একটি মিনি বিমান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হাওরপাড়ের দিনমজুরের ছেলে ঝুটন সম্রাট যিশু। বিমানটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে টানা আধাঘণ্টা আকাশে উড়তে পারে। এটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার টাকা। আর সময় লেগেছে মাত্র ১৫ দিন।
Advertisement
গুগল সার্চ করে ও ইউটিউব দেখে নিজের উপবৃত্তির টাকায় তিন ফুট লম্বা ও চার ফুট পাখাবিশিষ্ট বিমানটি তৈরি করেছেন ঝুটন। এরই মধ্যে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরপাড়ে উড়েছে বিমানটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে।
সুনামগঞ্জের খরচার হাওরপাড়ের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্যারীনগর গ্রামের দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবার গোপেন্দ্র চন্দ্র দাস ও গৃহিণী ইলা রানী দাসের তিন সন্তানের মধ্যে ঝুটন সম্রাট যিশু দ্বিতীয়। ২০২০ সালে বিশ্বম্ভরপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি এলাকার দিগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের দাদশ শ্রেণির ছাত্র।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই নানা প্রযুক্তি আবিষ্কার করতেন ঝুটন। নিজের প্রচেষ্টায় একাধিকবার তৈরি করেছেন ড্রোনসহ নানা যন্ত্রপাতি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থাভাবে এগুলো বেশিদিন সচল রাখতে পারেননি। এমনকি এসব যন্ত্রপাতি রাখার মতো কোনো নিরাপদ স্থানও নেই তাদের বাড়িতে। উপবৃত্তির টাকাসহ নিজের জমানো প্রায় ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে এক মাস আগে তিনি মিনি বিমানটি তৈরি করেন।
Advertisement
ককশিট দিয়ে বিমানের মূল বডি তৈরি করেছেন ঝুটন। এছাড়া ট্রান্সমিটার, রিসিভার, লিপো ব্যাটারি, কন্ট্রোলিং করার জন্য চারটি সারভো মোটর, শক্তির জন্য ব্রাসলেস মোটর ও ছোট ফ্যান। একটি রিমোট দিয়ে বিমানটি আকাশে ওড়ানো হচ্ছে।
মিনি বিমানটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে টানা আধাঘণ্টা উড়তে পারে। তবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় নিজের তৈরি মিনি বিমানটি রাখার মতো জায়গা নেই ঝুটনের ঘরে। অযত্নে ফেলে রাখা হয় রান্নাঘরের লাকড়ির স্তূপের ওপরে।
কলেজের শিক্ষক, পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আরও ভালো কিছু করার সুযোগ পেতেন ঝুটন।
ঝুটন সম্রাট যিশুর মা ইলা রানী দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঝুটন ছোট থেকেই অনেক কিছু তৈরি করেন। কিন্তু আমরা আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় সে আরও ভালো কিছু করার সুযোগ পাচ্ছে না।’
Advertisement
ঝুটনের বড় ভাই ঝলক রাজা অপি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই খুব মেধাবী। সে ছোটবেলা থেকে অনেক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয় যায়। অনেক সময় আবিষ্কারের যন্ত্রপাতি কিনে দেওয়ার জন্য সে বায়না করে কিন্তু টাকার অভাবে আমরা সেগুলো কিনে দিতে পারি না।’
মিনি বিমানের উদ্ভাবক শিক্ষার্থী ঝুটন সম্রাট যিশু বলেন, ‘একমাস ধরে আমি এটা আকাশে উড়াচ্ছি। স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবে এটি তৈরি করেছি। এটা দিয়ে কৃষিজমিতে সার-বীজ-কীটনাশক প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি হাওরের কৃষিকাজের জন্য ও আকাশে চড়া যায় এমন যাত্রীবাহী বিমান তৈরি করতে চাই। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটা সম্ভব না।’
বললেন, আমাদের কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্র ঝুটনের উদ্ভাবণী শক্তি প্রশংসার দাবিদার।
পড়াশোনার বাইরে ঝুটনের সৃজনশীল যে মন রয়েছে তা তরুণসমাজের জন্য একটা বিশেষ বার্তা বলে মন্তব্য করেন বিশ্বম্ভরপুর দিগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সে সৃষ্টিশীল কাজে মনোযোগ দিচ্ছে। তার উদ্ভাবনী কাজে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঝুটন মানবিক বিভাগের ছাত্র হয়েও যে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি দেখিয়েছে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্মাণের অগ্রযাত্রায় একটা উদাহরণ। তাকে সহযোগিতা করলে এই প্রযুক্তি দিয়ে নানা কাজ করা যাবে। তার এই প্রযুক্তির বিকাশে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।’
লিপসন আহমেদ/এসআর/এএসএম