নামাজের শেষ বৈঠকে আল্লাহর কাছে ৪টি বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে মানুষের বিনয়, অভাব, অধীনতা এবং দাসত্ব প্রকাশ করা হয়েছে। এটি সব নামাজির জন্য মোস্তাহাব আমল। সৃষ্টির শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যত ফেতনার সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে; তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় ফেতনা থেকে মুক্তির আবেদনও রয়েছে এ দোয়ায়। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কেউ যখন (নামাজের) তাশাহহুদ পড়বে তখন এ বলে ৪টি জিনিস থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রার্থনা করবে। তাহলো-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِউচ্চারণ : ‘আল্লহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম ওয়া মিন আজাবিল কবরি ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই এবং মাসিহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম)
Advertisement
নামাজের শেষ বৈঠকে দরুদ পড়ার পরে এ দোয়াগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখিত দোয়াটি ছাড়া নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও অনেক মাসনুন দোয়া পড়তেন। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-১. হজরত আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে এ বলে দোয়া করতেন-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِউচ্চারণ : ‘আল্লহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কবরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল ওয়া আউজুবিকা মিন মাহইয়া ওয়াল ফিতনাতিল মামাতি; আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনালমাছামি ওয়াল মাগরামি।’অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে, মাসিহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! গুনাহ ও ঋণগ্রস্ততা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’একজন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি ঋণের ব্যাপারে (আল্লাহর কাছে) এত বেশি আশ্রয় চান কেন? জবাবে নবিজী বললেন, ‘মানুষ যখন ঋণে জড়িয়ে পড়ে, তখন কথা বললে মিথ্যা বলে আর ওয়াদা দিলে তা ভঙ্গ করে।’ (বুখারি)
২. হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘তিনি একদিন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, আমাকে নামাজে (সালামের আগে) পড়ার জন্য একটি দোয়া শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন এ দোয়াটি বলবে-اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাচিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইংদিকা ওয়ারহামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর-রাহীম।’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (বুখারি)
মুমিন মুসলমান মাত্রই কর্তব্য হচ্ছে, নামাজের শেষ বৈঠকে হাদিসে শেখানো চমৎকার বিনয়, অভাব, অধীনতা এবং দাসত্ব প্রকাশ সম্পর্কিত দোয়াটিসহ হাদিসের অন্যান্য দোয়াগুলো পড়া। যার গুরুত্ব মর্যাদা অনেক বেশি।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নামাজের শেষ বৈঠকে তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস