জাতীয়

সরিয়ে ফেলা হয়েছে নামফলক, অপেক্ষা নতুন কমিশনের

নতুন নির্বাচন কমিশনারদের অপেক্ষায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন। কেএম নূরুল হুদা কমিশন চলে যাওয়ার পরপরই দরজার পাশে লাগানো তাদের নামফলক তুলে ফেলা হয়েছে। রুমগুলো রঙ করা ছাড়াও আসবাবপত্র ঘষামাজা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) শূন্য ভবনটি।

Advertisement

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মেয়াদের পাঁচ বছর পূর্ণ করে বিদায় নেয় কেএম নূরুল হুদা কমিশন। বিদায়ী সংবদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে নিজের কোনো ব্যর্থতা নেই।

নূরুল হুদা বলেন, গত পাঁচ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সবগুলো নির্বাচন শেষ করা। আমরা নির্বাচনগুলো শেষ করতে পেরেছি, এটি বড় সফলতা। ওই সব নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছেন। বিদায়ী কমিশন সফল বলেও দাবি করেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, সিইসির কক্ষের দরজার সামনে ‘কে এম নূরুল হুদা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ লেখা ফলকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অন্য কমিশনারদের নামফলকও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

Advertisement

সাবেক সিইসির একান্ত সচিব একেএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, নতুন কমিশনারদের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এজন্য রুমগুলো নতুন করে রঙ করা হচ্ছে। ঘষামাজা করা হচ্ছে আসবাবপত্র।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বেশি সময় লাগলেও আইনের ব্যত্যয় হবে না বলে এর আগে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, এ সময় সচিব সাচিবিক দায়িত্বপালন করবেন।

বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কমিশন গঠিত না হলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানে কিংবা আইনে এ ধরনের কোনো শূন্যতার কথা নেই। সেজন্য সোমবার (১৪ ফ্রেব্রুয়ারি) এই কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে এবং তারপরও যদি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে একটু বিলম্ব হয়, তা আইনে শূন্যতা হিসেবে গণ্য হবে না।

জানা যায়, নতুন কমিশন না আসা পর্যন্ত সচিব শুধু দাপ্তরিক কাজগুলো করতে পারবেন। কমিশনারদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় এমন কাজগুলো কমিশন গঠনের পর করা হবে।

Advertisement

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২ ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

একনজরে তাদের মেয়াদকাল

কে এম নূরুল হুদা: ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ: ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি।

ড. এ টি এম শামসুল হুদা: ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি।

বিচারপতি এম এ আজিজ: ২০০৫ সালের ২৩ মে থেকে ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি।

এম এ সাইদ: ২০০০ সালের ২৩ মে থেকে ২০০৫ সালের ২২ মে।

মোহাম্মদ আবু হেনা: ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ২০০০ সালের ৮ মে।

বিচারপতি এ কে এম সাদেক: ১৯৯৫ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিল।

বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ: ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল।

বিচারপতি সুলতান হোসেন খান: ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯০ সালের ২৪ ডিসেম্বর।

বিচারপতি চৌধুরী এ.টি.এম. মাসুদ: ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি।

বিচারপতি এ.কে.এম. নুরুল ইসলাম: ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি।

বিচারপতি মো. ইদ্রিস: ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২৭ জন ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।

একনজরে তাদের মেয়াদকাল

মাহবুব তালুকদার: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

মো. রফিকুল ইসলাম: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

বেগম কবিতা খানম: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

মো. শাহ নেওয়াজ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

মোহাম্মদ আবু হাফিজ: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

মোহাম্মদ আবদুল মোবারাক: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

ব্রিগে. জেনা. (অব.) এম, সাখাওয়াত হোসেন: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২।

মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২।

মো. সাইফুল আলম: ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি।

মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী: ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি।

মুহাম্মদ হাসান মনসুর: ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি।

এস.এম. জাকারিয়া: ২০০৬ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি।

বিচারপতি মাহফুজুর রহমান: ২০০৬ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি।

এম.এম. মুনসেফ আলী: ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ২০০৬ সালের ১৯ এপ্রিল।

এ.কে মোহাম্মদ আলী: ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ২০০৬ সালের ১৯ এপ্রিল।

শফিউর রহমান: ২০০০ সালের ২৫ জুন থেকে ২০০৫ সালের ২৫ জুন।

মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী: ১৯৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল।

আবিদুর রহমান: ১৯৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল।

বিচারপতি মো. আব্দুল জলিল: ১৯৯৪ সালের ৭ মে থেকে ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল।

বিচারপতি সাইদ মিসবাহ উদ্দিন হোসেন: ১৯৯০ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।

বিচারপতি আমিন-উর-রহমান খান: ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর।

বিচারপতি নাইম উদ্দিন আহমেদ: ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৪ এপ্রিল।

বিচারপতি সুলতান হোসেন খান: ১৯৮৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।

আব্দুল মুমিত চৌধুরী: ১৯৭৮ সালের ২০ অক্টোবর থেকে ১৯৮৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

নুর মোহাম্মদ খান: ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই।

এদিকে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন অনুযায়ী কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে হবে।

নতুন ইসি গঠনে গত শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রথম দফায় বেলা সোয়া ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশিষ্টজনদের মতামত নেয় সার্চ কমিটি। বিশিষ্টজনদের মতামত নিতে পরের দিন রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলেও বৈঠক হয়। দু’দিনের সভায় অধ্যাপক, গণমাধ্যমের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি, সরকারি সাবেক কর্মকর্তা এবং সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।

এসব বৈঠকে সার্চ কমিটির কাছে আসা ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসব নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এইচএস/ইএ/এএসএম