পরনে স্যুট, টাই চোখে সানগ্লাস, হাতে অ্যাপল আইপ্যাড পুরো দস্তুর এক সুদর্শন পুরুষ তিনি। কাঁচাপাকা চুল দাড়িতেও তার রূপ কমেনি এতটুকুও। বরং নজর কাড়ছেন হাজারো নারীর। বলছিলাম ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার বাসিন্দা ‘সুপার কুল’ মডেল মাম্মিক্কার কথা।
Advertisement
বয়স ৬০ পেরিয়েছে, তবুও পুরোদস্তুর কাজ করে চলেছেন মডেল হিসেবে। বিয়ের স্যুটের মডেল হিসেবে নেটদুনিয়ায় শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তিনি। তবে কেরলের কোঝিকোড়ের বাসিন্দা মাম্মিক্কার জীবন কিছুদিন আগেও এমন ছিল না। সাধারণ মানুষ হিসেবেই জীবনযাপন করছেন। বলা যায় অতিসাধারণ ছিল তার জীবন।
দিন এনে দিন খেয়ে পাড় হতো মাম্মিক্কার মাস, বছর। নিজ এলাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন। ভাগ্য বদল হলো স্থানীয় ফটোগ্রাফার শারিক ভায়ালিলের একটি ক্লিকেই। প্রতিদিন শার্ট আর লুঙ্গি পরেই তিনি কাজে বের হতেন। পরিশ্রম যতোই হোক মাম্মিক্কার মুখে হাসি লেগে থাকত সবসময়। সেই হাসি নজর এড়াতে পারেনি ফটোগ্রাফারের চোখকে।
তবে সে বেশ কিছুকাল আগের কথা। সে সময় ওই দিনমজুর বৃদ্ধের একটি ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন শরিক। তা নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল নেটদুনিয়ায়। শারিকও ভুলে গিয়েছিলেন সেই বৃদ্ধকে। তবে সম্প্রতি নিজের ওয়েডিং সংস্থার জন্য এক জন মডেলের প্রয়োজন হয়েছিল তার। তখন হঠাৎ করেই মাথায় আসে সেই দিনমজুর বৃদ্ধের কথা।
Advertisement
খুঁজে বের করেন মাম্মিক্কাকে। শারিককে মাম্মিকাকে এই রূপে আনতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। শুধু একটু মেকওভারের প্রয়োজন ছিল। কারণ আগেই তো মাম্মিক্কার সেই সুপ্ত প্রতিভা দেখে নিয়েছিলেন শারিক। হেয়ার কাট, রূপসজ্জা আর দামি পোশাক পরিয়ে দিতেই মাম্মিক হয়ে উঠলেন সুপার কুল মডেল। একদম পেশাদার মডেল হয়ে ক্যামেরার সামনে হাজির হলেন ৬০ বছরের 'ইয়াং ম্যান'।
মাম্মিক্কা মডেল হিসেবে প্রথম কাজ পেয়ে গেছেন এরই মধ্যে। স্থানীয় একটি স্যুট ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করেছেন তিনি। সেই ছবিও শারিক তুলেছেন। মাম্মিক্কার মডেল হয়ে ওঠার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারও করেছেন ফটোগ্রাফার। যা দেখে চমকে গেছেন নেটিজেনরা। বেশিরভাগ মানুষই তার নতুন রূপের প্রশংসা করেছেন।
তবে ওয়েডিং স্যুটের মডেলিং করার আগে বেশ কয়েক বার ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল মাম্মিক্কাকে। নানা ছাঁটকাটের স্যুট, শেরওয়ানি পরিয়ে ছবিও তোলা হয় তার। শেষমেশ বৃদ্ধের ফটোশ্যুট শুরু করেন শরিক।
কিছু বছর আগে যেখানে মাম্মিক্কার রোজনামচায় নতুনত্ব ছিল না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ছুটতে হত রুজিরুটির সন্ধানে। দিনের শেষে সামান্য যা কিছু রোজগারপাতি হত, তা দিয়ে মাছ-শাকসবজি কিনে বাড়ি ফিরতেন। এখন সেখানে তিনি স্যুটের শিডিউল মেলাতে ব্যস্ত।
Advertisement
মাম্মিক্কার গ্ল্যামারাস লুক দেখে মুগ্ধ তার পড়শিদের পাশাপাশি নেটমাধ্যমের লোকজন। ফেসবুক বা টুইটারে মডেল মাম্মিক্কার অজস্র ছবিও চালাচালি শুরু হচ্ছে। ভক্তদের জন্য একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে তার।
মাম্মিক্কার এই সাফল্যে খুশি মাম্মিক্কার সঙ্গে শারিকও। নেট মাধ্যমে মাম্মিক্কার পাশাপাশি শারিকের প্রশংসায় খানিকটা পঞ্চমুখ হতে ভুলে যাচ্ছেন না ভক্তরা।
নিজের এই সাফল্যের জন্য ফটোগ্রাফার শারিকের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। নতুন এই পেশায়ও খুশি মাম্মিক্কা। তবে রাতারাতি তারকার খ্যাতি পেলেও মাটি থেকে পা সরেনি এই ‘সুপার কুল’ মডেল। মডেল হিসেবে আলোড়ন তুললেও পুরোনো পেশা দিনমজুরি ছাড়বেন না তিনি। এক সময় দিনমজুরি করেই তো সংসার টানতেন মাম্মিক্কা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
কেএসকে/এএসএম