বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে সরাসরি কয়লা রপ্তানি করতে চায় বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা উৎপাদক কোল ইন্ডিয়া। ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির আওতায় বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল-ভুটানের কাছে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা বিক্রি করতে চায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা প্রভাব মোকাবিলায় বছর দেড়েক আগে এ পরিকল্পনা শুরু হলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান প্রমোদ আগারওয়াল।
Advertisement
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে কোল ইন্ডিয়ার করপোরেট কৌশল সংক্রান্ত এক বোর্ড মিটিংয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরাসরি কয়লা রপ্তানির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সম্প্রতি ভারতের কয়লা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ভারতে কয়লার বাড়তি চাহিদার কারণে এখনই রপ্তানি শুরু করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংকট না হলে আমরা চলতি অর্থবছরেই (শেষ হচ্ছে ২০২২ সালের মার্চে) রপ্তানি শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
প্রস্তাবে কোল ইন্ডিয়ার বর্ষিক কয়লা উৎপাদনের তিন শতাংশ রপ্তানির জন্য আলাদা রাখার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের মূল লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে উৎসাহিত করা।
Advertisement
বলা হচ্ছে, কয়লা রপ্তানি বাড়ানোর এ উদ্যোগ কোল ইন্ডিয়ার আয় বাড়ানোর পাশাপাশি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীদের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে। তবে ভারতের ভেতরেই কয়লার চাহিদার তুলনায় সাম্প্রতিক ঘাটতি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পিছিয়ে দিয়েছে। ২০২২ সালের শেষের দিক ছাড়া এটি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন প্রমোদ আগারওয়াল।
ভারত তিন-চতুর্থাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরাসরি কয়লার ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলোতে কয়লা সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেওয়ায় শুরু হয় ঐতিহাসিক বিদ্যুৎ বিপর্যয়। এসময় দেশটির উত্তরের কিছু রাজ্যে দৈনিক ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেখা গেছে। সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনো আগের অবস্থায় ফেরেনি। কোল ইন্ডিয়া চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আগামী অক্টোবর মাসের আগে এই সংকট যাবে বলে মনে করেন না তিনি।
তাছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার মূল্যবৃদ্ধিও সংকটের অন্যতম কারণ। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া হঠাৎ করে কয়লা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এবং ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে আশঙ্কায় ইউরোপ কয়লা কেনা বাড়িয়ে দেওয়ায় এর চাহিদার মতো দামও আকাশ ছুঁয়েছে।
ভারত একইসঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা উৎপাদক, ভোক্তা ও আমদানিকারক। দেশটির ৮০ শতাংশ কয়লা উৎপাদন করে কোল ইন্ডিয়া। বাড়তি চাহিদা মেটাতে ২০২৪ সালের মধ্যে কয়লার উৎপাদন ১০০ কোটি টনে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
Advertisement
কোল ইন্ডিয়া এর আগে জরুরি প্রয়োজনে ছোটখাটো পরিমাণে প্রতিবেশী দেশগুলোতে কয়লা রপ্তানি করেছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে কখনোই তা করা হয়নি।
২০২০ সালের সেই বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব তোলা হয়েছিল, বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে কয়লা বিক্রি করবে কোল ইন্ডিয়া। ভারতীয় কয়লা সচিবের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি ভারতের অ-বিদ্যুৎ খাতে যে দামে কয়লা বিক্রি করে, প্রতিবেশী দেশগুলোকেও সেই দামে কয়লা দিতে চায়। ২০২৪-২৫ সাল নাগাদ কোল ইন্ডিয়ার কয়লা রপ্তানি দেড় থেকে দুই কোটি টনে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
এ বিষয়ে ভারতের কয়লা মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও নথিপত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, কয়লা রপ্তানির বিষয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোল ইন্ডিয়ার আলোচনা হয়েছে। এ তিন দেশে মোট বার্ষিক কয়লার চাহিদা ১ কোটি ৭০ লাখ টন পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেএএ/জেআইএম