ফিচার

যেভাবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ব্যালে নাচ

নৃত্য হচ্ছে মানুষের মনোজাগতিক প্রকাশভঙ্গি। কখনো এই ভাষা প্রকাশ করেছে প্রতিবাদ, কখনো প্রেম নিবদনের অন্যতম মাধ্যম হয়েছে নাচের মুদ্রা। সারাবিশ্বে ধ্রুপদী থেকে ভারতনাট্যম কিংবা লোকজ নৃত্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। হয়েছে একটি দেশ বা জাতির পরিচয় বাহক।

Advertisement

তবে এর মধ্যে ব্যালে বা ব্যালেট নাচ সারাবিশ্বেই জনপ্রিয়। সম্প্রতি আমাদের দেশে এই নাচ আলোচনায় আসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল কিছু স্থির চিত্রের মাধ্যমে। বাঙালি কন্যার ব্যালে নাচছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে!

ভাইরাল সেই স্থির চিত্রের নৃত্যশিল্পীর নাম ইরা। ছবি তুলেছেন ফটোগ্রাফার জয়িতা আফরিন তৃষা। অনেকেই দেশ বিদেশের নানান অনুষ্ঠান আয়োজনে এই নাচ দেখেছেন।

কেউবা এই প্রথম পরিচিত হয়েছেন ব্যালের সঙ্গে। তবে জানেন কি, আজ ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ব্যালে নাচ দিবস। সারা বিশ্বে এই দিবস নানা আয়োজনে পালন হলেও বাংলাদেশে তেমন কোনো জাঁকজমকতা নেই।

Advertisement

চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এলো ব্যালে নাচ?

ব্যালে নাচ, মূকাভিনয়, অভিনয় এবং সংগীতের (কন্ঠ ও যন্ত্র) সমন্বয়ে সৃষ্ট এক শিল্প। এটি একক ভাবে বা অপেরার অংশ হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়। অভাবনীয় শারীরিক কৌশলের সাথে সংগীতের এক অপূর্ব মিলন দেখা যায় ব্যালেতে। বিশেষ করে পায়ের কাজের তো তুলনাই হয়না।

এশিয়ার দেশগুলোতে এর ব্যাপক চর্চা হলেও এই নাচের সূচনা কিন্তু ইউরোপে। ১৫ শতাব্দীতে ইতালীয় নবজাগরণের সময় আবির্ভাব হয়। পরে ফ্রান্স ও রাশিয়ার একটি কনসার্টে এটি নৃত্য হিসেবে পরিচিতি পায়। ফরাসি পরিভাষা উপর ভিত্তি করে এটি একটি ব্যাপক নৃত্যের প্রযুক্তিগত ফর্ম হয়ে ওঠে।

ধীরে ধীরে নাচের এই ফর্ম বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। ব্যালে বিশ্বের বিভিন্ন স্কুলে শেখানো শুরু হয়, যা ঐতিহাসিকভাবে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে ওঠে। শিল্পটি বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র উপায়ে বিবর্তিত হয়। ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় ব্যালেগুলো সাধারণত ক্লাসিক্যাল সংগীতের সাথে সম্পৃক্ত হয়।

Advertisement

আমেরিকান নৃত্যশিল্পী জর্জ বালাঞ্জাইনের নব্য-রচনামূলক কাজগুলো প্রায়ই আধুনিক ব্যালেটগুলো ব্যবহার করে। বিংশ শতাব্দীতে কোরিওগ্রাফার জর্জ ব্যালেন্সিয়ানের কল্যাণে ব্যালেট ড্যান্সের বিশ্বব্যাপী এর প্রসার ঘটে।

ব্যালে নাচের পজিশনের মূল আকর্ষণই হচ্ছে টো বা পায়ের পাতার উপর মুভমেন্ট। ক্লাসিক্যাল মুভমেন্টের সঙ্গে যোগ হয় পায়ের পাতার কারুকাজ। বিংশ শতাব্দীতেই ক্লাসিক্যাল ব্যালেটে আনা নয় আধুনিকতার ছোঁয়া। যা মডার্ন ব্যালে নামে আমেরিকা ও জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যালেট নাচ মূলত তিন প্রকার যথা- ক্লাসিক ব্যালেট, মডার্ন ব্যালেট, কমেডি ব্যালেট। ক্লাসিক ব্যালেট দাঁড়িয়ে আছে ট্র্যাডিশনাল ব্যালের টেকনিকের উপর। ভিন্ন ভিন্ন ধরনটা নির্ভর করে এরিয়া অব অরিজিনের উপর।

যেমন- ফ্রেঞ্চ ব্যালেট, রাশিয়ান ব্যালেট, ইতালিয়ান ব্যালেট। কিছু ব্যালের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার ক্রিয়েটরের নামে। ক্লাসিক্যাল ব্যালেট মুভমেন্টের সঙ্গে যোগ হয়েছে ফাস্ট মুভমেন্ট টেম্পো।

ব্যালেট নাচ হচ্ছে ক্লাসিক্যাল ও মডার্ন নাচের সমন্বয়। এই নাচ মাঝে মাঝে নগ্ন পায়ে নাচা হয়। ব্যালে নাচে নভেল, মিথ বা ফেইরি টেলসের গল্পগুলোও ফুটিয়ে তোলা হয়।

মডার্ন টেকনিক অব ব্যালেট ড্যান্স যা আমেরিকাতেই বেশি শেখানো হয়। এই নাচ শেখা শুরু করতে হয় ছোটবেলাতেই। ৮-১০ বছর বয়সই ব্যালে শিক্ষা শুরুর প্রকৃত বয়স।

এই নাচ শুধু যে মেয়েদের নাচ, তা নয়। ছেলেরাও ব্যালেট শিখতে পারে। তবে তাদের জন্য রয়েছে কিছুটা ভিন্ন মাত্রার খাটো পোশাক। ব্যালে নাচের প্রশিক্ষণ শারীরিক নমনীয়তা বৃদ্ধি করে ও শরীর সুগঠিত করে তোলে। ধৈর্য আর কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমেই একজন হয়ে উঠতে পারে পারফেক্ট ব্যালেরিনা।

এই নাচের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে পোশাক। যে কোনো পোশাকে এই নাচ সম্ভব নয়। এই নাচের জন্য আছে নরম কাপড়ের জুতা। সাধারণত আঁটসাঁট উঁচু খোঁপা বেঁধে দেওয়া হয় নৃত্যশিল্পীদেরকে নাচের মুভমেন্টের সুবিধার জন্য। খুব ছোট ফ্রিলে ফুলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ফুল কন্যার মতোই লাগে ব্যালে নাচের নৃত্যশিল্পীদেরকে।

ব্যালে ড্যান্স কোরিওগ্রাফি আর পারফর্ম করা হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পীদের মধ্য দিয়ে। আগের দিনে ব্যালেট পরিবেশনের সময় দর্শকরা গ্যালারিতে বসতো, ড্যান্সফ্লোর বা স্টেজের তিনদিকে। আধুনিক ব্যালেট পরিবেশিত হয় মূকাভিনয়, গান ও মিউজিক দিয়ে।

ব্যালেট নাচ দিবসের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বে এই নাচের প্রচার ও প্রসার ঘটানো। কমপক্ষে ৫০টি দেশের ব্যালেট নৃত্যশিল্পীরা একত্র হন। নানা আয়োজনে পালন করে দিনটি।

সূত্র: ডেস অব দ্য ইয়ার

কেএসকে/জিকেএস