবো, এই পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে। যদি আরও বেশি করে ম্যাচ খেলতে পারি, তবে আশা করি আরও অনেক ভালো সুযোগ পাবো এবং ধীরে ধীরে উন্নতি করতে পারবো। আশা করি আমার পরিবার, বন্ধু, কোচ এবং ওয়াপদা- সবাই আমাকে সমর্থণ ও সহযোগিতা করবেন।’কিভাবে নিজেকে ক্রিকেটে ধরে রাখতে পারলেন? এ প্রশ্নের জবাবে বাট বলেন, ‘এই কয়টা বছর আমি মাঠে খেলতে না পারলেও ক্রিকেট থেকে তো বাইরে যাইনি। ক্রিকেটেই ফোকাস ছিলাম। নিজেকে ধরে রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। রেজিস্ট্রার্ড ক্লাব কিংবা সংস্থার হয়ে যখন আমি অনুশীলন করতে পারছিলাম না, তখন আনরেজিস্টার্ড সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়েছি। যার ফল, আজকের এই পরিশ্রম। আমি কোচ ওয়াকার ইউনুস এবং অন্য সিনিয়রদের ধন্যবাদ জানাই যে, তারা তাদের চিন্তা এবং কথা-বার্তায় আমাদের নিয়ে ইতিবাচক। এটাই আমাকে অনেক বেশি সাহস যুগিয়েছে।’জাতীয় দলে ফেরার পথ কিন্তু তাতেও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অনেক বাধা পেরুতে হবে। অনেক বিরোধিতার মুখোমুখি হবেন বাটরা। সেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবতে রাজি নন বাট। তিনি বলেন, ‘আমি এসব নিয়ে চিন্তা করি না। কে বিরোধিতা করলো আর কে পক্ষে থাকলো। এখানে আমার বিরোধী অনেক মত আসবে, বিরোধিতা আসবে। এটাই স্বাভাবিক। আমি এসব মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। নিজের কাজ করে যেতে চাই। আশাকরি, ইনশাআল্লাহ- এক সময় নিজের জায়গাটা পেয়ে যাবোই।’মোহাম্মদ আমিরের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে বাট বলেন, ‘আমিরের ফেরার কারণে পাকিস্তানের বোলিং অনেক শক্তিশালি হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। পাকিস্তানের বোলিং বিভাগেও প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে। এ কারণে দলের জন্যও বিষয়টা অনেক বেশি সুবিধাজনক হবে। আমি আমিরের সাফল্য প্রত্যাশা করি।’আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement