নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই রমজান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বার বার করতেন। রমজানের চাঁদ না দেখা পযন্ত তিনি আল্লাহর কাছে রমজান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতেন। তিনি এভাবে দোয়া করতেও শিখিয়েছেন-
Advertisement
اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান; ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’
Advertisement
কিন্তু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন রজব মাস থেকেই রমজান মাস পাওয়ার জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষা করতেন?
রমজান, আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্যতম একটি নেয়ামতে পরিপূর্ মাস। মুমিনের জীবনে আল্লাহর যে সব নেয়ামত দান করেন, তন্মধ্যেও রমজান অন্যতম একটি। আল্লাহর তাওফিক ছাড়া জীবনে কোনো নেয়ামত পাওয়ার সুযোগ নেই। রমজানও এর ব্যতিক্রম নয়।
রমজান, দুনিয়ার এ সংক্ষিপ্ত জীবনে প্রতিটি রমজানই মহান আল্লাহর দেওয়া সেরা উপহার। রমজান শুরু হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদত-বন্দেগির প্রস্তুতি নিতেন। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁর উম্মতকে প্রস্তুতি নিতে বলতেন। রমজান পাওয়ার জন্য জন্য রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে আল্লাহর কাছে বেশি দোয়া করতেন।
রমজান, বিগত জীবনের সব গুনাহকে নেকিতে পরিণত করার অনন্য সুযোগ নিয়ে আসে। মুমিন হয়ে এমন সুযোগ কে হারাতে চায়? মানুষ বিশেষ মেহমানকে যেমন আগে থেকেই কদর করার প্রস্তুতি নিয়ে থাকে, তেমনি রমজানকে কদর করতে রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহান প্রভুর কাছে আরও একটি রমজান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে।
Advertisement
রমজান, শুধু ফরজ রোজা পালনের মাসই নয় বরং নফল ইবাদতেরও বিশেষ মাস। এ মাসে যে কোনো নফল ইবাদতের সওয়াবই বহু গুণে বেড়ে যায়। রমজানের প্রতিটি নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজ ইবাদতের সমান। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমান। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের ওপর একটি মর্যাদাপূর্ণ মাস ছায়া বিস্তার করেছে। এ পবিত্র মাসের একটি রাত বরকত ও ফজিলতের দিক থেকে হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ মাসের রোজাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন এবং এর রাতগুলোয় আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়ানোকে নফল ইবাদত রূপে নির্দিষ্ট করেছেন। যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ফরজ ইবাদত ছাড়া সুন্নাত বা নফল ইবাদত করবে, তাকে এর বিনিময়ে অন্যান্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান পুণ্য পাবে।’ (বায়হাকি)
রমজান, ওমরাহ পালনে হজের সমান সওয়াব পাওয়ার মাস। রমজান মাসের ওমরাহ পালন হজের সমতুল্য। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের ওমরাহ হজের সমতুল্য।’ (বুখারি)
ইবাদতের মৌসুম, রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার মৌসুম হলো রমজান মাস। পবিত্র এ মাসটি পাওয়ার জন্যই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজবের চাঁদ দেখার পর থেকেই রমজান না আসা পর্যন্ত আল্লাহর কাছে রমজান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতেন। রমজানের ইবাদত-বন্দেগি যথাযথভাবে আদায় করার জন্য দুই মাস আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি রমজান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও দোয়া করা। ইবাদত-বন্দেগি শুরু করা। রমজানের রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাত পেতে এখনই আল্লাহর কাছে এসব প্রার্থনা বেশি বেশি করা। আর এ দোয়াটি বেশি বেশি করা-
اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান; ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রজব ও শাবান মাসে রমজান কামনায় বেশি বেশি ইবাদত ও প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম