বলিউডের সবচেয়ে মোটা নায়িকা হিসেবে একসময় পরিচিত ছিলেন তিনি। মোটা হয়েও বলিউড সিনেমায় অভিনয় করে সুখ্যাতি অর্জন করেন এই নায়িকা। তাও আবার সেটি ছিলো তার জীবনের প্রথম সিনেমা।
Advertisement
তবে অভিনয়ে যতই পারদর্শী হন না কেন, বলিউডের জিরো ফিগারের নায়িকাদের কাছে তিনি ছিলেন জিরো! অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেক সমালোচনারও শিকার হন তিনি।
তবে সবার চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ওজন কমানো অসম্ভব কিছু নয়। কয়েক মাসের ব্যবধানেই তিনি ৩২ কেজি ওজন ঝরিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।
বলছি, কম সময়েই বলিউডে সুখ্যাতি অর্জনকারী নায়িকা ভূমি পেডনেকারের কথা। ‘দম লাগা কে হাইশা’ সিনেমায় যারা ভূমিকে দেখেছিলেন, তাদের অনেকেই হঠাৎ করে দেখলে এখন চিনতে পারেন না নায়িকাকে। কারণ তার ট্রান্সফরমেশন সত্যিই অকল্পনীয়।
Advertisement
৩২ কেজি ওজন কমানোর তার পক্ষে মোটেও সহজ বিষয় ছিল না। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ৮৯ থেকে ৫৭ কেজিতে পৌঁছান ভূমি। অনেকেই জানতে চান কীভাবে নায়িকা এতোটা ওজন ঝরিয়েছেন?
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ভূমি পেডনেকারের ওজন কমানোর ডায়েট ও ওয়ার্কআউট সম্পর্কে। যা তিনি নিজেই শেয়ার করেছেন ভক্তদের সঙ্গে-
ভূমি জানান, ‘খাবার আমাকে খুশি করে। এজন্য আমার যা যা খেতে ইচ্ছে করতো তা-ই খেতাম। আমার কাছে ঘি, মাখন ও বাটারমিল্ক ছিল। তবে মাত্র একমাত্র খাবার যেটি আমি ত্যাগ করেছিলাম, তা হলো চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার। পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণও নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
ভূমি আরও জানান, ‘আমি নিয়মিত ডায়েট অনুসরণ ও শরীরচর্চা করেছি। প্রতি পাঁচ দিন অন্তর আমি নিজেকে খুশি করতে একটি চিট মিল গ্রহণ করতাম।’
Advertisement
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ভূমি ওজন কমাতে কখনো ডায়েটেশিয়ান বা পুষ্টিবিদের কাছে যাননি। মায়ের উৎসাহ ও নিজের প্রচেষ্টায় ৩২ কেজি ওজন কমাতে সফল হন তিনি।
এ বিষয়ে নায়িকা বলেন, ‘শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি, বাড়িতে রান্না করা সাধারণ খাবার ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।’
ভূমি তার সামাজিক জীবন ও তার ওজন কমানোর লাইফস্টাইল সম্পর্কে নিয়মিত ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। নিয়মিত ডায়েট ও লাইফস্টাইল টিপসও দেন সেখানে। যা দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন।
ভূমি জানান, ‘চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার ছেড়ে দেওয়া আমার জন্য খুবই কঠিন ছিলো। এটি আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি। চিনি সাদা হোক বা বাদামি, এটি ক্যালোরি ছাড়া আর কিছুই নয়।’
‘মিষ্টিজাতীয় খাবার হজম প্রক্রিয়াতেও বাঁধা সৃষ্টি করে। এমনকি শরীরের প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থকে নষ্ট করে দেয়। তার চেয়ে বেছে নিতে পারেন মধু বা স্টিভিয়া। এগুলো প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা সাশ্রয়ী মূল্যের। আবার শরীরের জন্যও উপকারী।’
মধুর উপকারিতা সম্পর্কে ভূমি বলেন, ‘মধু হজমের জন্য ভালো ও এতে জিংক, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি৬ থাকে। এটি লেবুর সরবত, ওটস কিংবা দুধেও যোগ করেতে পারেন। সালাদের ড্রেসিংয়েও মেশাতে পারেন। মধু বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন।’
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘অনুগ্রহ করে উচ্চ তাপমাত্রায় মধু ব্যবহার করবেন না। এতে মধু তার স্বাদ ও পুষ্টি হারাবে।’
ভূমি পেডনেকর প্রতিদিন ৭ লিটার পানি পান করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ডিটক্স ওয়াটার পান করি। এটি সত্যিই অনেক উপকারী। শরীরকে পরিষ্কার করতে এই পানীয়ের জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়াও বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।’
‘এতে থাকা পুদিনা পাতা হজমে সহায়ক। অন্যদিকে শসা ত্বকের জন্য ভালো, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে ও এতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য।’
জেনে নিন ভূমি পেডনেকার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কী কী রাখেন খাদ্যতালিকায়-
সকালের নাস্তা
ভূমি তার ইনস্টাগ্রামে সকালের নাস্তা সম্পর্কিত পোস্টে বলেন, ‘আমি এক গ্লাস উষ্ণ বা ডিটক্স পানীয় দিয়ে সকাল শুরু করি। এর আধা ঘণ্টা পর স্কিমড মিল্কের সঙ্গে ফ্ল্যাক্স বা সূর্যমুখী বীজ দিয়ে মুসলি খাই।’
‘তারপরে ২টি ডিমের সাদা অমলেট ও একটি ফল (পেঁপে বা আপেল) খাই। তার কিছুক্ষণ পর একটি রুটি খাই, যেটি গ্রহণ করি জিম করার এক ঘণ্টা আগে।’
* দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবার সম্পর্কে ভূমি বলেন, ‘ঘরে রান্না করা স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন-রুটি, সবজি ও ডাল খাওয়া হয় দুপুরে। তবে বাজরা বা জোয়ারের আটা দিয়ে তৈরি রুটি খাই আমি।’
‘এটি গমের আটার চেয়েও বেশি উপকারী। রুটির উপরে সামান্য সাদা মাখন মিশিয়ে না নিলে আমার মুখে রুচে না।’ এরপর ঘরে তৈরি দই বা বাটারমিল্ক খান তিনি।
এ ছাড়াও তার খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন সময় থাকে, গ্রিলড চিকেন, ব্রাউন ব্রেড ভেজিটেবল ও গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ। সবুজ চাটনি বা সামান্য জলপাই তেল ব্যবহার করে এসব তৈরি করা হয়।
সন্ধ্যার খাবার
স্ন্যাকিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার অর্ধেক পেঁপে বা একটি আপেল/নাশপাতি/পেয়ারা খাই। এক ঘণ্টা বা তার পরে কয়েকটি বাদাম বা আখরোটসহ এক কাপ গ্রিন টি খাই।’
* রাতের খাবার
ভূমি তার রাতের খাবার হালকা রাখেন। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক বাটি সবুজ সালাদ খাই আমি। যেখানে আপেলসহ বিভিন্ন ফল, শসা, গাজর, আখরোট, অলিভ অয়েল, ভিনেগার, সামান্য সরিষা বাটা, গোলমরিচ ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করা হয়।’
রাতের খাবারকে মজাদার করতে ভূমি মাঝে মাঝে গ্রিলড চিকেন বা ফেটানো পনির খান। তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার মধ্যেই ডিনার সম্পন্ন করি আমি। গ্রিলড ফিশ বা চিকেন তৈরির স্বাস্থ্যকর রেসিপি আপনি ইন্টারনেটেই পেয়ে যাবেন।’
ভূমির ওয়ার্কআউট রুটিন
সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কার্ডিও ও দুদিন ওজন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্যালোরি বার্ন করেন তিনি। ভূমি বলেন, ‘আমি এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারি না। এজন্য বারবার হাঁটাহাঁটি করি। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা বা অল্প দূরত্বে হেঁটে যাওয়া এই অভ্যাসগুলোই আপনাকে স্লিম করবে।’
একটি সাক্ষাৎকারে ওজন কমানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ভূমি বলেন, ‘প্রথমেই নিজের শরীর নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। স্ব-গ্রহণযোগ্যতা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই হলো ভালো বোধ করার কৌশল।’
‘ওজন দিয়ে অন্যদের বিচার করবেন না। আপনার বোন, বন্ধু কিংবা মাকে ওজন কমানোর কথা বারবার বলা বন্ধ করুন। এটি মানসিকভাবে অন্যকে অসুস্থ করে তোলে।’
ভূমি সবার জন্যই পরামর্শ দেন, ‘ধীরে ধীরে জীবনধারা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। কিছু সময়ের মধ্যেই পার্থক্য দেখতে পাবেন।’
সূত্র: স্টাইলক্রেজ
জেএমএস/জেআইএম