বিপিএল অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে তাক লাগিয়েছিলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। সেদিনই বলেছিলেন, একদিন চমক দেখিয়েই হারিয়ে যেতে চান না তিনি। সেটি যে নিছক বলার জন্যই বলা ছিল না, তা আরও একবার মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচে প্রমাণ করলেন এ তরুণ বাঁহাতি পেসার।
Advertisement
মৃত্যুঞ্জয়ের জাদুকরী শেষ ওভারে আসরে টিকে থাকার লড়াইয়ে ঢাকার বিপক্ষে ৩ রানের জয় পেয়েছে চট্টগ্রাম। ম্যাচটি জিততে শেষ ওভারে ঢাকাকে করতে হতো ৯ রান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে একটি নো বলের পরও মাত্র ৫ রান খরচ করেছেন মৃত্যুঞ্জয়। তার এই বোলিংয়ের সুবাদে ম্যাচ জিতে নিয়েছে চট্টগ্রাম।
ঢাকাকে হারানোর পাশাপাশি পয়েন্ট টেবিলেও চার নম্বরে উঠে এসেছে দলটি। এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচ খেলে ৮ পয়েন্ট তাদের। নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় পেলে প্লে-অফ খেলার বেশ ভালো সম্ভাবনাই থাকবে চট্টগ্রামের। অন্যদিকে ৮ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচ নম্বরে নেমে গেছে ঢাকা। শেষ দুই ম্যাচে জিততে হবে তাদের।
পরপর তিন পরাজয়ের পর আজ দ্বিতীয় দফায় অধিনায়ক বদলে খেলতে নেমেছিল চট্টগ্রাম। নাইম ইসলামের জায়গায় আফিফ হোসেন ধ্রুবকে দায়িত্ব দিয়েছে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি। তার অধীনেই জয়ে ফিরলো দলটি। প্রথমবারের মতো বিপিএলে অধিনায়কত্ব করতে নেমে বোলার পরিবর্তনে বেশ মুন্সিয়ানাই দেখিয়েছেন আফিফ।
Advertisement
ম্যাচটি আগে ব্যাট করে ১৪৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল চট্টগ্রাম। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানে থেমেছে ঢাকার ইনিংস। ওপেনিংয়ে নেমে দলের অর্ধেকের বেশি রান করেও শেষ পর্যন্ত ৭৩ রানে অপরাজিত থেকেও দলকে জেতাতে পারেননি ঢাকার তারকা ওপেনার তামিম ইকবাল।
জয়ের জন্য শেষের ৪ ওভারে ৪০ রান করতে হতো ঢাকাকে। তখন ইনিংসের ১৭তম ওভারটি করতে এসে প্রথম বলে চার খাওয়ার পরও সবমিলিয়ে মাত্র ৮ রান খরচ করেন মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু পরের ওভারে বেনি হাওয়েলের বলে এক ছক্কাসহ ১২ রান তুলে নেন তামিম ও শুভাগত হোম। সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ২০ রানে।
শেষ দুই ওভারের জন্য বাকি ছিল শরিফুল ইসলাম ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর ওভার। মৃত্যুঞ্জয়কে শেষ ওভারের জন্য রেখে ১৯তম ওভারে শরিফুলকে আনেন আফিফ। সেই ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান শুভাগত। তবে পরের বলেই বোল্ড করে প্রতিশোধ নিয়ে নেন শরিফুল। ওভারের পরের তিন বলে মাত্র ১ রান দেন এ বাঁহাতি পেসার। কিন্তু শেষ বলটি তামিমের ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড ম্যান দিয়ে হয়ে যায় বাউন্ডারি।
ফলে শেষ ওভারে বাকি থাকে ৯ রান। তখন বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই কাইস আহমেদকে বোল্ড করে দেন মৃত্যুঞ্জয়। পরে আট নম্বরে নেমে পরপর দুই বল ডট খেলেন নাইম শেখ। ফলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৩ বলে ৯ রানে। পরের বলটি ওয়াইড করে বসেন মৃত্যুঞ্জয়। আর চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে তামিমকে স্ট্রাইক দেন নাইম।
Advertisement
শুরু থেকে খেলতে থাকা তামিমের সামনে লক্ষ্য ছিল ২ বলে ৭ রান। ঠিক তখনই নিজের সেরা ডেলিভারিটি করেন তরুণ বাঁহাতি পেসার। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে তামিমকে পরাস্ত করেন মৃত্যুঞ্জয়। তবে অল্পের জন্য সেটি স্ট্যাম্পে আঘাত করেনি। বাই থেকে ১ রান পায় ঢাকা। শেষ বলে ৬ রানের সমীকরণে কোমর উচ্চতার নো বল করে বসেন মৃত্যুঞ্জয়।
কিন্তু সেই বলে কোনো রান নিতে পারেননি নাইম শেখ। ফলে ফ্রি হিটের শেষ বলে বাকি থাকে আরও ৫ রান। সেই বলটি স্ট্রেইট খেলে মাত্র ১ রান নিতে পারেন নাইম। আর এতেই নিশ্চিত হয়ে যায় চট্টগ্রামের ৩ রানের জয়। শেষ পর্যন্ত ৬ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৫৬ বলে ৭৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তামিম।
চট্টগ্রামের পক্ষে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। এছাড়া শরিফুলও নিয়েছেন ২ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ১ উইকেট পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচ করেছেন।
এর আগে ম্যাচটিতে টস হেরেছেন নতুন অধিনায়ক আফিফ, তাদেরকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ঢাকা। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান এই ম্যাচ দিয়েই দলে আসা জাকির হাসান। তার ব্যাট থেকে আসে ১ রান। এরপর ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ৪০ রানের জুটি গড়েন আফিফ ও জ্যাকস।
আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ২৭ রান করেন আফিফ। সমান বল থেকে ২৬ রান আসে জ্যাকসের ব্যাটে। এরপর হতাশ করেন মেহেদি হাসান মিরাজ (২) ও আকবর আলি (৯)। তবে দলকে লড়াকু পুঁজিতে নিয়ে যান বেনি হাওয়েল ও শামীম পাটোয়ারী। এ দুজনের জুটিতে ৬.৪ ওভারে আসে ৫৮ রান।
ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন শামীম। বিপিএল ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম ফিফটিতে ৫ চার ও ১ ছয়ের মারে ৩৭ বলে ৫২ রান করেন তিনি। অন্যদিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংস শেষ করা বেনি হাওয়েল ১৯ বলে করেন ২৪ রান। যা চট্টগ্রামকে এনে দেয় ১৪৮ রানের সংগ্রহ।
ঢাকার পক্ষে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন ছয় বোলারের সবাই। তারা হলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, আরাফাত সানি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এবাদত হোসেন, কাইস আহমেদ ও ফজলহক ফারুকি।
এসএএস/এএসএম