দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটারদের ভোট দিতে সংশয়

ঠাকুরগাঁওয়ে পৌরসভা নির্বাচনের স্থগিত কেন্দ্রের সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপিসহ সাধারণ ভোটাররা। পৌরসভায় স্থগিত কেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে বিএনপি প্রার্থীর লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার স্থগিত হওয়া তিনটি কেন্দ্রে ১২ জানুয়ারি নতুন করে ভোট হবে। কিন্তু এবারও ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

Advertisement

জানা গেছে, ওই দিন ৫নং ওয়ার্ডের সরকারি মহিলা কলেজ ও ১০নং ওয়ার্ডের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও গোবিন্দনগর সরকারি বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এই তিনটি কেন্দ্রে মোট ভোট রয়েছে  ৬ হাজার ৩৬১। এর মধ্যে ৫নং ওয়ার্ডের সরকারি মহিলা কলেজে শুধু পুরুষ ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এছাড়া ১০নং ওয়ার্ডের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও গোবিন্দনগর সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী পুরুষ উভয়েই তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন।গত ৩০ ডিসেম্বর এক কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে হামলা চালিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করে নেন। তারা কেন্দ্রের ব্যালট পেপারও ছিনিয়ে নিয়ে যান। হামলাকারীরা বেসরকারি টেলিভিশনের দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত ও গাড়ি ভাঙচুর করেন।একই ওয়ার্ডের গোবিন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একদল যুবক হামলা চালিয়ে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করেন ও ৬শ` ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি মহিলা কলেজ পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ভোটের হারের সঙ্গে অবশিষ্ট ব্যালটের পরিমাণের গরমিল পাওয়া যায়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আ ফ ম ফজলে রাব্বীর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন উল্লেখিত তিনটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী মঙ্গলবার পুনরায় ওই কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন হবে।নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী মির্জা ফয়সল আমীন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তহমিনা আখতার মোল্লা, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম সোলায়মান আলী সরকার ও মাহফুজুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার ২১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৮টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ফলাফলে মির্জা ফয়সাল আমীন ১৬ হাজার ৩২৯ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী তহমিনা আখতার মোল্লা পেয়েছেন ১১ হাজার ৬৫১ ভোট। আর এস এম সোলায়মান আলী সরকার ৪ হাজার ১১৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।এছাড়া মেয়র ছাড়াও এই ভোটে সাধারণ দুই কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের দুই কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন।তবে এই ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। রোববার পৌর এলাকার ৫ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা জনসংযোগে ব্যস্ত। দিনভর ঘুরে ঘুরে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। কিন্তু প্রার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, ভোটারদের মধ্যে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মনসুর আলী বলেন, তিনি ভোট দিতে যাবেন না। কারণ, ভোটকেন্দ্রে মারামারি হলে সমস্যায় পড়বেন। মারামারির আশঙ্কা কেন করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বরতো এলাকায় ভোট নিয়ে মারামারি হয়েছে। শুনছি, এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এজন্য ভয় পাচ্ছি।পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া এলাকার ভোটার সেতারা আক্তার বলেন, এর আগের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্রের কাছে গিয়ে জানতে পেরেছি কেন্দ্র দখলের কথা। এবারও আগের মতো হয় কি না, কে জানে? ১০ নং ওয়ার্ডের শ্রমিক আহসান হাবিব বলেন, ভোটের দিন খালি গণ্ডগোল হয়। আর গণ্ডগোলোত খালি সাধারণ মানুষ মার খায়। ভোটকেন্দ্রে যায়ে আগত আবস্থা দেখিমো, পরে ভোট দিমো।এ প্রসঙ্গে বিএনপির ফয়সল আমীন জাগো নিউজকে বলেন, নোংরাভাবে ফলাফল পাল্টে দেয়া না হলে আমিই জয়ী হবো। ধানের শীষের জয় ছিনিয়ে নিতে সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজন এ আশঙ্কার কথা ছড়াচ্ছেন। তবে আমরা ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করছি।অপরদিকে, আওয়ামী লীগের তহমিনা আখতার বলেন, ভোটের ব্যবধান যা-ই হোক, তিনটি কেন্দ্রের ভোটেই জয়ী হওয়াটা কঠিন কিছু না। যেভাবে জনগণের সমর্থন পাচ্ছি, তাতে আমি আশাবাদী।রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলে রাব্বী জাগো নিউজকে বলেন, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। যারা ঝামেলা করবেন, তারাই বিপদে পড়বেন।রবিউল এহ্সান রিপন/এমজেড/আরআইপি

Advertisement