দেশজুড়ে

তাঁত কারখানা এখন গোয়ালঘর!

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে একসময় তাঁতের খটখট শব্দ আর শ্রমিকদের শ্রুতিমধুর গানে ঘুম ভাঙতো এখানকার প্রতিটি মানুষের। এ অঞ্চলের উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছাসহ বিভিন্ন পণ্যের সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু গত দুই বছর করোনা আর বন্যায় মন্দা ব্যবসায় ব্যাংকের চড়া ঋণের ভার বইতে না পেরে অর্ধেকেরও বেশি তাঁত কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। অনেকেই আবার তাঁত কারখানায় বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে করেছেন গবাদিপশু খামার।

তাঁত শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘ সময় করোনার পাশাপাশি বন্যা থাকায় তাঁতের বাজার মন্দা দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেক তাঁত কারখানার বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব কারখানা চালু আছে সেগুলোর উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি ঠিকমতো বিক্রি করতে না পারায় আয় কমে গেছে। ফলে এখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অপরদিকে তাঁত কারখানার মালিকরা জানান, তাঁতের সরঞ্জাম, রং ও সুতাসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় অনেক কারখানার মালিক তাঁত বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ কেউ তাঁত মেশিন বিক্রি করে সেই ঘরেই এখন গবাদিপশু পালন করছেন। আবার অনেকেই ঋণের কারণে তাদের কারখানা বন্ধ রেখে বেকার হয়ে দিন পার করছেন। সরকার তাদের এই দুর্দিনের বিষয়টি মাথায় রেখে যদি স্বল্প সুদে ঋণ দেয় এবং প্রয়োজনীয় রং ও সুতাসহ অন্য জিনিসের দাম স্থিতিশীল রাখে তাহলেই বন্ধ তাঁত কারখানা আবারো চালু হবে। তা না হলে শিগগির বেলকুচির এই ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

Advertisement

বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অন্তত ১০ জন মালিক তাঁত কারখানার পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম স্বল্প দামে বিক্রি করে সেখানে করেছেন গরুর খামার। খামারগুলোতে বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু পালন করা হচ্ছে।

তামাই গ্রামের হাজি শামীম শেখ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তাঁত ব্যবসায় জড়িত ছিলাম। কিন্তু তিন-চার বছর ধরে বাজার মন্দা হওয়ায় অনেক লোকসান হয়েছে। ফলে ব্যাংকঋণ নিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে গরুর খামার করেছি।’

বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম অ্যাসোসিয়েশনের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ রায় জাগো নিউজকে বলেন, তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কারখানার মালিকদের সরকারি স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে। তা না হলে আমাদের যে নিজস্ব ঐতিহ্য আছে তা আর ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। তাই তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ও এই শিল্পের প্রাণ ফেরাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এখানে এসেছিলেন। তাঁত শিল্পের এই দুরবস্থার কথা জেনেছেন। এছাড়া স্থানীয় তাঁত বোর্ডের অধীনে কারখানার কিছু মালিকের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। যেসব কারখানায় মালিক এই ঋণের আওতায় আসেননি তাদের এর আওতায় আনতে পারলে আবার এই অঞ্চলের তাঁতশিল্পে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।

Advertisement

এসজে/জেআইএম