জাগো জবস

১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান স্টেডফাস্টে

৬ বছরে পা রাখলো উদ্যোক্তা এবং ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনাকারী এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের জনপ্রিয় কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান স্টেডফাস্ট কুরিয়ার। ২০১৬ সালে মাত্র ৫ জন ডেলিভেরিম্যান নিয়ে শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন ১ হাজারের বেশি কর্মী।

Advertisement

উদ্যোক্তা জীবনের গল্প ও কুরিয়ার খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন স্টেডফাস্ট কুরিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা কে এম রিদওয়ানুল বারী জিওন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালিদ সাইফুল্লাহ্—

জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলুন—জিওন: স্টেডফাস্ট কুরিয়ার লিমিটেড একটি হোম ডেলিভারি সার্ভিস, যার মাধ্যমে প্রধানত ই-কমার্স ও এফ-কমার্স হোম ডেলিভারি করা হয়। আমরা হোম ডেলিভারির সাথে ক্যাশ অন্য ডেলিভারির সুবিধাও দিচ্ছি। যেখানে কাস্টমার আগে পণ্য হাতে পেয়ে বক্স খুলে চেক করার পর টাকা পরিশোধ করতে পারেন। ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বরে মাত্র ৫ জন ডেলিভেরিম্যান নিয়ে সেবা শুরু করি। এখন ১ হাজারেরও বেশি কর্মী আছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় শতাধিক অফিস আছে। প্রায় ৪৯২টি উপজেলায় হোম ডেলিভারি করছি। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার ডেলিভারি করার সক্ষমতা আছে। বর্তমানে আমাদের সক্রিয় মার্চেন্ট প্রায় ১৫ হাজার।

জাগো নিউজ: আপনার উদ্যোক্তা যাত্রার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই—জিওন: কুরিয়ার সার্ভিস শুরুর আগে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছিলাম। সেই অনলাইন শপ চালাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলাম, সেটি হলো হোম ডেলিভারি। বিশেষ করে ক্যাশ অন্য ডেলিভারি। অনলাইনে যারা কেনাকাটা করেন, তাদের প্রথম চাওয়াই হচ্ছে হোম ডেলিভারি। কিন্তু তখন এ ধরনের ডেলিভারি সার্ভিস তেমন ছিল না। যদিও দু’একটি ছিল কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ ছিল না। ঠিক সময়ে পিকআপ, ডেলিভারি, পেমেন্ট—তিনটি দিক বিবেচনায় তখন ই-কমার্স ফ্রেন্ডলি কুরিয়ার তেমন ছিল না। এ ছাড়া ছোট অনলাইন শপ যাদের ছিল, যাদের হয়তো দিনে ২-৩টি অর্ডার থাকতো। তাদের পার্সেল অনেক কুরিয়ারই নিতে চাইতো না। যখন এ ধরনের সমস্যাগুলো ফেস করছিলাম; তখনই মনে হলো যে আমার মতো অনেকেই এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। তাই নিজেই হোম ডেলিভারি সার্ভিস শুরু করার চেষ্টা করলাম। আমাদের ফোকাস ছিল ১টা পার্সেল হলেও বাসা থেকে পিকআপ করা। ঢাকা সিটিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হোম ডেলিভারি, ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধা এবং সপ্তাহে ৭ দিনই মার্চেন্টদের পেমেন্টের ব্যবস্থা করা।

Advertisement

জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা হলেন কেন?জিওন: সব সময় প্রথাগত পেশার বাইরে কিছু করার ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছা ছিল দেশের বেকার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করার। বলা যায়, নিজের সাথে আরও কিছু মানুষেরও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই উদ্যোক্তা হওয়া।

জাগো নিউজ: কুরিয়ার এবং লজিস্টিক সেক্টরে প্রধান চ্যালেঞ্জ কী কী?জিওন: কুরিয়ার এবং লজিস্টিক সেক্টরে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দক্ষ জনবল পাওয়া। দেশে যেহেতু ই-কমার্স সেক্টর নতুন, তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবল পাওয়া সম্ভব ছিল না। এ জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা একটি চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া সঠিক সময়ে ডেলিভারি ও মার্চেন্টদের চাহিদানুযায়ী সার্ভিস দেওয়ার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, সেটা তৈরি করাও একটি চ্যালেঞ্জ।

জাগো নিউজ: কুরিয়ার সেক্টর কতটা বড় এবং সম্ভবনাময়?জিওন: দেশে এখন প্রায় প্রতিদিন ২-৩ লাখ ডেলিভারি হচ্ছে। এটি প্রতিদিনই বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি বেড়ে কয়েকগুণ হবে। বাংলাদেশে লজিস্টিক সার্ভিসের বাজার প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা।

জাগো নিউজ: আপনার সফলতার পেছনের কারণ কী কী?জিওন: আমরা সব সময় চেষ্টা করি মার্চেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী সার্ভিস দিতে। তারা কী চান বা চান না, সেটা বোঝার চেষ্টা করি। সেগুলোর প্রতিফলন করার চেষ্টা করি। এ কারণেই হয়তো উদ্যোক্তাদের কাছে আমাদের চাহিদা বেশি।

