দেশজুড়ে

‘স্মৃতি’ নেই সালাম স্মৃতি জাদুঘরে, গ্রন্থাগারে বই সংকট

ভাষাশহীদ আবদুস সালাম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের অন্যমত। জাতির এই বীর সন্তানের গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষ্মণপুর (বর্তমানে সালাম নগর) গ্রামে। বাড়ির অদূরে ২০০৮ সালে তার স্মৃতি রক্ষায় সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। তবে স্মৃতি জাদুঘর’ নামেই। সুন্দর এ স্থাপনাটির ভিতরে সালামের কোনো স্মৃতি সংরক্ষিত হয়নি এখনো। লাইব্রেরিটির অবস্থাও নাজুক। নেই পর্যাপ্ত বই। তাই দর্শনার্থী ও পাঠক কম। 

Advertisement

২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে সরেজমিনে ভাষাশহীদ সালাম স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিন আগেই ভবনটিকে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সেখানে কয়েকজন পাঠক বিভিন্ন রকমের বই পড়ছেন। পুরো জাদুঘর ঘুরেও দু’একটি ছবি ছাড়া কোথাও সালামের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো নমুনা দেখা গেলো না।

পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ান মো. লুৎফর রহমান বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, পাঠাগারে সাড়ে তিন হাজার বই রয়েছে। প্রায় সবই পুরাতন। বছরজুড়ে পাঠাগারটিতে পাঠকের আনাগোনা কম থাকে। পাশের রাস্তাটি সংস্কার হওয়ায় বর্তমানে পাঠকের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও নতুন বই না থাকায় পাঠক এখানে আসতে আগ্রহ পাচ্ছেন না।তিনি আরও জানান, পাঠাগারে বর্তমানে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বই রয়েছে। তবে ভাষাশহীদ সালামের ওপর বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইটি এখনো সরবরাহ করা হয়নি।ভাষাশহীদ আবদুস সালামের ছোট ভাই আবদুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বাড়ির কাছে স্থাপিত গ্রন্থাগারটি প্রাণচাঞ্চল্য রাখতে পাশের স্কুলটিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা গেলে পাঠক সৃষ্টি হবে। তাছাড়া এটিকে স্মৃতি জাদুঘর নাম দেওয়া হলেও মূলত এখানে সালামের কোনো স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি।

ভাষাশহীদ সালাম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, শহীদ সালাম বরকতদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা এখনই দেশে সর্বস্তরে চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। 

Advertisement

সালাম নগরে জনসমাগম নিশ্চিত করার জন্য সেখানে একটি পার্ক অথবা বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান সালাম পরিষদের এ নেতা। এ বিষয়ে ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ভাষাশহীদ সালামের গ্রামের সঙ্গে আমাদের আগামী প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়দের দাবির সম্ভাব্যতা যাচাই করে সেখানে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা যায় কি না তা নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভাষাশহীদ আবদুস সালাম। বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন তিনি। সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থেকে ৭ এপ্রিল মারা যান। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিবার ও স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পর ২০১৭ সালে আজিমপুর কবরস্থানে আবদুস সালামের কবর শনাক্ত করা হয়। 

ভাষাশহীদ আবদুস সালামকে স্মরণীয় করে রাখতে তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মণপুরের নাম পরিবর্তন করে সেটিকে সালাম নগর করা হয়েছে। সালামের বাড়ির সামনে লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০০০ সালে ফেনীতে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় ভাষাশহীদ সালাম। ২০০৭ সালে দাগনভূঞা উপজেলা অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয় ভাষাশহীদ সালাম মিলনায়তন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের নাম করা হয়েছে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম। ২০১৭ সালে সালামের নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাষাশহীদ সালাম মেমোরিয়াল কলেজ। এছাড়া সালামকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অন্যতম যুদ্ধ জাহাজের নাম করণ করা হয় বানৌজা সালাম। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০০০ সালে ভাষাশহীদ সালামকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।

এমআরআর/এএ/জিকেএস

Advertisement