খেলাধুলা

মুশফিক-ইয়াসিরের তাণ্ডবের পরও খুলনার বিদায়

একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার। অন্যপ্রান্তে তাণ্ডব চালালেন মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলি রাব্বি। তবু চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের করা ১৮৯ রানের সংগ্রহ টপকাতে পারলো না খুলনা টাইগার্স। এলিমিনেটর ম্যাচে হেরে চতুর্থ হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হলো মুশফিকের দলকে।

Advertisement

আগে ব্যাট করা চট্টগ্রামের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ১৮৯ রান। জবাবে ফ্লেচারের অপরাজিত ফিফটির সঙ্গে মুশফিক-ইয়াসিরের তাণ্ডবের পরও নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮২ রানের বেশি করতে পারেনি খুলনা। যার ফলে ৭ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা বেঁচে রইলো চট্টগ্রামের।

খুলনার জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখা ব্যাটিংয়ে মুশফিক খেলেছেন ২৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। তার বিদায়ের পর ইয়াসিরের ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ৪৫ রান। অন্যদিকে ফ্লেচার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৮০ রান করে। তবু কাজের কাজ হয়নি তাদের। শেষ পর্যন্ত বিজিত দল হিসেবেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে।

এই জয়ের ফলে টুর্নামেন্টের চট্টগ্রামের যাত্রা আরও দীর্ঘায়িত হলো। আজ (সোমবার) সন্ধ্যার ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশালের মধ্যকার জয়ী দল চলে যাবে ফাইনালে। আর পরাজিত দল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে চট্টগ্রামের বিপক্ষে। সেই ম্যাচ জিতলেই স্বপ্নের ফাইনালে উঠবে তারুণ্যনির্ভর চট্টগ্রাম।

Advertisement

চট্টগ্রামের করা ১৮৯ রানের জবাবে শুরুতেই ঝড় তোলা ব্যাটিং করেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ফ্লেচার। আরেক ওপেনার শেখ মেহেদি হাসান (২) ও সৌম্য সরকার (১) অল্পে আউট হলেও, পাওয়ার প্লে'তে ঠিকই ৫৮ রান তুলে ফেলে খুলনা। যেখানে ফ্লেচারের একার সংগ্রহ ছিল ২৫ বলে ৪০ রান। কিন্তু পরের ৪০ রান করতে তিনি খেলে ফেলেন ৩৩ বল।

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার নিজের ক্যালমা দেখান মুশফিক। বিশেষ করে বেনি হাওয়েলের করা দশম ওভারে হাঁকান জোড়া ছক্কা। হাওয়েলের পরের ওভারেও মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ছয়ের মার। যার সুবাদে ১২ ওভারের মধ্যেই ১০৭ রান তুলে ফেলে খুলনা। মনে হচ্ছিল, মুশফিক-ফ্লেচারের ব্যাটেই জিতে যাবে তারা।

কিন্তু ১৩তম ওভারে গিয়ে গড়বড় পাকান মুশফিক। মেহেদি হাসান মিরাজের করা সেই ওভারের প্রথম বলে লেট কাট করতে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে কট বিহাইন্ড হন খুলনার অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১ চার ও ৪ ছয়ের মারে ২৯ বলে ৪৩ রান।

অধিনায়কের বিদায়ের পর দলকে পথ হারাতে দেননি মিডলঅর্ডারে নামা ইয়াসির আলি রাব্বি। ফ্লেচারের সঙ্গে মাত্র ৬.২ ওভারে ৬৫ রান যোগ করেন তিনি। যেখানে তার একার সংগ্রহ ২ চার ও ৪ ছয়ের মারে ২৪ বলে ৪৫ রান। ইনিংসের ১৯তম ওভারে গিয়ে আউট হন ইয়াসির। তখন জয়ের জন্য বাকি ছিল ১০ বলে ১৮ রান।

Advertisement

একপর্যায়ে জয়ের জন্য ২৪ বলে ৫৬ রান প্রয়োজন ছিল খুলনার। তখন শরিফুলের ১৭তম ওভারে ১৩ ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর ১৮তম ওভারে ১৯ রান নিয়ে সমীকরণ ১২ বলে ২৪ রানে নামান ইয়াসির। এমনকি শরিফুলের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলেও ছক্কা হাঁকান তিনি। পরের বলেও বাউন্ডারি আশা ব্যাট চালিয়ে ওয়াইড থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন তিনি।

ইয়াসির আউট হওয়ার পর হতাশ করেন দুই বিদেশি আন্দ্রে ফ্লেচার ও থিসারা পেরেরা। শরিফুলের ১৯তম ওভারের শেষ চার বলে আসে মাত্র ২ রান। ফলে শেষ ওভারে বাকি ১৬ রান। মেহেদি মিরাজের সেই ওভারে আসে মাত্র একটি চার। সেটিও মিসফিল্ড থেকে। সবমিলিয়ে মাত্র ৮ রান খরচ করে দলকে ৭ রানের জয় এনে দেন মিরাজ।

বল হাতে মিরাজ নেন ২টি উইকেট। এছাড়া নাসুম আহমেদ, শরিফুল ও মৃত্যুঞ্জয়ের শিকার ১টি করে উইকেট।

এর আগে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে চট্টগ্রামকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল খুলনা। ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই একটি করে চার-ছক্কা হাঁকান জ্যাকসের জায়গায় একাদশে ফেরা কেনার লুইস। তবে ওভারের শেষ বলে আরেক ওপেনার জাকির হাসানকে ফিরিয়ে দেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

এক ওভার পর অধিনায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুবর উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। রুয়েল মিয়ার বলে পুল খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৩ রান করা আফিফ। শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর ফলে থেমে যায় রানের চাকা। প্রথম পাওয়ার প্লে'তে দু উইকেটের বিনিময়ে আসে মাত্র ৩৯ রান।

ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথম দুই বলে চার-ছয় হাঁকিয়ে দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেন কেনার। তবে পরের ওভারেই তার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেন নাবিল সামাদ। লেগ বিফোর আউট হওয়ার আগে ৪ চার ও ২ ছয়ের মারে ৩২ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন কেনার লুইস। ঠিক পরের ওভারে আউট হন ৭ বলে ১০ রান করা শামীম পাটোয়ারীও।

যার ফলে দশ ওভার শেষে চট্টগ্রামের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে মাত্র ৬৬ রান। সেখান থেকে শেষ ১০ ওভারে আরও ১২৩ রান পায় দলটি। যার মূল কৃতিত্ব ওয়াল্টনের। তার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে পার্শ্বনায়কের ভূমিকা পালন করেন মেহেদি মিরাজ। এ দুজন মিলে মাত্র ৯.৪ ওভারে ১১৫ রানের জুটি গড়েন। যা দলকে এনে দেয় বিশাল সংগ্রহের ভিত।

১৫তম ওভারে রুয়েল মিয়ার চার বলে যথাক্রমে ৪, ৪, ৬ ও ৪ মেরে মাত্র ২৮ বলে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি পূরণ করেন ওয়াল্টন। এরপর খেলা ১৬ বলে আরও ৩৯ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটার। ইনিংসের ১৯তম ওভার শেষে ওয়াল্টনের নামের পাশে ছিল ৮৮ রান।

কিন্তু শেষ ওভারে তিনি স্ট্রাইক পান মাত্র একটি বল। সেখানে সিঙ্গেল নিয়ে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়াল্টন। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হওয়ার ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ৩৬ রান করেন মিরাজ। বিশাল এক ছক্কাসহ ৩ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন বেনি হাওয়েল। শেষ ৬ ওভারে চট্টগ্রাম তুলে নেয় ৮০ রান।

খুলনার পক্ষে খালেদ আহমেদ নেন ২ উইকেট। এছাড়া নাবিল সামাদ, রুয়েল মিয়া ও শেখ মেহেদি হাসানের শিকার ১টি করে উইকেট। নিজের ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচ করেন বাঁহাতি স্পিনার নাবিল।

এসএএস/আইএইচএস/এমএস