রপ্তানিমুখী সব খাতে একক ট্যাক্স রেট নির্ধারণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উৎপাদনমুখী শিল্পখাতে করপোরেট করহার আরও কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রিসার্চ উইংকে আরও শক্তিশালী ও করজাল বাড়াতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।
Advertisement
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে এনবিআরের সঙ্গে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দিয়েছে এমসিসিআই।
সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ভিয়েতনাম আমাদের খুব শক্তিশালী প্রতিযোগী। অ্যাপারেল, ফুটওয়্যার সিরমিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশটি চীন থেকেও বেশি শক্তিশালী প্রতিযোগী। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে যে বিশাল সাফল্য আমরা অর্জন করেছি, তা ধরে রাখতে হলে ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে। ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) করেছে। সেটার সুবিধা তারা পাচ্ছে। আমাদের প্রিভিলেজটা যখন হারাব, গ্রাজুয়েট হব, আমাদেরও ৭ থেকে ৮ শতাংশ ডিউটি দিতে হয়। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে সবমিলিয়ে ১৬ শতাংশের মতো খরচ বাড়বে ভিয়েতনামের তুলনায়। এখানে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, এটা করতেও আমরা রাজি।
‘রপ্তানির ওপর ট্যাক্স শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হয়। প্রতিবছর এটা নিয়ে একটা কনফিউশন হয়। এটা একবার বাড়ানো হয়, একবার কমানো হয়। আপনারা আমাদের বলে দেন, পাঁচ বছরের জন্য সব রপ্তানিমুখী খাতের একটা নির্দিষ্ট ট্যাক্স রেট হবে। এটা খুবই দুঃখজনক আমরা গার্মেন্টস সেক্টরের একটা রেট হবে, অন্য সেক্টরের জন্য আলাদা রেট হবে। এটা বৈষম্যমূলক। সব রপ্তানিখাতের জন্য একটা নির্দিষ্ট ট্যাক্স রেট দিয়ে দেন আমরা এক্সপোর্টকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাবো।’
Advertisement
তিনি বলেন, আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে চাই। তবে, শুধু আমাদের ওপর নজরদারি না করে যাদের ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষমতা আছে তাদের কাছ থেকেও আদায় করেন।
চেম্বারের অন্য নেতারা বলেন, ভারতে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের জন্য বেশি কর প্রণোদনা দেওয়া হয়। ভিয়েতনামেও একই সুবিধা দেওয়া আছে। বাংলাদেশে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত এবং ভিয়েতনামের মতো কর কাঠামো নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) গ্রাজুয়েশনের ইম্প্যাক্ট, চ্যালেঞ্জেস সম্পর্কে আমরা অবগত। এখন যে সাপোর্ট আমরা আপনাদের দিচ্ছি গ্রাজুয়েট হলে সেটা দিতে পারবো না। সেক্ষেত্রে আমাদের করজাল বাড়াতে হবে। কারণ নেট যত বাড়বে, রেট তত কমবে।
‘পরপর দুই অর্থবছর করপোরেট কর কমানো হয়েছে। বর্তমানে করপোরেট কর ৩০ শতাংশ আছে। আমি মনে করি, করপোরেট কর আরও কমানোর যৌক্তিকতা আছে, কিন্তু এটার একটা ঝুঁকি আছে। রাজস্ব কমে যেতে পারে। কর আরও কমালে যে অভিঘাত আসবে, তা সইবার মতো ক্ষমতা আছে কি না, ভেবে দেখতে হবে।’
Advertisement
এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করহার এখনও বেশি। শিল্পখাতকে প্রতিযোগিতা করতে হলে এ হার কমাতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দেশের করকাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে এখন থেকে কাজ করতে হবে।’
এসময় ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য এনবিআরের চেয়ারম্যানকে বিশেষ অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, লেবু বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায়। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এমসিসিআইয়ের আরেক সদস্য হাবিবুল্লাহ করিম বলেন, করদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে দূরত্ব আছে। এ দূরত্ব কমাতে হবে। উভয়ের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস কাজ করে। কর্মকর্তাদের আচরণ এমন যেন সব ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। এ মানসিকতা দূর করতে হবে।
এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কর অব্যাহতি চাই না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী চাই, যাতে করে আইন সহজ এবং করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হয়।’
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামসুদ্দিন আহমেদ।
এসএম/এমএএইচ/জিকেএস