দেশজুড়ে

গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও পোস্টমাস্টার ও পোস্টম্যান

পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান ও পোস্টমাস্টার। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

Advertisement

পাবনার ডিপিএমজি (ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল) আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে এবং পোস্টমাস্টারের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার দিঘী গোহাইলবাড়ী গ্রামে।

পাবনা প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক আব্দুল মোত্তালেব, পরিদর্শক শাহীন জোবায়ের ও সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে তিন সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রয়ারি) রাতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে আমিনপুর থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শ্রী প্রদীপ কুমার কুন্ডুর স্ত্রী পুর্ণিমা রাণী কুন্ডু।

Advertisement

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রওশন আলী। এর আগে বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চল রাজশাহীর পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলামসহ বিভাগীয় কর্মকর্তরা সাগরকান্দি গিয়ে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

এ সময় পাবনা ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিক তদন্তে প্রায় ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

তিনি জানান, পোস্ট অফিসের সঙ্গে ওই মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। বইতে তাদের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহজ সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা তাদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে ভীড় করতে থাকেন। খবর পেয়ে পাবনা প্রধান ডাকঘরের কর্মকর্তারা গিয়ে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের টাকা পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের কাছ থেকে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন।

Advertisement

এরপর পাবনার ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল স্বাক্ষরিত স্মারক নং- ১৪.৩১.৭৬০০.৩৪৮.২৭.০৩৩.২১ -৩০-০১-২০২২ ইং তারিখে পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সাতবাড়িয়া পোস্ট অফিসে বদলি করা হয়।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, সাগরকান্দি ইউনিয়নের পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল।

প্রতারণার শিকার প্রদীপ কুন্ডু নামে এক গ্রাহক জানান, সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে ২ মাস আগে আমি ৮ লাখ টাকা রাখতে গেলে পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাকে বলেন নির্দিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখলে লাভ বেশি। সরকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেওয়ার জন্য পোস্ট অফিসের পাশাপাশি আরেকটি সংস্থা চালু করছে। তাদের কথামতো আমি তাদের হাতে টাকা দিয়েছিলাম। এ সময় পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট অফিসের লোগোযুক্ত একটি জমা ও উত্তোলনের পাশবই দেন।

এ বিষয়ে সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের নতুন পোস্টমাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, পোস্টম্যান নূর হোসেন বকুল কোথায় আছে তিনি জানেন না। তবে গ্রাহকের বই হাতে নিয়ে বলেন, এসব বই ডাক বিভাগের না। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের বাড়ি চাটমোহর উপজেলা হরিপুর গ্রামে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বকুলের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে অভিযুক্ত পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবে গ্রাহকরা তার কাছে টাকা দিয়েছেন বলে জানান। এ বিষয়ে পাবনা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ভুয়া বই ছাপিয়ে মানুষের কাছ থেকে লাখে এক হাজার টাকা করে লাভ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। এরই মধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুইজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দুইজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, তিনিও বিষয়টি জেনেছেন। অভিযুক্তরেদর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এফএ/এমএস