ধর্ম

‘আল্লাহু আকবার’ অর্থ কী?

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরবি, বাংলা এবং ইংরেজিতে লেখা ‘আল্লাহু আকবার’ পোস্টটি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এটির কারণও অনেকের জানা। কিন্তু অনেকেই জানেন না ‘আল্লাহু আকবার’ অর্থ কী?

Advertisement

মহান আল্লাহর তাসবিহ বা প্রশংসা বাক্যের মধ্য সবচেয়ে মর্যাদাবান তাসবিহ হলো- (اللَّهُ أَكْبَرُ) আল্লাহু আকবার। মর্যাদাসম্পন্ন জিকির ও তাকবিরের মধ্যেও এটি সবচেয়ে বড়। এ তাকবিরের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর একান্ত কাছাকাছি হয়। এটি ইসলামের এক বিপ্লবী স্লোগানও বটে।

বিশ্ববিখ্যাত স্কলার ও দাঈ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসায়মিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আল্লাহু আকবার’-এর চমৎকার অর্থ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো-‘আল্লাহু আকবার’ (اللَّهُ أَكْبَرُ) অর্থ হচ্ছে- হাকিকত এবং আক্ষরিক অর্থে আল্লাহ তাআলা সব কিছুর চেয়ে বড় এবং মহান। তিনি ইলম (জ্ঞান), কুদরাত (ক্ষমতা), সামি (শোনা), বাসির (দেখা) এবং কর্তৃত্বে সব কিছুর চেয়ে বড়। এমনকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সত্ত্বাগত দিক থেকেও সবচেয়ে বড়। কিন্তু তিনি কত বড়? সাত আসমান এবং সাত জমিন পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার হাতের তালুতে কীসের মতো?

মহান আল্লাহর কাছে এসব (এতোই ছোট); যেন আমাদের কারো হাতের তালুতে একটা সরিষার দানার মতো! কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেন-১. وَ مَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖ وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِهٖ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ‘ওরা আল্লাহর যথোচিত কদর করেনি। তেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে গুটানো। পবিত্র ও মহান তিনি, ওরা যাকে অংশী করে, তিনি তার উর্ধ্বে।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৬৭)

Advertisement

২. یَوۡمَ نَطۡوِی السَّمَآءَ کَطَیِّ السِّجِلِّ لِلۡکُتُبِ ؕ کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُهٗ ؕ وَعۡدًا عَلَیۡنَا ؕ اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ‘সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দপ্তর; যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য; আমি এটা পালন করবই।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৪)

লেখকের লেখার পর যেমন কাগজপত্র গুটিয়ে নেওয়া সহজ, তেমনি সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর জন্য আকাশ সুবিস্তৃত হওয়ার সত্ত্বেও তা নিজের হাতের মধ্যে গুটিয়ে নেওয়া কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। তিনি মহান আল্লাহ- ‘আল্লাহু আকবার’।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া মুসকান মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের এ স্লোগানই দিয়েছিলেন। যা বিশ্বব্যাপী প্রায় সব ভাষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়েছে।

তাই শায়খ উসাইমিন বলেন, ‘আল্লাহ মহান। আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে বড়, যেমন- তাঁর আসমা (সুন্দরতম নামসমূহ) ও সিফাত (সুমহান গুণাবলীতে); একইভাবে তিনি নিজেও সবকিছুর চেয়ে বড়। আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্বের প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

Advertisement

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা আরশ সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, আরশ কত বড় সেটা মানুষের পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, আরশের সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) কত বড় সেটা বুঝা মানুষের জন্য কতটা সম্ভব! ত্বইয়্যিব!

সুতরাং তুমি যখন বলো- ‘আল্লাহু আকবার’ (اللَّهُ أَكْبَرُ) তখন তুমি এটা অনুভব করবে যে, আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে বড়। তিনি ইলম, ক্বুদরত, হিকমত, সমস্ত কাজ পরিচালনার দিক থেকে সবচেয়ে মহান, অনুরূপভাবে তিনি নিজে সমস্ত কিছুর চেয়ে বড়।

যারাই মহান আল্লাহর প্রশংসায় অন্তর থেকে আল্লাহর জন্য এ তাকবির দেবেন; আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও পরকালে তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। কেননা ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবির, তাকবিরে তাশরিক ও জিকিরের ফজিলত থেকেই তা প্রমাণিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় উচ্চকণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবিরের ঘোষণা দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহু আকবারের অর্থ ও মহত্ব বুঝার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর প্রশংসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস