ধর্ম

রজব মাসের প্রাপ্তি ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাস সম্পর্কে বলেছেন, ‘বছরে মাস ১২টি। এরমধ্যে সম্মানিত মাস ৪টি। তিনটি ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর চতুর্থ মাসটি হলো- রজব। যা (আরবি মাস) জমাদিউল আখির ও শাবানের মর্ধবর্তী মাস।’ (বুখারি)

Advertisement

আরবি (হিজরি) বছরের পবিত্র ও মর্যাদার চার মাসের একটি হলো ‘রজব’। এটা শান্তি ও নিরাপত্তার মাস। এ মাসের সব ধরনের কলহ, যুদ্ধ ও রক্তক্ষয়ী যে কোনো কাজই নিষিদ্ধ। রমজানকে স্বাগত জানানোর মাসও এটি। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ মাসটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহা অনুগ্রহের। এ মাসেই মহান আল্লাহ মানুষের জন্য ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজের বিধান দিয়েছেন।

রজবে মুসলিম উম্মাহর প্রাপ্তি

১. রজব সেই মাস, যা শাবান ও রমজান মাসকে প্রকাশ করে। রমজানের প্রস্তুতি শুরু করার তাগিদ দেয়। এ মাসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত এ দোয়া করতেন-

Advertisement

اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান; ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শা’বান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দেন অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দেন, যাতে আমরা রমজানের বরকত থেকে উপকৃত হতে পারি)।’

২. ঐতিহাসিক মেরাজের মাসও এটি। এ মাসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সান্নিধ্যে পবিত্র মেরাজে গমন করেছিলেন।  আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পবিত্র নগরী মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস ভ্রমণ করিয়েছেন এবং একান্ত সাক্ষাতের জন্য তাঁর কাছে ডেকে নিয়েছেন। যা ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তাঁর শ্রেষ্ঠ মুজিজা।

Advertisement

৩. রজব নামাজ প্রাপ্তির মাস। এ মাসে সংঘটিত মেরাজেই মহান আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপহারস্বরূপ ৫ ওয়াক্ত নামাজ দান করেছেন। যার ফলে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন।

৪. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধ এ মাসে সংঘটিত হয়েছিল। ৯ হিজরিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘ঐতিহাসিক তাবুক যুদ্ধ’। ইসলামে ইতিহাসে শক্তিশালী যুদ্ধগুলোর মধ্যে এটি ছিল একটি। রজব মাসে সংঘটিত তাবুক অভিযানে বিনা যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

ইসলাম পরবর্তী যুগে আরও দুইটি কারণে রজব মাস স্মরণীয়। যার একটি সুখের এবং দুঃখের ঘটনা। তাহলো-

৫. মসজিদে আকসা স্বাধীনতার মাসও রজব। ৫৮৩ হিজরির রজব মাসে মুসলিম সেনাপতি সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী খ্রিস্টান ক্রসেডদের কবল থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রথম কেবলা মসজিদে আকসাকে স্বাধীন করেন।

৬. এ রজব মাসেই ইসলামি খেলাফতের অবসান হয়েছিল। ১৩৪২ হিজরির ২৮ রজব কার্যত খেলাফতের যুগের অবসান হয়ে যায়। খেলাফতের শেষ সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ খেলাফত ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন।

সর্বোপরি রজব মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদার মাস। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাস থেকেই রমজানের ইবাদত-বন্দেগির প্রস্তুতির পাশাপাশি রহমত-বরকত-মাগফেরাত ও নাজাতের প্রার্থনা শুরু করতেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ মাসের সব ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বছরজুড়ে শান্তি নিরাপত্তা পেতে বেশি বেশি আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস