রাজনীতি

যে কোনো সময় এমপি পদ খোয়াবেন হাজী সেলিম

এবার পদ হারাচ্ছেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের পর সেলিমও নৈতিক স্খলনজনিত কারণে একই পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছেন। হাইকোর্টের আপিল বিভাগেও সাজা বহাল থাকায় শিগগির তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ও ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার কথা।

Advertisement

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছরের সাজা আপিল বিভাগেও বহাল থাকায় যে কোনো সময় তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। এটি এখন সময়ের ব্যাপার। রায়ের কপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পৌঁছালেই তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হতে পারে। পাপুলের সময় সংসদ সদস্য পদ আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করতে প্রায় একমাস সময় নেওয়া হয়েছিল।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক স্বাক্ষরিত এ রায় প্রকাশ করা হয়। তবে এ মামলায় আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাজী সেলিম বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। তাকে দ্রুত আত্মসমর্পণ করতে হবে।

রায় প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের কপি এখনো হাতে পাইনি। শুনেছি রায়ে দু’জন বিচারপতি স্বাক্ষর করেছেন। বিচারিক আদালতে রায়ের কপি পাওয়ার একমাসের মধ্যে আসামিকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

Advertisement

‘সাজা বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সেটি দুদকের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর স্পিকার হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এর আগে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি এমপি পাপুলের রায় ঘোষণা হয়। এর প্রায় একমাস পর ২২ ফেব্রুয়ারি সংসদ সচিবালয় তার আসন শূন্য ঘোষণা করে। তিনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন। কুয়েতে ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্য নন বলে বিবেচিত হন।

হাজী সেলিমের বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ে আইন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, রায়ের কপি পেতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। তাই যে কোনো সময় তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনো এমপির সাজা হলে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার অযোগ্য হবেন বলে সংবিধানে উল্লেখ আছে।

Advertisement

এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমপি পদ সাংবিধানিক। সেক্ষেত্রে সংবিধানেই ঠিক করে দেওয়া আছে যদি সংসদ সদস্য নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তার পদ থাকবে কি না। রায়ের কপি পেলে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য সেলিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, কোনো সংসদ সদস্য যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার কথা।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার নৈতিক স্খলন হয়েছে, তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’

২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার সাজা বাতিল করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।

ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে ওই আপিল (হাজী সেলিমের) পুনরায় শুনানি করতে বলা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর ওই আপিলের শুনানি হয়নি। সম্প্রতি আপিলটি শুনানির উদ্যোগ নেয় দুদক।

এইচএস/এএ/এএসএম