Advertisement

জাগো নিউজ: গ্রাহক সন্তুষ্টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এর জন্য কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?জিওন: আসলে যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই গ্রাহক সন্তুষ্টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধরে রাখতে পারলেই ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব। আমরা গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। সবচেয়ে বড় যে কাজটি করি, সেটি হচ্ছে তাদের সাথে সব সময় সহজ এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখা। এ ছাড়া মার্চেন্ট ফ্রেন্ডলি রিফান্ড পলিসি, সাধ্যানুযায়ী সার্ভিস প্রাইজ, চাহিদানুযায়ী সার্ভিস এরিয়া প্রসার করা ইত্যাদি।

জাগো নিউজ: ভবিষ্যতে কুরিয়ার প্রযুক্তি কেমন হতে পারে? কুরিয়ারে কী কী প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আসবে?জিওন: কুরিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে সামনে অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করবে রোবটিক্স ও অটোমেশন। পার্সেল সর্টিং, রাউটিং, প্যাকেজিং—এ ধরনের কাজ খুব সহজেই রোবটিক্সের মাধ্যমে করা যাবে। এতে ভুলের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। পার্সেল ডেলিভারি সাকসেস রেটও অনেক বেড়ে যাবে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রোনের মাধ্যমে ডেলিভারি করা সম্ভব হবে। ইনডিভিজুয়াল পার্সেলে আরএফআইডি অথবা অন্য কোনো রিয়েলটাইম ট্র্যাকিং সিস্টেম করা যাবে। এতে মার্চেন্ট ও কাস্টমার নির্ভুলভাবে পার্সেলের তাৎক্ষণিক অবস্থান জানতে ও দেখতে পারবেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার, ডেটা অ্যানালাইসিস, মেশিন লার্নিং ইত্যাদির মাধ্যমে আরও সহজভাবে লজিস্টিক্স সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হবে।

জাগো নিউজ: অনেকেই বলেন, ই-কমার্সের পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বড় ভোগান্তির নাম। এর কারণ ও উত্তরণের উপায় কী?জিওন: আসলে ই-কমার্সের মূল কাজই হলো হোম ডেলিভারি। হোম ডেলিভারি ছাড়া ই-কমার্স অচলই বলা যায়। আর হোম ডেলিভারি করা সহজ কোনো কাজ নয়। একটি পার্সেল মার্চেন্ট থেকে কাস্টমারের কাছে পৌঁছতে অনেক ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। যেহেতু ই-কমার্স দেশে অনেকটা নতুন, সেহেতু এর ডেলিভারি সার্ভিসও নতুন। আর একটি নতুন ইন্ডাস্ট্রি একদিনে তৈরি হয় না বা শুরুতেই স্মুথ সার্ভিস দিতে পারে না। তারপরও ২০১৩-২০১৪ সালের চেয়ে হোম ডেলিভারি সেবা এখন অনেক উন্নত হয়েছে। দিনে দিনে এটি আরও ভালো হচ্ছে। আশা করি আগামী দিনগুলোয় এ ধরনের অভিযোগ আর থাকবে না।

জাগো নিউজ: আপনার কিছু ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতা বলুন—জিওন: আমার ভালো অভিজ্ঞতা হলো—কুরিয়ার সার্ভিস শুরুর পর অনেক বড় একটি টিম তৈরি করতে পেরেছি এবং টিমকে লিড দিচ্ছি। সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল—২০২০ সালের এপ্রিলে আমাদের সার্ভার ক্রাশ করা। সেটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময় ছিল। এ সময়ে মার্চেন্টরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটি একটি অভাবনীয় ব্যাপার ছিল। তাদের কাছ থেকে আমি আশাতীত সাপোর্ট পেয়েছি। তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। এ ছাড়া এ ধরনের সার্ভিস চালাতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন- পার্সেল চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য অনেক বেশি প্রয়োজন। তাদের থেকে আরও কার্যকরী সাপোর্ট পেলে এ ধরনের সমস্যা কমে যাবে বলে মনে করি।

জাগো নিউজ: কুরিয়ার নিয়ে সরকারের কী কী নীতিমালা তৈরি করা দরকার বলে মনে করেন?জিওন: মনে করি, ই-কমার্স ডেলিভারির জন্য কিছু বিষয়ে সরকারের ফেক্সিবিলিটি নিয়ে আসা উচিত। যেমন- ভ্যাট প্রত্যাহার, সহজ লাইসেন্সিং প্রসেস, ডাক মাশুল প্রত্যাহার ইত্যাদি। তাহলে এ ইন্ডাস্ট্রি আরও দ্রুত বড় হবে। অনেক বড় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কুরিয়ারের ওপর ভ্যাট এখন ১৫ শতাংশ, এটি কমিয়ে আনা প্রয়োজন।

এসইউ/এএসএম