দেশজুড়ে

দুর্লভ সংগ্রহ নিয়ে কুমিল্লায় নজর কাড়ছে ব্যক্তিগত জাদুঘর

কুমিল্লা নগর শিশু উদ্যান। ইট-পাথর আর যান্ত্রীক শহরে শিশুদের স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার স্থান। সেখানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে হরেক রকমের রাইড (খেলনা)। যার ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুদের হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে সরব থাকে উদ্যানটি। বর্তমানে সেখানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে একটি জাদুঘর।

Advertisement

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ সংস্কৃতির ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্যই বেসরকারিভাবে এটি স্থাপন করা হয়েছে।

কৃষি যন্ত্রপাতি, খড়ম, ঢেঁকি, মাছ ধরার চাঁই, হারিকেন ও তালাসহ শত বছরের পুরনো প্রায় ২ হাজারের বেশি দুর্লভ জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে বেসরকারি এ জাদুঘরে। সংগ্রহশালায় দুর্লভ জিনিসপত্র দেখতে প্রতদিনিই ভিড় করছেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শিশু উদ্যানে আধাপাকা টিনশেডের এ সংগ্রহশালায় ১০ টাকা প্রবেশ মূল্যে দুর্লভ জিনিসপত্র দেখতে পেয়ে খুশি দর্শানার্থীরাও। তবে জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল আবেদীনের দাবি স্থান সংকুলানের অভাবে আরও পাঁচ শতাধিক দুর্লভ সংগ্রহ তাকে বাড়িতেই রাখতে হয়েছে।

Advertisement

সরেজমিন কুমিল্লা জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রাখা হয়েছে রকমারি তৈজসপত্র, সাড়ে ৩শ বছরের পুরোনো তালা, টেপ রেকর্ডার, প্রাচীন রেডিও, লাঙল-জোয়াল, ঢেঁকি, মাছ ধরার চাঁই, তাঁতের চর্কি, পুরোনো দা, শত বছর আগের ইট, শিলা, সুপারি কাটার ছড়তা, লাউয়ের ডুগডুগি, বিভিন্ন খনিজসম্পদ ও পাথর, পাললিক শিলা, হুঁকা, ঘোড়ার চামড়ার আসন, হাতি, উট, হরিণ, বন মহিষের শিং, মাথা এবং বিভিন্ন পশু-পাখির হাড়, ঘোড়ার চামড়া, নান চাকু, খড়ম, হারিকেন, ৩২ কেজি ওজনের প্রাচীন ফ্যান, হ্যাজাগ লাইট, প্রাচীন বাটখারা, লোহার পাল্লা, বাবুই পাখির বাসা, শত বছরের বিভিন্ন দেশের প্রাচীন মুদ্রা, মিশরের কাঠের ভাস্কর্য, পিতলের বদনা-চেরাগ, আছে বিন বাঁশিও।

এ ছাড়াও প্রাচীন রূপার মুদ্রা, প্রাচীন ঘড়ি, প্রাচীন ছুরি, জায়গা মাপার লোহার শিকল, বেয়ারিংয়ের গাড়ি, বাংলা সিনেমার প্রাচীন রিল, তাল গাছের নৌকা, পালকি, কলের গানের যন্ত্রপাতির মতো বিলুপ্ত সরঞ্জাম, প্রথম তৈরি টেলিভিশন, পুরাতন রেডিও সেট, টেলিফোন সেট, গরুর কাইর, পুরোনো দিনের ক্যামেরা, শ্রমিকদের কাজের লোহার সরঞ্জাম, কাসা-পিতলের ডেগ-ডেসকিসহ হারিয়ে যাওয়া দুর্লভ জিনিপত্র রয়েছে এ জাদুঘরে।

আবুদাউদ নামে এক প্রবাসী তার সন্তানদের নিয়ে এসেছেন প্রাচীন ঐতিহ্য দেখাতে। তিনি জানান, দুর্লভ সংগ্রগুলো দেখে অনেক ভালো লেগেছে। নতুন প্রজন্ম এখানে এসে জানতে পারবে শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য।

নার্গিস সুলতানা নামে এক গৃহিণী জানান, এখানে অনেক কিছুই আছে যেগুলো বাচ্চারা কখনো দেখেনি। দুর্লভ কিছু সংগ্রহ রয়েছে যা আমিও কখনো দেখিনি। বর্তমানে আধুনিকতার নামে আমরা ইতিহাস-ঐতিহ্য বিনাশের পথে হাঁটছি। এমন সময়ে নাজমুল আবেদীন স্যারের এ সংগ্রহ সত্যিই প্রশংসনীয়।

Advertisement

জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক স্কুলশিক্ষক নাজমুল আবেদীন জাগো নিউজকে জানান, আষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তিনি প্রাচীন জিনিসপত্র জমাতে শুরু করেন। বিলুপ্ত হওয়া বা অনেকটা বিলুপ্তির পথে এমন জিনিসপত্র তার সংগ্রহশালায় যোগ করতে তিনি ৫০টি জেলায় ঘুরেছেন। গত ৩০ বছরের সংগৃহীত প্রাচীন দুর্লভ এক হাজার জিনিসপত্র নিয়ে চার বছর আগে তিনি কুমিল্লা নগরীর মগবাড়ি এলাকায় নিজের বাসার একটি কক্ষে সংগ্রহশালা (জাদুঘর) করেন।

কুমিল্লার সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বিষয়টি জানতে পেরে ধর্মসাগর পাড়ে নগরীর শিশু উদ্যানে আধাপাকা টিনশেডের একটি ঘর বরাদ্দ দেন জাদুঘর হিসেবে। গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র নিজেই এটি উদ্বোধন করেন।

প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল আবেদীন আরও জানান, স্বীকৃতি পেলে তার জাদুঘরটি হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বীকৃত ব্যক্তিগত জাদুঘর। প্রথম স্বীকৃত জাদুঘরটি রাজধানীর অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু জাগো নিউজকে বলেন, কুমিল্লাসহ সারা দেশের ঐতিহ্য যেন তুলে ধরতে পারেন সেজন্য নগরীর শিশু উদ্যানে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আগামীতে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমী এলাকায় আরও বড় পরিসরে বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এফএ/এমএস