ইফতেখার হায়দার মানবসভ্যতার ইতিহাসকে বদলে দিয়েছে ভাষা বা বুলির ব্যবহার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা থেকে প্রায় দেড় লাখ বছরের মধ্যে ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা তৈরি হয়েছে।
Advertisement
আমাদের পূর্বপুরুষদের খাদ্য সংগ্রহ ও প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকার তাড়না থেকেই ছোট ছোট ধ্বনি বা বুলির উদ্ভব হয়, যা পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে।
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজারটি ভাষা প্রচলিত আছে। তবে মানুষ যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন, আধুনিক যুগে শিষ্টাচার বলতে বোঝায় ভাষার মৌখিক ও লিখিত ব্যবহারবিধি। তাই স্থান-কাল-পাত্র বুঝে কথা বলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কীভাবে কথা বলা উচিত?
Advertisement
>> আগে শুনুন, তারপরে উত্তর দিন। দু’পক্ষই বলে গেলে ভাবের আদান-প্রদান করা সম্ভব হয় না। নিয়ম হচ্ছে, এক পক্ষ বলবে, আরেক পক্ষ শুনবে। এরপর ভালোভাবে জেনে-বুঝে উত্তর দেবে।
>> অল্প কথায় মূল কথা প্রকাশ করতে পারা একটি দক্ষতা। বক্তব্যে সরলবাক্যের আধিক্য থাকবে যাতে সহজেই শ্রোতার বোধগম্য হয়।
>> হাসিমুখে কথা বললে শ্রোতার নিকট বক্তব্য আকর্ষণীয় হয় উঠবে, শ্রোতা আগ্রহের সঙ্গে শুনবে। এতে বক্তা ও শ্রোতার মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
>> কথোপখনকে অর্কেস্ট্রার সাথে তুলনা করা হয় যেখানে সব যন্ত্র সমানভাবে বাজে। শুধু নিজের কথাই যে গ্রহণযোগ্য হবে তা ভাবা বোকামি। অন্যের মতামতকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বোঝাতে হবে শ্রোতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
Advertisement
>> সুন্দর শব্দচয়ন, আপনার শিক্ষা ও রুচিশীল ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। একই সঙ্গে ধীরে সুস্থে স্পষ্টভাবে কথা বললে শ্রুতিমধুর লাগে।
>> আপনার কথায় যেন ফুটে উঠে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ইঙ্গিত। বিনয়ের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস করুন, তাহলে খুব অল্প সময়েই আপনি সবার প্রিয়ভাজন হয়ে উঠতে পারবেন।
>> কারো বিপদে সহানুভূতির সঙ্গে কথা বলুন, তাকে ভরসা দিন। আপনার সামান্য আশ্বাস কিংবা সহানুভূতিসুলভ আচরণ হতে পারে অন্যের ভালো থাকার উপজীব্য।
>> জীবনে চলার পথে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে, বিচলিত না হয়ে নির্দ্বিধায় ভুল স্বীকার করে বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিন। এতে আপনি ছোট হবেন না বরং আপনার সততার পরিচয় মিলবে।
>> পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যত বেশি সম্ভব মন খুলে কথা বলুন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।
কথা বলার সময় কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকবেন?
>> প্রথম প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রশ্ন করা উচিৎ নয়। তাছাড়া কাউকে একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক কিংবা কথার পুনরাবৃত্তি শ্রোতার বিরক্তির কারণ হতে পারে। এমনকি তা মূলকথা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
>> কথাবার্তায় কোনোভাবেই যেন দাম্ভিকতা ও অহংকার প্রকাশ না পায়। সব সময় গল্পের হিরো বনে যাওয়ার চেষ্টা হাসির পাত্রে পরিণত করে।
>> কারো দুর্বলতা, অসুস্থতা ও অক্ষমতা নিয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথা বলা রীতিমত অপরাধ। নারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের ফলে মামলাও হতে পারে।
>> কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে কখনো ধমকের সুরে কথা বলবেন না। এতে শিশুদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।
>> অন্যের মন-মানসিকতা বুঝে কথা বলুন। আপনার কটুক্তি কিংবা উস্কানি ডেকে আনতে পারে বড় ধরনের ঝুট-ঝামেলা, এমনকি মারামারি-হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
>> কথা বলা উচিত ৭০ৎ ৭০ ডেসিবেলের নিচে। এই মাত্রার উপরে গেলে শ্রুতিকটু লাগে। অনেকের মুখে অথবা শরীরে দুর্গন্ধ হয়, যা শ্রোতার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নুন্যতম ৩ ফিট দূরত্ব বজায় রেখে কথোপকথন চালানো সমীচীন।
>> নির্ভরযোগ্য না হলে কারো সঙ্গেই কোনো গোপন তথ্য ভাগাভাগি করতে যাবেন না। কে জানে, কখন আপনার শেয়ার করা কথাই বিভিন্ন কানে কানে হেঁটে আবার আপনার কানেই ফিরে আসে!
>> যতদূর সম্ভব রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও পরনিন্দা হতে পারে এমন আলাপচারিতা এড়িয়ে চলুন। উচ্চস্বরে কিংবা ধমকের সুরে কথা বলা ক্ষতিকর।
কারণ মানুষের মস্তিষ্ক চাপ অনুভব করায় নোরেপিনেফ্রিন ও করটিসল নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। ফলে রক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
>> ভাল বক্তা হতে হলে সুসাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো, শরীরচর্চা ও মেডিটেশন করতে হবে। এর ফলে মানবদেহে অ্যান্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়।
যা ব্যথা দূর করে ও সুখানুভূতি জাগ্রত করে। শরীর ও মন ভালো থাকলে মানুষের আচার-আচরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
জেএমএস/জেআইএম