বাংলা বছরের পক্রিমায় সব শেষে আসে বসন্ত। মধুরেন সমাপয়েৎয়ের মতো বছরের শেষটা মধু মধু বলে শেষ করতে পারে বাঙালিরা, নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার শক্তি জমা হয়, যা গ্রীষ্মের কালবোশেখি ঝড়ের মতো দাপুটে হয়ে ওঠে। বছরের শেষ বা বস্-এর অন্ত বলেই এই ঋতুর নাম বসন্ত। সব ঋতুর অন্তে যে ঋতু, সে-ই বসন্ত। প্রকৃতির বসন বা বাস বা পরিধেয় পরিচ্ছদ পাল্টায় প্রতি ঋতুতে, বসন্তে হয় বছরের বসন পাল্টানোর সমাপ্তি।
Advertisement
বছরের শেষ, ফুলে ফুলে ভরে ওঠা চারদিক, সাথে কোকিলের পাগল করা ডাক- এই বসন্ত কামনা বাসনার অন্ত নেই বলে মনের ভেতরটাকে জাগিয়ে দেয়, সে-ই তো সার্থকতা বসন্তের। এই ঋতুতে বাস মানুষের বাসনার। তাই তো হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে বসন্তকে বলা হয়েছে ‘বসন্ত+ পুং [বস্ + অন্ত] ‘যাহাতে কামের বাস’। ‘বিহরতি হরিরিহ সরসবসন্তে কামসখ।’ ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে যাওয়া বসন্তের কোকিল তো ‘কামদেব’, প্রেমময় মানুষের সহায়।
ফাল্গুন আর চৈত্র মাস মিলে বসন্ত ঋতুর আয়োজন সম্পন্ন হয়। ফাল্গুন একেবারে গ্রামীণ শব্দ থেকে উৎসারিত। এই মাসে গাছের পাতারা টুকরো টুকরো (ফাল) হয়ে ঝরে পড়ে, গাছে গাছে কচি কচি (ফাল) পাতা গজিয়ে ওঠে, গাছে গাছে গুনতি গুনতি (ফাল) ফুল ফোটে যা কিছু দিন পরই পরিণত হবে সুমিষ্ঠ ফলে। ফাল+গুণ=ফাল্গুন।
চৈত্র এসেছে চরিত্র থেকে। এ কার চরিত্র? বছরের চরিত্র নাকি বোঝা যায় চৈত্রের হালচাল দেখে। এখনো গ্রামের মানুষ এই বিশ্বাসে চৈত্রকে অবলোকন করে। বঙ্গীয় শব্দকোষ মোতাবেক চৈত্র হচ্ছে ‘চিত্রানক্ষত্রযুক্তপৌর্ণমাসী-বিশিষ্ট মাস ; মধুমাস।’ শরৎ আর বসন্তের যে বন্ধুত্ব, তাকে ছাপিয়ে যায় বসন্তের সাথে মানুষের মানসিক সম্পর্কের মিষ্টি স্বাদ। রোদের ঝাঁঝ কম থাকে এ সময়, মোলায়েম বাতাসে দোল খায় সবুজ গাছ-সবুজ পাতা, পুরুষ পাখিরা ডেকে ডেকে সারা হয় সঙ্গিনী পাখিকে।
Advertisement
মানুষের মন উদাস হয় বসন্তে। বাংলার বসন্ত সৃষ্টিশীল করেছে বাংলার মানুষকে, হাতে তুলে দিয়েছে একতারা-দোতারা, কণ্ঠে তুলে দিয়ে গানের সুর। এই যদি হয় বসন্তের রূপ, তবে আর বহস কীসের? বহসে বসন্ত কেবল শহুরে জীবনের অনুষঙ্গ। শহুরে বসন্ত গ্রামীণ বসন্তের মতো ঝলমলে নয়। শহুরে বসন্তে কোকিল কোথায়? কোকিলের সংখ্যা কমে গেছে আশঙ্কাজনক ভাবে। কর্ণকুহরে কোকিলের কুহু ডাক পৌঁছায় না, কেবলই মনের গভীরে এর অনুরণন শুনি মনে মনে। বউ কথা কও পাখি কোথায় সেই আগের মতো ফুলের রঙিন বাসর?
গাছপালা নিধনে সিদ্ধহস্ত মানুষ কমিয়ে দিচ্ছে ফুলের সাজ, আধুনিকতার প্রয়োজনে বলি হচ্ছে সব সাধ-আল্লাদ, ভালোবাসার আকুলতা। অথচ এই বসন্তেই ভালোবাসা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই ভালোবাসার মেকি আয়োজন মানুষের হাতে ঘটে বটে, তবে অন্য প্রাণীকূলের ভারোবাসার প্রয়োজনে বাগড়াকেন দেয় মানুষ ? প্রকৃতি উজাড় হলে কোথায় পাব প্রণীদের? প্রাণীরা না থাকলে ভালোবাসার বৈচিত্র্য থাকবে কি? মানুষ ভালোবাসতে শিখেছিল প্রকৃতির কাছ থেকে। বসন্ত উধাও হলে মানুষের ভালোবাসার হবেটা কি? এসব ভেবে মানুষ নানান অ্যাপসে ভারোবাসার পসরা সাজায়। ভালোবাসার সব রস শুকিয়ে দিয়ে মানুষ কেন ফেরে ভালোবাসার খোঁজে, সে শ্লোক বসন্ত ভাঙে কী উপায়ে!
বহসে বসন্ত বিষয় হিসেবে টেনে এনেছে জলবায়ুর পরিবর্তনকে। বিশ্ব উত্তপ্ত হচ্ছে, এর ফলে বসন্ত রূপ হারাচ্ছে। এই কষ্ট একা বসন্তের নয়, সব ঋতুরই আজ বেহাল অবস্থা। কে কখন আসছে যাচ্ছে, টের পেতে কষ্ট হয়। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা টের পাওয়া গেলেও শরৎ-হেমন্ত-বসন্তের খোঁজ নেই। সহজে বোঝা যায় না।
অতীতের মতো সরল নয় ঋতুর আখ্যান। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বুঝি বসন্ত ঋতু, সবচেয়ে দুঃখী মানুষ এই ঋতুটির জন্যই। যে প্রেমিক ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে বসন্তের অপেক্ষায় ছিল, সে যদি কিছুতেই টের না পায় বসন্ত এল কি না, জানালা খুলে বসন্তকে না পেয়ে যদি দেখে গ্রীষ্মের খর উত্তাপ, তবে তার প্রেম যে শুকিয়ে খড়খড়ে হয়ে যাবে!
Advertisement
এরপরও প্রেমিকের হাতে ফুল, প্রেমিকার পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি দেখে মনে হয়, বসন্তের সমাধিতে এ অর্ঘ্য বুঝি বিফলেই যাবে। আজকাল এসব কেবলই বসন্ত নামক মুমূর্ষু ঋতুটির স্মরণে শোকগাথার মতো আনুষ্ঠানিকতা বলে মনে হয়। পৃথিবীর সব কবি আজও বসন্তকে নিয়ে ভাবাবেগের তুবড়ি ছোটাচ্ছেন, এর দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপও করছে না প্রকৃতি। কেন না, সে মরমর।
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় কাত হয়ে বসন্ত চিৎপটাং আজ। বসন্তের ফুল শিমুলের বুক ফেটে বেরিয়ে আসা তুলা পেঁজা মেঘের মতো উবে গেছে, খুব কমে গেছে শিমুল তুলার গাছ। কেননা আমরা সভ্য হয়েছি। আমাদের নানান কাজে শিমুল গাছটা খুব লাগে। যেহেতু আমাদের কাজের গুরুত্ব আগে, তাই শিমুলকে মরতে হয়।
বসন্ত আসে শীতের শেষে। জড়সড় শীতে কর্মবিমুখ প্রত্যেকে বসন্তে খুঁজে পায় নতুন উদ্দীপনা। তাই রাশিয়ায় বসন্তের প্রথম দিন বিশ্ব শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হয়। শীতের বিদায় আর বসন্তের আগমনের দিনটাতে বিয়ে করলে সে বিয়ে নাকি আজীবন টিকে যায়, এ বিশ্বাস ওদের এখনো অটুট। প্রাচীন কাল থেকে ইরানে পালিত হয়ে আসছে ‘নওরোজ’ বা নতুন দিনের উৎসব, এ-ও কিন্তু বসন্তের প্রথম দিন।
ইরানি ক্যালেন্ডারে নববর্ষের সূচনা করে পয়লা বসন্ত। প্রায় তিন হাজার বছর ধরে চলে আসা নববর্ষ উদযাপনের রেওয়াজ ধর্মীয় কড়াকড়ির বর্তমান ইরানেও পরিবর্তিত হয়নি। বাংলা সংস্কৃতি যেভাবে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ পালনে উৎসাহ দেয়, এও যেন তেমনি। ইরানের এক কালের বাদশাহ জামশেদ শুরু করেছিলেন এই উৎসব, আজ যা ছড়িয়ে পড়েছে মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, চীনের উত্তর-পশ্চিম ও ইউরোপের বলকান অঞ্চলে। ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক নওরোজ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরকম বসন্ত উৎসব পৃথিবীর বহু দেশেই আছে।
বসন্তের প্রথম দিনটাতে ফুল যে সব ফুটে যায়, তা কিন্তু নয়। তবুও পঞ্জিকার পাতা গুণে দিনটিকে হাতের মুঠোয় পেয়ে গেলে মন কিন্তু আপনাতেই ফুলের ছবি দেখে দিব্য চোখে। আর তাই কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখে গেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ না গরম না ঠান্ডার দিনগুলোর জন্য প্রতীক্ষা থাকে হৃদয়জুড়ে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে কেবলই গরমের খোঁজ পাই, ফলে মন ভরাতে পারে না একালের বসন্ত।
সত্যিকারের ‘বসন্ত’ নির্ভর করে ‘মহাবিষুব’ এবং ‘উত্তরায়ণ’র মাঝামাঝি সময়কালের ওপর। সূর্যের দিকে তাক করে থাকা পৃথিবীর অক্ষরেখা শনাক্ত করে দেয় বসন্তের বৈশিষ্ট্য। আগের চাইতে পৃথিবীর অক্ষরেখা সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে বলে সূর্যের আলো বেশি পাওয়া যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বছরের খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন বলে মনে করা হয় মহাবিষুবকে, যেদিন দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য মোটামুটি ভাবে সমান।
এরকম দুটি সময় আসে প্রতি বছর। একবার বসন্তে, আরেকবার শরতে। যদি বলি, শরৎ ঋতুর ঠিক উল্টো পিঠেই বসন্ত ঋতুর অবস্থান, তবে মোটেও বেশি বলা হবে না। প্রতি বছরের মার্চ মাসের ২০ কি ২১ তারিখ, উত্তর গোলার্ধ্ব ছুঁয়ে ফেলে মহাবিষুব রেখাকে। তখন বসন্ত কালের জাগরণ ঘটে। ঠিক একই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধ্বে শুরু হয় হিমেল হাওয়ার দৌড়। ওখানে শুরু হয় শরতের খেলা। সেপ্টেম্বরের ২২ কি ২৩ তারিখ উত্তরের গ্রীষ্ম ফিকে হয়ে গিয়ে শরৎকে ডেকে আনার প্রস্তুতি নেয়।
শীত পেরিয়ে বসন্ত তখনই আসে, যখন সূর্যের আলো ক্রমশ খাড়া ভাবে পড়তে শুরু করে পৃথিবীর বুকে। রোদের তাপ বাড়তে থাকে। ঠান্ডায় কাবু প্রকৃতি গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারে ওই উষ্ণতার জোরে। শীতে রোদ কম পেত বলে গাছেরা সালোকসংল্লেষণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল, ঝরে গিয়েছিল কত পাতা। বসন্তে সূর্য আশ্বাস দেয় বলে নতুন পাতা গজায়, যাতে ক্রমশ বেড়ে যাওয়া সূর্যের আলো বেশি পাতায় পড়ে আর গাছ বেশি বেশি খাবার তৈরি করতে পারে। কখনো কখনো বসন্তের ভ্যাপসা গরম বৃষ্টি নামিয়ে আনে। শীতে মাটিতে পানি ছিল না, গাছের শেকড় ছিল অভুক্ত, ফলে বসন্তের বৃষ্টির ধারা নাচিয়ে দেয় গাছেদের অব্যক্ত মনটাকেও।
বসন্তে আবার ফিরে আসা পরিযায়ী পাখিরা, যারা শীত এড়াতে ঘর ছেড়ে উড়ে গিয়েছিল দূর দেশে। যেসব প্রাণী ঘুমিয়ে কাটিয়েছে শীত, তারাও বেরিয়ে আসে ঘর ছেড়ে। অনেক প্রাণী এই সময়ে বাচ্চার জন্ম দেয়। অনেকে নানা রঙের প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে নিজেদের শরীরের রং পাল্টায়, মিশে যায় প্রকৃতির সাথে। আসলে শীতে অভুক্ত থাকা প্রাণীরা এখন খাবারের খোঁজে মরিয়া, তাদের চোখ এড়িয়ে বাঁচতে হলে এরকম ছদ্মবেশ নিতে হবে বৈকি।
এসবই বসন্তে জেগে ওঠা ‘পাগলামি’, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘It`s spring fever. ’. মার্ক টোয়েন একেই বলেছেন পরম আরাধ্য ধন। লিখেছেন, ‘ That is what the name of it is. And when you`ve got it, you want - oh, you don`t quite know what it is you do want, but it just fairly makes your heart ache, you want it so!
বিজ্ঞান নিজেও স্বীকার করে, বসন্ত প্রকৃতির সেরা উপহার, সেরা ঋতু। না গরম না ঠান্ডা তাপমাত্রা সুখ এনে ফেলে বসন্তায়িত অঞ্চলে। শীতে দিন ছিল ছোট, ঠান্ডায় কাবু মন সেই সময়টাকেও কাজে লাগাতে চাইত না। বসন্তে চমৎকার তাপমাত্রায় উদ্দীপ্ত মন দেখে, দিনের সময়টা বেশ বড়। কত্ত কাজ যে করা যায়! শীতে সূর্যের আলো কম ছিল বলে যে বিষণ্ণতা গ্রাস করেছিল সবাইকে, তার অবসান হয়।
দিনের বেলায় সূর্যালোক আমাদের শরীরে রাসায়নিক উপাদান মেলাটনিন-এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়, রাতে আবার এটি বেড়ে যায়। ফলে বসন্তের রাতে ঘুম হয় খুব ভালো। সূর্যের আলোর উপস্থিতি মস্তিষ্কে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, এতে মনের ভেতর কেবলই বয়ে যায় সুখের সহর। শীতে বন্ধ থাকা জানালাগুলো খুলে দিলে ঝিরিঝিরি বাতাসে উড়ে যায় চুল, সে-ই বা কম কী! আরও আছে। বসন্তে পাওয়া সূর্যালোকে ভিটামিন ডিথ্রি থাকে, যা হাড়ের গঠনের জন্য খুব উপকারী।
সব প্রজাতির প্রাণীরাই মেতে ওঠে কাজের উদ্যমে। সব প্রজাতির প্রাণীদের নবজাতকরা প্রকৃতিতে যোগ করে নতুন আনন্দের উপকরণ, কেননা বসন্ত নবজীবনের কাল। সব গাছ দ্রুত সেজে ওঠে পাতার গভীরতায়। কেননা তীব্র গরমের কাল সামনে, তখন পাতার ছাতা নিয়ে বন্ধু গাছ নীরবে ছায়া বিলাবে বলে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হয়, নতুন করে। গাছের পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে সবুজে সবুজে ভরে ওঠে চারপাশ।
২০১২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বসন্তের সবুজ মানুষের মস্তিষ্ককে সৃষ্টিশীল হতে প্রেরণা জোগায়। এরও আগে ২০০৭ সালে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, বসন্তে যে হলুদ রঙের ফুলের প্রাচুর্য দেখা যায়, তা প্রাণকে তারুণ্য উপহার দেয়। ককটেল পার্টি যদি হলুদ রঙের দেওয়ালওয়ালা ঘরে করা যায়, তবে নাকি অভ্যাগতদের প্রচুর কথা বলতে, সতেজ হাসিতে ফেটে পড়তে উৎসাহ জোগায়। বসন্তের হলুদ ফুল এভাবেই আমাদের উদ্দীপ্ত করে। কবিগুরু সেজন্যই বলেছেন, বসন্ত নাকি যৌবনের ঋতু।
বলছিলাম, বসন্ত ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই পরিবর্তন ক্ষতিগ্রস্ত করবে বাংলাদেশের প্রায় ৭ কোটি মানুষকে। এজন্য দায়ী কিন্তু আমরাই। নির্বিচারে গাছ কাটছি, শিল্পায়নের নামে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছি বায়ুমণ্ডলে, অপরিকল্পিতভাবে নদীকে শাসন করছি, পাহাড় কাটছি। এসব কর্মকাণ্ডে ঋতু বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। নার্গিস-আইলা-সিডরের মতো মহাদুর্যোগ আঘাত হানছে আমাদের ওপর।
বসন্ত নিয়ে বহস (বাহাস বা তর্ক) করতে হবে, এমনটি নিয়ে কখনো ভাবেননি বসন্তপ্রেমী কেউ। বাস্তব বড় নির্মম। বসন্ত ঋতুর স্বভাব হয়ে যাচ্ছে অন্য রকম। প্রাণ উতলা করা কোকিলের কুহু তান, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসা বসন্ত বাতাস যদি পাল্টে যায়, কি লাভ হবে বসন্তে?
বহসে বসন্ত তুষ্ট হবে না। ফিরিয়ে আনতে হবে প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে, তবেই থামবে পাল্টাপাল্টির খেলা। ফিরে পাব আবার সেই বসন্ত দিন, যখন বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ দিব্যি ভেসে আসবে। তখনই জমবে ভালোবাসাবাসির সত্যি খেলা। প্রেমময় মন গেয়ে উঠবে-‘আহা আজি এ বসন্তে!’
লেখক : শিশুসাহিত্যিক।
এইচআর/ফারুক/জেআইএম