যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর এতেই প্রভাব পড়েছে মার্কিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। সংকটময় পরিস্থিতিতে বা রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পূর্ণমাত্রার সংঘাতে দেশটির লাখ লাখ পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
Advertisement
আরএসএমের প্রধান অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুলাস বলেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করে তাহলে আমেরিকানদের জীবনযাত্রা কঠিন হবে।
জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া
রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি স্টেশনে প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ বর্তমানের চেয়েও বেড়ে যাবে তেল-গ্যাসের দাম। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের দাম ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কারণ যুদ্ধের ফলে ইউক্রেন রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে।
Advertisement
জ্বালানিতে রাশিয়া হচ্ছে পরাশক্তি। গত বছর দেশটি দৈনিক প্রায় এক কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দেশটির অবস্থান। তবে কানাডা ও ইরাক মিলে যা উৎপাদন করে তার থেকে বেশি করে মস্কো।
জেপি মরগান সতর্ক করে জানিয়েছে, যদি কোনোভাবে রাশিয়ান তেলের প্রবাহ সংকটের কারণে ব্যাহত হয়, তাহলে তেলের দাম সহজেই প্রতি ব্যারেল ১২০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। তাছাড়া রাশিয়ান তেল রপ্তানি যদি অর্ধেকে নেমে আসে তাহলে অপরিশোধিত তেল ব্যারেলপ্রতি ১৫০ ডলার হতে পারে।
মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এখন বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। দেশটিতে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেন সংকট এ সমস্যাকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। যদি তেলের দাম কোনোভাবে ব্যারেলপ্রতি ১১০ ডলার হয়, তাহলে দেশটির মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়াবে। যা বর্তমান সাত দশমিক পাঁচ শতাংশের চেয়ে বেশি।
Advertisement
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীর গতি
চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি আরও গভীর হলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ধীর গতি আসবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। দেখা দেবে চরম অনিশ্চয়তা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংকটের মধ্যে তেলে দাম যদি ব্যারেলপ্রতি ১১০ ডলার হয়, তাহলে মার্কিন জিডিপিও কমে যাবে। এটা কোনো নাটকীয় বিষয় হবে না, মূল্যস্ফীতির কারণেই এমন হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকান অর্থনীতি এখনো পুনরুদ্ধার হয়নি।
ঋণের খরচ বাড়া
যদি মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে উঠে যায়, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ পণ্যের মূল্য কমাতে যে সংগ্রাম করছে সে ব্যাপারে চাপের মধ্যে পড়বে। অন্যদিকে সুদের হার বাড়ানোর ফলে গ্রাহকদের ওপর ঋণের খরচ বাড়তে পারে।
সাইবার হামলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেন, সাইবার হামলার মাধ্যমে রাশিয়া সংঘাত বাড়াতে পারে। রাশিয়া যদি এ ধরনের কোনো হামলা যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের লক্ষ্য করে পরিচালিত করে তাহলে ওয়াশিংটন জবাব দিতে প্রস্তুত বলেও জানান বাইডেন।
এদিকে মহড়া শেষে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রাশিয়া কিছু সেনাকে ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করে। কিন্তু ন্যাটোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সংখ্যা আরও বাড়াচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারে কথা জানালেও এখন ন্যাটোর পক্ষ থেকে ভিন্ন তথ্য জানানো হচ্ছে।
ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্টের হামলার বিষয়ে এখনো সতর্ক অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর শঙ্কা এখনো রয়েছে। মস্কোর সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন।
এমএসএম/এএসএম