জাতীয়

প্রদীপকে দেখেই ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। এ সময় আদালত চত্বরে প্রদীপকে দেখে অনেকেই ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করেন।

Advertisement

তবে তাদের কথায় কর্ণপাত না করে প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, আপনাদের জন্য, দেশের জন্য মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এরপরও কোনো অপরাধ না করে শাস্তি পেয়েছি।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত চত্বর থেকে প্রদীপ কুমার দাশকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য প্রদীপ কুমার দাশকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। তবে এদিন প্রদীপের আইনজীবী তার সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিতের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখেন। তবে এদিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদের আদালতে মামলার বাদী ও দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

Advertisement

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। গত ১৭ জানুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। তবে ওইদিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিন মামলার বাদী রিয়াজ উদ্দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি মামলার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও নথিপত্র আদালতে উপস্থাপন করেছেন। তবে হাইকোর্টে প্রদীপ কুমার দাশ এই মামলার অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে একটি আবেদন করেছিলেন। সেই সূত্র ধরে প্রদীপের সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিতের আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ জুলাই প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকা জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর আসামি প্রদীপের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এরপর ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য নোটিশ করা হলে একই বছরের জুন মাসে তারা সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। এরপর প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারা, ২৭ (১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি হয়।

Advertisement

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।

মামলাটির বিচার শেষে গত ৩১ জানুয়ারি মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। একই রায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলেন- প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব এবং টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

এছাড়া বাকি সাতজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। তারা হলেন- বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।

মিজানুর রহমান/কেএসআর/এএসএম